
মা একা সন্তানদের মানুষ করেছেন আর সন্তানরা মা`কে একা করে দিয়েছেন!
- ফারজানা আক্তার
- জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
৮০ বছরের এক বৃদ্ধার নাম মৃদুলা সাহা। তিনি একজন মা'ও। ৮০ বছর তো একদিনে হয় নি, ৮০ বছর হতে তাকে ৮০টা বছর পার করতে হয়েছে। এই ৮০ বছরের মধ্যে ৫সন্তানের জননী হয়েছেন। স্বামীকে হারিয়েছেন। ছেলে মেয়েকে মানুষ করেছেন, বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মেয়েদের এখন নিজেদের সংসার হয়েছে। আচ্ছা! ভালো কথা তার এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার। বর্তমান সময়ের সবথেকে লোভনীয় চাকরি করেন তার এক ছেলে।
ফেনীর মধুপুরে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে গত চার বছর পরিত্যক্ত একটি কক্ষে একা বসবাস করছেন মৃদুলা সাহা। শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে, কিন্তু মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা কি আদৌ আবিষ্কৃত হয়েছে! বৃদ্ধ এই মা শুধু শারীরিকভাবে অসুস্থ নন, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। আদরের সন্তানদের থেকে বছরের বছর দূরে থাকা, একাকী জীবনযাপন তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বানিয়ে দিয়েছে।
মৃদুলা সাহার গল্পটা একটু দেখি চলেন। তার তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে। এক ছেলে সুশান্ত সাহা বিসিএস ক্যাডার, অপর দুই ছেলে বাপ্পি সাহা, বিপুল সাহা বাবার রেখে যাওয়া চালের আড়ত নিয়ে ব্যস্ত। দুই মেয়ে শর্বরী সাহা, সুমি সাহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন ঢাকায় স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছে। তারা এতোটাই ব্যস্ত একমাত্র মায়ের একটুখানি খোঁজ খবর কেউ নিতে পারছেন না। কারো সংসারে মায়ের জন্য একটুখানি জায়গাও হচ্ছে না।
এক মা একা হাতে ৫সন্তানকে মানুষ করেছেন। আর, এখন পাঁচ সন্তান মিলে এক মা'কে সম্পূর্ণ একা করে দিয়েছেন। গত পরশু তার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে বৃদ্ধাকে জীবিত পায়। সেখান থেকে তারা তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সিভিল সার্জন শাহরিয়ার কবির বলেন, "উনি বেশ অসুস্থ। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের যতটুকু দেয়ার সব দিচ্ছি। বৃদ্ধা মা ভবিষ্যতে স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারে। তাকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে।"
দিনশেষে প্রতিটা মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য চায়। আপন মানুষদের সান্নিধ্য আমাদের মানসিক চাপ অনেকটা কমিয়ে দেয়। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। যে সফলতা আমাদের আপন মানুষদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, সেই সফলতাকে আসলে কি সফলতা বলা যায়? সেটা কি আসলেই সফলতা? একজন নিরক্ষর মানুষের চেয়ে অক্ষরজ্ঞান থাকা মানুষের দায়িত্ব কয়েকশগুন বেশি। তার উপর পারিবারিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি। অক্ষরজ্ঞান থাকা মানুষগুলো যখন তাদের পারিবারিক দায়িত্ব এড়িয়ে যায়, তাদের কাছ থেকে সমাজ কখনো ভালো কিছু পাবে না। ক-খ-নো না!
ভিডিও :