মেয়েদের চাকরি করার সিদ্ধান্ত শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিবে?
- ফারজানা আক্তার
- জুন ২৪, ২০২০
শরীরে কতটা আঘাত করার পর মেয়েটির মৃত্যু হয়েছিলো? একটা মানুষকে আরেকটা মানুষ ঠিক কতটা আঘাত করতে পারে?
যে মানুষ তার তো মনুষ্যত্ববোধ থাকার কথা! যার মনুষ্যত্ববোধ আছে তার তো কাউকে মেরে ফেলার কথা না। তাহলে মেয়েটিকে যারা মেরে ফেললো তাদের কি আদৌ মানুষ বলা যাবে ?
মেয়েটি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে তার মানে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে তার মানে মেয়েটি মেধাবী ছিলো। কতটা মেধাবী হলে নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও মেয়েটা অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস পায় সেটা নিশ্চয় আর কাউকে বলে দিতে হবে না!
মেয়েটি মেধাবী ছিলো। সে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ভাগ্য সহায় থাকলে হয়তো হয়েও যেত!
পড়াশোনা করে সবারই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছে থাকে। মেয়েটিরও ছিলো। ছিলো বলছি কারণ মেয়েটি এখন আর দুনিয়াতে নেই। তার মনের সকল স্বপ্ন নিয়ে মেয়েটি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। ও! মেয়েটি নিজের ইচ্ছেই চলে যায় নি। মেয়েটিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মেয়েদের কি জীবন!!!!!! বাবা মা কষ্ট করে ছোট থেকে বড় করে। মেয়েরা মনের মধ্যে স্বপ্ন নিয়ে সত্যি করার লক্ষ্যে পড়াশোনা করে। আর, সেই স্বপ্ন সত্যি করার লক্ষ্যে মেয়েরা বাকি পথ হাঁটবে কি হাঁটবে না তার সিদ্ধান্ত নিবে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন / তার স্বামী।
কি আশ্চর্য ব্যাপার, তাই না?
আমি বলছি না মেয়েরা সংসার ধর্ম ফেলে দিয়ে শুধু ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটবে। একটা তিতা সত্য কথা বলি। সংসারের প্রতি টান মেয়েদেরই বেশি। সংসারের দায়িত্ব মেয়েরাই বেশি পালন করে। সে চাকরিজীবী মেয়ে হোক, আর গৃহিনী হোক সংসারের প্রতি মায়াটা মেয়েদেরই বেশি।
কোন মেয়েই চায় না তার সংসার অবহেলায় অযত্নে থাকুক। আবার, কোন মেয়েই চায় না তার স্বপ্নটা শুধু স্বপ্নই থাকুক। একমাত্র মেয়েরাই পারে একহাতে সংসার, অন্য হাতে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেত।
চাকরিজীবী মেয়েরা সংসার করছে না ? তারা মা হচ্ছে না ? তাদের সন্তানেরা মানুষ হচ্ছে না ?
তাহলে মেয়েদের চাকরি বা পড়াশোনায় এখনো এতো বাঁধা কেন? ভয়টা আসলে কোথায় ?
বরাবরই ছেলেদের এই সমাজ একটু ভিন্ন চোখে দেখে। মানে ছেলেদের মূল্য সমাজে অনেক বেশি। অনেক পরিবারে মেয়ে সন্তানের কোন মূল্যই নেই, সেখানে ছেলে সন্তানদের মাথায় করে রাখা হয়। সমাজ ছেলেদের ভাবতে শেখায় মেয়েরা তোমাদের নিজেদের সম্পত্তি। ছেলেরা যা বলে, যেভাবে বলবে মেয়েরা সেভাবে চলতে বাধ্য।
পড়াশোনা করে মেয়েরা নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখে। স্বাবলম্বী হয়ে মেয়েরা নিজের চাওয়া পাওয়া সম্পর্কে সচেতন হয়।
এখানে তো অন্যায়ের কিছু নেই। কিন্তু ছেলেরা একে মহা অন্যায়ের চোখে দেখে। মেয়েদের এই অগ্রগতিকে তারা ভয় পায়। মেয়েরা তাদের থেকে একটু এগিয়ে যাচ্ছে বা গেছে তারা একে মহা পাপের চোখে দেখে।
পড়াশোনা বা চাকরি বাকরিতে শারীরিক শক্তির লড়াই হচ্ছে না। সেখানে মেধা আর পরিশ্রমের পরীক্ষা হচ্ছে। আপনি ছেলে হন বা মেয়ে মেধা থাকলে পরিশ্রমী হলে টিকে থাকবেন। না হলে ঝরে পড়বেন। মেধার পরীক্ষায় একজন ছেলের কাছে হেরে গেলে আপনি লজ্জা পান না, কিন্তু একজন মেয়ের কাছে হেরে গেলে আপনার মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যায়।
আপনারদের যাদের এই সমস্যা হয় তারা মেধার পরীক্ষা পরে দিয়েন। আগে নিজের মন মানসিকতা উন্নতি করেন।
শারীরিক গঠনে ছেলে মেয়ের পার্থ্যক আছে, কিন্তু মেধার কাছে ছেলে মেয়ে সবাই সমান। আপনি ছেলে তাই আপনার স্বপ্নের দাম আছে, আমি মেয়ে তাই আমার স্বপ্নের কোন দাম নেই এই ভাবনাটাই মূর্খতা। এই ভাবনা থেকে এই সমাজ, ছেলেরা যত দ্রুত বের হতে পারবে ততই আমাদের সকলের জন্য মঙ্গল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া পড়াশোনা শেষ চাকরির চেষ্টা করছিলেন। শুধু এই কারণে তার স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হত্যা করে।
স্বামীরা যখন একের পর এক সফলতা লাভ করে বউয়েরা একে গর্বের চোখে দেখে। বউয়েরা যখন একের পর এক সফলতা লাভ করে স্বামীরা তখন ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগে।
এখানে বলুন মন মানসিকতায় কাদের সমস্যা?
নোট : সব ছেলেদের জন্য এই লেখাটা না। যে সব ছেলেদের মেয়েদের পড়াশোনা, চাকরি বাকরি নিয়ে এলার্জি আছে তাদের এই লেখা। যে ছেলেরা মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথের সহযাত্রী হচ্ছে বা হচ্ছেন তাদের জন্য রইলো আমার স্যালুট।