অত্যাচারী যতই বিশাল হোক তার পতন নিশ্চিত!
- ফারজানা আক্তার
- জুন ২৪, ২০২০
একটি ছোট্ট পাখি সমুদ্রের তীরে বাসা বাঁধলো। ভালোই দিন কাটছিলো তার। সারাদিন উড়াউড়ি করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাখিটির খুব ভালো লাগতো। দিন যায় মাস যায়! পাখিটির ডিম পাড়ার সময় আসে। ডিমও পাড়ে। একদিন বাসায় ফিরে দেখে ডিম নেই। পাখিটা পাগলের মতো এখানে সেখানে ডিম খুঁজে, কিন্তু পায় না। পরে সমুদ্রের কাছে গিয়ে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে ডিমের কথা।
সমুদ্র মুচকি হাসে কিন্তু কিছু বলে না। পাখিটার সমুদ্রকেই সন্দেহ হয়। বারবার সমুদ্রকে বলে তার ডিম ফেরত দিতে, কিন্তু সমুদ্র ডিম নেওয়ার কথা অস্বীকার করে। পাখিটি অনেক আকুতি মিনতি করে তার ডিম ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু দুষ্ট সমুদ্র কোন কথাই শুনলো না। পরে পাখিটি খুব রেগে যায়। রেগে গিয়ে সমুদ্রকে বলে, ' আমার ডিম আমি ফেরত নিবোই নিবো।'
সমুদ্র ভিলেনের হাসি দিয়ে বলে দেখা যাক! পাখিটি তখন অনেকটা দূরে তার ঠোঁট দিয়ে একটা গর্ত খুঁড়ে। তারপর তার ছোট্ট ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি নিয়ে সেই গর্তে রাখে। পাখির এমন বাচ্চার মতো কর্মকাণ্ড দেখে সমুদ্রের হাসতে হাসতে মরে যাওয়ার অবস্থা! সমুদ্র বলে, ' ওহে ভাই পাখি! এ তুমি কেমন বিনোদন দিচ্ছো? এভাবে আমার পানি অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করতে তোমার মতো কয় কোটি পাখির কয় কোটি বছর লাগবে তার হিসাব আছে?'
পাখি উত্তর দিলো, ' অত্যাচারী যতই বিশাল হোক তার পতন নিশ্চিত, আর পরিশ্রমী এবং তার প্রচেষ্টা যতই ক্ষুদ্র হোক তার জয়ও নিশ্চিত। আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো। '
পাখিটা দিন রাত এক করে তার কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো। যখনই হাঁপিয়ে যায় তখন একটু রেস্ট করে নেয়। আশপাশ থেকে যতটুকু যা পায় তাই খেয়ে নেয়। খাওয়া আর ঘুমের পিছনে একটুও বাড়তি সময় নষ্ট করে না।
তার এই অবস্থা দেখে আশেপাশের সব পাখিরা তাকে বুঝাতে লাগল। এভাবে সে কখনোই সফল হবে না। এই কাজে সফল হওয়া সম্ভবও না। বিশেষ করে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে ফেলা অসম্ভব। কয়েকজন পাখি এই নিয়ে অনেক তিরস্কার আর হাসাহাসিও করতে শুরু করলো।
পাখিটা কারো কথা কানে তুললো না। নিজের কাজ একমনে করতে লাগলো।
পাখিটার জেদ দেখে তার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী পাখি তার সাথে কাজে নামলো। কিছু পাখি তাদের দেবতা থোথের
( মিশরীয় ধর্মতত্ব অনুসারে পাখির দেবতা হলো থোথ (thoth) আর হিন্দু পৌরানিক তত্ত্ব অনুসারে গারুডা(Garuda).) কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো।
পাখিদের দেবতা কয়েকদিন সময় নিলেন। দেখলেন পাখিটা তার লক্ষ্যে অটল। যে কাজ অসম্ভব সেই কাজও কোন এক অদৃশ্যে মনোবলে করে যাচ্ছে। দেবতা পাখিটার উপর সন্তুষ্ট হলেন।
দেবতা সমুদ্রকে আদেশ দিলেন সরে যেতে। সরে গিয়ে পাখিটার ডিম ফেরত দিতে৷ সমুদ্র দেবতার আদেশে সরে গেলো। পাখিটা বীরের বেশে তার ডিম ফেরত নিলো।
গল্পটা রূপক কিন্তু এর শিক্ষাটা দারুণ কার্যকরী। গল্পটি থেকে আমরা কয়েকটি মেসেজ নিতে পারি।
১। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক কোন না কোনভাবে তার পতন হবেই।
২। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই এক সময় সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
৩। আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই তাহলে নিরাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে।
৪। আপনি যখন কোন কাজ শুরু করবেন তখন আপনার থেকে উপরে যারা আছেন তাদের অনেক এবং আপনার সম পর্যায়ে যারা আছেন তাদের অনেকেও আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। তিরস্কার করবে। আপনি যদি এই তিরস্কার আর হাসাহাসি ইগনোর করে লেগে থাকতে পারেন সফল আপনি হবেনই।
৫। আমরা যারা উপরওয়ালাকে বিশ্বাস করি তার উপর থেকে কখনো ভরসা হারাবেন না। কখনো কখনো তিনি বান্দার ধৈর্য পরীক্ষা করেন। তবে, বান্দার বৈধ চাওয়া পাওয়াকে বিশেষ করে বান্দার ভালো তিনি খুব ভালো জানেন বুঝেন খালি হাতে ফেরান না। অবশ্যই তিনি পরিশ্রমী আর ধৈর্যশীলদের খুব ভালোবাসেন।