আপনি জীবনে কতটুকু ব্যালেন্স করে চলেন ?
- ফারজানা আক্তার
- ডিসেম্বর ২২, ২০২০
একটি বাচ্চা ইঁদুর তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। পরিবার থেকে আলাদা হয়ে সে খাবার জোগাড় করতে পারছিলো না। একদিন গেলো, দুইদিন গেলো, এভাবে তিনদিন কেটে গেলো। সে কোন খাবার জোগাড় করতে পারছিলো না। ক্ষুধার যন্ত্রনায় বাচ্চা ইঁদুরটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিলো। তবুও মনের শক্তির জোরে এদিক সেদিক খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
হঠাৎ বাচ্চা ইঁদুরটি দেখতে পেলো ঘরের এক কোণে এক ঝুড়ি ভর্তি বিস্কুটের প্যাকেট রয়েছে।
ঝুড়ির বড় বড় ছিদ্র দিয়ে ইঁদুরটি ঝুড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো। ধারালো দাঁত দিয়ে বিস্কুটের প্যাকেট কেটে বিস্কুট খেতে শুরু করলো। তিনদিনের ক্ষুধার্ত বাচ্চা ইঁদুরটি যতক্ষন পর্যন্ত পেট না ভরলো ততক্ষণ খেয়েই গেলো। হাতের কাছে এতো বিস্কুট পেয়ে ইঁদুর নিজের লোভ সামলাতে পারে নি। পেট ভরার পরেও খেয়ে যেতে লাগলো। খেতে খেতে তার পেট ফুলে গেলো। তখন আর সে ঝুড়ির ছিদ্র দিয়ে বের হতে পারলো না। তার তুলনায় তখন ঝুড়ির ছিদ্র ছোট হয়ে গিয়েছে।
আরো পড়ুন : মা হওয়ার পর যে কাজগুলো কখনই করবেন না
সে তখন ঝুড়ির ভিতরে থেকে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো, আর সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকলো। বাচ্চা ইঁদুরটির কান্না আর সাহায্যের চিৎকার শুনে একটি টিকটিকি এগিয়ে আসলো। সব শুনে টিকটিকি বললো, 'তুমি এখন কান্নাকাটি আর চিৎকার করা বন্ধ করো। আবার তিনদিন তুমি না খেয়ে থাকো। তারপর তোমার আগের অবস্থা ফিরে আসবে। তখন তুমি ঝুড়ি থেকে বের হতে পারবে। তারপর থেকে যতটুকু তোমার প্রয়োজন ততটুকুই খাবে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। '
টিকটিকির কথা শুনে ইঁদুর চুপ হয়ে গেলো। তারপর তিনদিন না খেয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলো। আগে তার খাবার ছিলো না তাই খেতে পায় নি, আর এখন ঝুড়ি ভর্তি বিস্কুট নিয়ে না খেয়ে পড়ে আছে।
এটি একটি ইংরেজি গল্পের অনুবাদ। গল্পটি রূপক। তবে গল্পে ইঁদুরের চরিত্রের বৈশিষ্ট আমাদের সকলের মধ্যে কমবেশি রয়েছে।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইনের প্রভাব
খুব সহজ একটি উদাহরণ দেই। এই ধরুন ফেসবুকে হুটহাট অনেকেই সেলিব্রিটি হয়ে যায়। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম সবাই অবশ্যই ভালো কোন কাজের জন্য সেলিব্রিটি হয়ে উঠে। তারপর এমন কিছু অদ্ভুত কাজ কর্মে করে বসে বা জড়িয়ে যায় তখন তাকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হয়। সেলিব্রিটি হয়ে উঠার আগে যতটুকু সম্মান ছিলো সেটাও হারিয়ে যায়। আবার ধরুন - হাতে যখন কিছু টাকা পয়সা আসে তখন আমরা এলোমেলো খরচ করি। তারপর শূন্য হাতে বসে থাকি। ব্যাপারটা হচ্ছে একদিন রাজার হালে চলবো। আর, ১০ দিন ফকিরের মতো থাকবো। ব্যালেন্স করে চলাটা আমরা শিখতে পারি নি।
আবার ধরুন - হাতে কিছু ক্ষমতা এলো। তখন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে করতে এমন অবস্থা হয় যে যারা ভালোবেসে ক্ষমতা হাতে তুলে দিয়েছিলো তারাই তিরস্কার করে সেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। ক্ষমতা হাতে আসার আগে যতটুকু সম্মান , ভালোবাসা ছিলো সেটাও হারিয়ে যায়।
ব্যাপারটা হচ্ছে ব্যালেন্স করতে শেখা। খালি পেটেও থাকা যাবে না, আবার ননস্টপ পেট ভরেও খাওয়া যাবে না। কারণ খালি পেটে থাকাটাও ক্ষতিকর, তেমনি পেট ভরে ননস্টপ খাওয়াটাও ক্ষতিকর। নিজের ওজন বুঝে চলি, সুন্দর জীবন গড়ি।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোনের আসক্তি হতে পারে বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ