ছেলেটা জানতে চাইলো এই অবস্থায় সে সুইসাইড করলে পাপ হবে কিনা!
- ফারজানা আক্তার
- জুলাই ১২, ২০২০
ছেলেটা পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করেছে। বিয়ের ৩ বছর হতে চললো। ছেলেটার ইচ্ছে ছিলো আরো কয়েক বছর পর বিয়ে করার। পায়ের নিচের মাটিটা আরেকটু শক্ত হোক! কিন্তু মা খুব করে চাচ্ছিলেন ছেলে যেন বিয়েটা করে নেয়। মা প্রায় অসুস্থ থাকে। বাসায় সারাদিন একা থাকেন। একজন কেউ পাশে থাকলে মা মনে সাহস পাবে, ছেলেটার মনেও স্বস্তি আসবে।
মা বোনদের পছন্দে ছেলেটা বিয়ে করে নেয়। মনে করি ছেলেটার নাম শফিক। শফিকের বাবা নেই। ৩বোন আর শফিক একা। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বউ আর মাকে নিয়ে শফিকের সুখের সংসার। কিন্তু বিয়ের পর শফিক বুঝলো বউ তার সোস্যাল মিডিয়া এডিক্টেড। সারাক্ষণ ফেসবুকে পড়ে থাকে। ঘরের খুটিনাটির ছবি পোস্ট করে। সারাক্ষণ সাজুগুজু করে সেলফি তুলে আর আপলোড দেয়। দুইদিন পর পর এটা লাগবে, ওইটা লাগবে। বাহিরে খেতে নিয়ে যেতে হবে। বেড়াতে নিতে হবে। যতটা না প্রয়োজনে তার থেকে বেশি ফেসবুকে দেখানোর জন্য।
একটা সময় শফিক হাঁপিয়ে উঠলো, কিন্তু মুখে কিছু বললো না। কিছু বললেই ঝগড়া ঝাটি শুরু। বউয়ের এসব পাগলামি শফিকের মায়েরও পছন্দ হচ্ছিলো না। মা'ও ধীরে ধীরে অশান্তি শুরু করে সংসারে। মায়ের সূত্র ধরে বোনেরাও যোগ দেয়। চারপাশের প্রেশারে শফিক ঠিকমতো অফিস করতে পারে না। কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। মানসিক চাপ সারক্ষন তাড়া করে বেড়ায়। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়! সাথে যুক্ত হলো করোনার অত্যাচার...
সবার আগে শফিকের চাকরিটা চলে গেলো। পরিবারের কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। বউ বলে তাকে এটা সেটা দেওয়ার ভয়ে শফিক বলছে চাকরি নেই। মা, বোনেরা বলে বউয়ের সাধ আহলাদ মেটানোর জন্য তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। এখন তার দম বন্ধ করে মরে যাওয়ার অবস্থা। বউ বলেছে রোজার ইদে তার খুব কম শপিং হয়েছে। কোন গ্রুপের কোন আপুদের নাকি তার স্বামীরা খুব দামী দামী উপহার দিয়েছে, বউয়ের কাজিনের জামাইরা অনেক দামী দামী কিসব কিনে দিয়েছে! এই ইদে তাকেও দিতে হবে এবং সবার আগে। সে সবার আগে পোস্ট করতে চায়।
আমাকে শফিক জিজ্ঞেস করলো, ' আপু, আমি যদি এখন সুইসাইড করি তাহলে খুব পাপ হবে? এই অবস্থায় মরে যাওয়ার অর্থ বেঁচে যাওয়া উচিত,তাই না?' আমি বলেছি আপাতত কয়েকদিনের জন্য কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় থাকতে। চুপচাপ না থেকে সবাইকে ডেকে তার সকল সমস্যার কথা খুলে বলতে।বউকে বুঝানোর জন্য বলেছি। না বুঝলে বউয়ের বাবা মাকে ডেকে সব খুলে বলতে। তাতেও কাজ না হলে মানসিক ডাক্তার দেখাতে।