বিচার মানি, কিন্তু দোষ মেয়েদের!
- তামান্না ইসলাম
- অক্টোবর ১০, ২০২০
কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পরে। এরপর থেকে সারা দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের খবরগুলো কেন্দ্র করে প্রতিবাদের ঝড় উঠে ফেইসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাঠ পর্যায়ে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যেমন হচ্ছে তেমনি নারীর উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতাও সামনে আসছে নির্লজ্জভাবে! এমন না যে এই প্রবনতা নতুন কিছু। বরং "সব দোষ মেয়েদের" প্রবনতা আমাদের সমাজে অনেক পুরোনো।
একজন নারী কোনোভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হলে একদল মানুষ সেখানে ঝাপিয়ে পড়ে নারীর দোষ খুঁজে বের করতে। "মেয়ের পড়নে কী ছিলো, কোন সময় বের হইছিলো, সাথে কে ছিলো, বাহিরে যাওয়া কী দরকার ছিলো, নিশ্চয়ই মেয়ের দোষ ছিলো" সহ আরো কত যে মন্তব্য শুনতে পাওয়া যায়! এমন সময়ে একজন নির্যাতিতা, একজন ধর্ষিতার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা এমনিতেই অনেক খারাপ থাকে। আর এমন মন্তব্যগুলো সেই নারীটিকে মানসিক ভাবে আরো আঘাত করে নীরব মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। কোনো নারী যদি সামাজিক ট্যাবু ভেঙে বিচার চাইতে যায় ও, তবুও সে ক্ষেত্রে তাকে হতে হয় হয়রানির শিকার! ধর্ষণের শিকার নারীকেই দোষী বানিয়ে দেয়ার নোংরা প্রবনতা বাদ যায় না পুলিশ স্টেশন থেকে শুরু করে আদালত ঘরেও।
বিবিসি নিউজের সূত্র মতে, ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য সারাদেশে ৮টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে কাউন্সেলিং, পুলিশি ও আইনি সহায়তা দেয়া হয়। ২০০১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩শ ৪১টি যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছে যার মধ্যে ৫শ ৭৮টি বিচার হয়েছে এবং সাজা হয়েছে মাত্র ৬৪টি ঘটনার। বিলম্বিত বিচার ব্যবস্থা ও বিচারহীনতার কারনে অনেক নারী আইনি সহায়তা নিতে আগ্রহী হন না।
বাংলাদেশের আইনে আছে ধর্ষণ মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। যদিও বিশেষ ক্ষেত্রে কারণ দেখিয়ে কিছুটা সময় নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মামলা শেষ হতে দশ বছর বিশ বছরও লেগে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময় ভিক্টিম নারীটিকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। নারীর পরিবারেকে মানসিক আক্রমণ, তাদের উপর সামাজিক চাপ সৃষ্টি, একঘরে করে রাখা সহ আরো অনেক কিছু দেখা যায় এই দীর্ঘ সময়ে।
এইযে নারীর প্রতি দোষ চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতা, নারীকে সময় কিংবা ধর্মের দোহাই দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা সেটা কিন্তু অপরাধ বৃদ্ধির পিছনে অনেক বড়ো ভূমিকা রাখে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় আপরাধ সংঘটিত হবার পরে অপরাধের দায় সরাসরি নারীর উপর চাপানো হয়। আর ধর্মের নামে অযৌক্তিক ব্যাখ্যার কথা তো না-ই বললাম। প্রতিটি মেয়েই সম্ভবত এই অবস্থার সাথে পরিচিত। এদেশের বর্তমান অবস্থা হলো এমন যে, "বিচার মানি, কিন্তু দোষ মেয়েদের"... সময় এসেছে এই অবস্থাটা বদলানোর। বদলাতে হবে মানসিকতা। পরিবর্তন আনতে হবে আইন ব্যবস্থায়। হতে হবে তার যথাযথ প্রয়োগ। তবেই যদি নারীর পথ চলায় কিছুটা স্বস্তি আসে।