সামান্য কারণে আপনি বা আপনার প্রিয় মানুষ রিলেশনে ব্রেকাপ টানছে?
- কামরুন নাহার স্মৃতি
- জুলাই ১, ২০২০
আজকাল রিলেশন ভাঙ্গা যতটা সহজ, নতুন করে রিলেশনে জড়িয়ে পড়া যেন তার চেয়েও বেশি সহজ হয়ে গেছে। হিউজ পরিমাণ অপশন আর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতো এতো প্রেম নিবেদন হয় যে, অনেকে অল্পতেই পাশের জনের হাত জনের হাত ধরে নেয়। পাশের মানুষটার চেয়ে না দেখা মানুষটা অনেকবেশি কেয়ারিং, অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় শুভঙ্করের ফাঁকি!
সামান্য কিছু ভুল বুঝাবুঝি হলেই প্রিয় মানুষটা আপনার কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে, প্রিয় মানুষটার হাত এক ঝটকায় ছেড়ে দেন অথচ কথা দিয়েছিলেন সারাজীবন আগলে রাখবেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতো এতো ক্রাশ, শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রেম নিবেদন পেয়ে আপনি ভুলেই যান ভালোবাসা শব্দটার গভীরতা! ভালোবাসা মানে ভুল বুঝাবুঝি হলেই ছেড়ে যাওয়া নয় বরং হাজারো ভুল বুঝাবুঝির পরও কী করে আগলে রাখতে হয় তা শেখানো!
নিশ্চয় ভাবছেন, এসব বাতেল কেন! এর পিছনেও একটা গল্প আছে। যদিও গল্পটা আমার বাবার মুখে শোনা, তবুও আজকালকার রিলেশন আর ব্রেকাপ দেখলেই গল্পটা মনে পড়ে যায়। যদিও গল্পটা কাল্পনিক, আমার যতদূর মনে হয়।
ধরুন, গল্পের নায়ক রহিম। রহিম বাড়ির কর্তা হিসেবে সবসময়ই চায় সবাই তার কথা মতো চলবে এবং তার যা অপছন্দ কিংবা বিরক্তিকর তা কখনো ভুলেও কেউ করবে না। রহিমের বউয়ের ভাতের চাল খাওয়ার অভ্যাস ছোট বেলা থেকেই, তিনি সময় পেলেই দু'চারটা চাল মুখে নিয়ে চিবাতে থাকে। কিন্তু রহিমের এই বিষয়টা মোটেও পছন্দ না। তিনি মনে মনে স্থির করলেন, এই বউকে কিছুতেই তিনি রাখবেন না। এমন লক্ষীছাড়া বউ সংসারের কোন উন্নতি হতে দেবে না। যেই ভাবা সেই কাজ, রহিম তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল।
তারপর রহিম আবার বিয়ে করল। কিছুদিন যাওয়ার পর রহিম দেখলো, তার ২য় স্ত্রী রান্নার পাতিল থেকে চাল চিবিয়ে খায়। এবারও সে ২য় স্ত্রীকে তালাক দিলো।
এবার রহিম আরো সতর্ক কিন্তু তার ৩য় স্ত্রী মুঠো মুঠো চাল না খেলে কোন কাজে মন দিতে পারে না। রহিমের এবার মাথায় হাত, কি করা যায়, কি করা যায় ভেবে ভেবে ৩য় স্ত্রীকে ছেড়ে নতুন করে আবার বিয়ে করলেন।
রহিমের ৪র্থ স্ত্রী আরও কয়েকগুণ উপর দিয়ে চলে। সে ভাতের চাল কিংবা মুঠো চালের আশায় না থেকে। ঢেকিতে দেয়া আধা হওয়া চাল থেকেই খাওয়া শুরু করে।
রহিম এবার তার ভুল বুঝতে পারে। সামান্য ভুলে সে প্রথম স্ত্রীকে না তালাক দিয়ে যদি বুঝাতো তাহলে হয়তো সেখানেই সমাধান হতো বিষয়টা কিন্তু তার চেয়ে অন্য কাউকে সমাধান ভাবতে গিয়ে, তার চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর মানুষগুলোর সাথে দেখা হয়েছে তার।
আজকালকার রিলেশনশিপের ক্ষেত্রেও গল্পটা প্রযোজ্য। একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, দোষ-ত্রুটি, ভুল-ঠিক নিয়েই মানুষ। মানুষ যেমন ভুলের ঊর্ধে নয়, ঠিক তেমনি ভালোবাসা পারে একট মানুষকে দিয়ে অসম্ভব কাজও করিয়ে নিতে।
মানুষ যখন দূরে থাকে তখন তার খারাপ বিষয়গুলো ততটা দৃষ্টিগোচর হয়না, যতটা কাছে আসলে হয়। তাই যদি দূরের কাঁচের আশায় যদি আপনি কাছের হিরাটাকে ছেড়ে যান, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি ভুল পথে পা বাড়াবেন।
যে কোন সম্পর্ক ভাঙ্গার আগে হাজার বার ভাবুন। একটা সম্পর্ক মানে শুধুই দুজন মানুষ নয়, হাজারো অনুভূতি, না বলা হাজারো কথা, আবেগ, মায়া আর সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা তা হলো বিশ্বাস। রিলেশনশিপে একটু সমস্যা হলেই তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববেন না, অন্য যে মানুষটা আপনার জীবনে আসবে তার সাথে ভুল বোঝাবুঝিটা আরও গভীর হতে পারে। পাশের মানুষটাকে বোঝার চেষ্টা করুন, সম্পর্কের মূল্য দিতে শিখুন। ইচ্ছে হলেই সম্পর্ক ভেঙ্গে দিলেন আবার ইচ্ছে হলেই নতুন করে গড়লেন। এসব আপনাকে সত্যিকারের সম্পর্কের সুখ কখনোই দেবে না। সম্পর্কের যত্ন নিন, দেখবেন আপনাদের সম্পর্ক ছাড়িয়ে যাবে সবকিছু!