`বিশ্বাস`
- সুমনা বাগচী
- ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১
বিশ্বাস শব্দটি ছোট্ট কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেক। বিশ্বাসের আঁতুড়ঘর হলো আমাদের পরিবার। একজন সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, স্নেহ ভালবাসা শাসনে বড়ো হয় আর তার সাথে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে অধ্যায় সে শেখে তা হলো বিশ্বাসের পাঠ।আমাদের জীবনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস।কারণ সত্য ও মিথ্যার মাপ কাঠি নির্ভর করে এই বিশ্বাস নামক শব্দের মাধ্যমে।বিশ্বাস শব্দটি এতটাই জোড়ালো যে ভবিষ্যতে একজন পূর্ণ, সুস্থ মানসিকতা ও মানবিকতার মানুষ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার আদর্শ বিষয় হলো বিশ্বাস।
একটু ভেবে দেখুন,আপনার কোনো কাছের মানুষ কিংবা ধরুন কর্ম সূত্রে পরিচিত একজন মানুষ যখন বিশ্বাসী ও নির্ভর যোগ্য হবে তখন অবশ্যই আপনার মনে হবে সে একজন নির্ভর যোগ্য মানুষ।এমন অনেক মানুষ কেও দেখবেন যাদের উপর ভরসা করা তো দূর নির্ভর করার কথাও ভাবা যায় না।এদের কে আমরা আন প্রেডিকটেবল বলে থাকি।
আরো পড়ুনঃ কোন নারীদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি জানুন!
এখানে অবশ্যই একটি বিষয় নির্ভর করছে,সেটি হলো তার ছোটো বেলা।কারণ আমাদের ঠিক ভুলের পাঠক্রম হলো আমাদের বেড়ে ওঠার সময়।সেখানে পিতা মাতা ও পরিজনদের কথা বার্তা, তাদের ভাবনা চিন্তা একটি ছোট্ট শিশুর মধ্যে গভীর ভাবে প্রভাব বিস্তার করে।তাদের মুখের ভাষা,তাদের কথা বলার ভঙ্গি আর অবশ্যই আদর্শ,মতাদর্শ সব কিছুই শিশুর উপর প্রভাব ফেলে। এরকম একটা ঘটনা আজ আপনাদের বলবো। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে করতে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হই আর বোধোদয় হয় সামাজিকতা ও মানুষের ভাবধারা প্রকাশে।
একবার একটি ছোট্ট শিশু কে নিয়ে তার পরিবার এসেছিল কথা বলতে। তার মা যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত।বাবা থাকেন বম্বে তে আর মা থাকেন কর্ম সূত্রে দুবাই তে।শিশুটি তার দিদা দাদুর কাছে থাকতো।সেখানে দাদু প্রত্যহ মদ পান করতেন যার গভীর প্রভাব পড়ে শিশুটির উপর।আর তাকে একটি আয়ার কাছে রাখা হতো।যে তাকে মোবাইল ফোন মাধ্যমে নানা রকম অশ্লীল ছবি ভিডিও দেখাতো।সে কিছু না বুঝেই সেই ধরনের বিষয় গুলো অনুকরণ করার চেষ্ঠা করতো। তার দিদা নিয়ে আসেন আর বাচ্চা টিকে খুব বকা ঝকা করেছিলেন আমার সামনেই।খুব অবাক হই। যে ছোট্ট শিশুটির জীবনে মা এর অস্তিত্ব থেকেও নেই আর একটা নেগেটিভ আবহাওয়া তে সে বড়ো হচ্ছে সেখানে সে কিভাবে মানুষ কে বিশ্বাস করতে শিখবে কিংবা আদর্শের পাঠ বুঝবে।
এরপর তার বিদেশে থাকা মায়ের সাথে ফোনে কথা বলি।যেখানে শিশুটির মা তার যন্ত্রণা ময় ছোটো বেলার কথা বলেন।যেখানে ভয়ে ভয়ে খাটের তলার নিচে সে পড়াশোনা করতেন,কারণ তার বাবা মা ঝগড়া মারপিট করতেন।আর কোথাও অনেক কষ্টে অভাবে পড়াশোনা করে সে বাধ্য হয় বাইরে চাকরি নেবার।কারণ তার পরিবারের উপর কোনো বিশ্বাস ছিল না। উপরের ঘটনা টি বাস্তব ঘটনার জ্বলন্ত প্রমাণ।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে গর্ভাবস্থায় খেতে হবে সাতটি খাবার
এই বার আপনাদের কে প্রশ্ন করি... দোষ কার? শিশুটির? নাকি তার মা বাবার নাকি সে যেখানে আছে সেই স্থানের.... এর উত্তর আমাদের কাছে নেই সেটা জানি... কারণ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। এইবার আপনাদের ভাবতে বলবো,আমাদের প্রত্যেকের এই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে নাকি বিষয় গুলি কে প্রশ্রয় দিতে হবে?? ভেবে দেখুন,শুধু আপনি একা নন,এভাবেই পরিবার পরিজনের মধ্যে এই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। এরজন্য আমাদের সজাগ হতে হবে।এক এক জন চেষ্টা করতে করতে সর্বোপরি সমাজের শুদ্ধিকরণ সম্ভব..... কিন্তু চেষ্টা করতে হবে....
আপনি করবেন তো এই চেষ্টা?. নিজের বিবেক কে জিজ্ঞাসা করুন,নিজের মনের সাথে কথা বলুন।কারণ আপনি আপনার নিজের সব থেকে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।