মেয়েরা কেন নিজের একটি বাড়ি করতে পারে না?
- ফারজানা আক্তার
- ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
আমাদের বেশিরভাগ মেয়েদের দুঃখ আমাদের নিজের কোন বাড়ি নেই। ছোটবেলা বাবার বাড়ি, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি / স্বামীর বাড়ি আর বৃদ্ধকালে ছেলের বাড়ি। তাদের কেউ একজন বাসা থেকে বের করে দিলে আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই। ' মেয়েদের নিজের কোন বাড়ি নেই ' ফেসবুকে গার্লস গ্রুপে এই একটা লাইন বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়।
বাড়ি করতে অনেক টাকা লাগে। আগে নিজের মাথার উপরে একটা ছাদের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা হোক ভাড়া বাসা, নয়তো নিজের বাড়ি। তো মেয়েদের আগে ভাড়া বাসার ভাড়া তো জোগাড় করতে হবে। তারপর নিজের বাড়ি করার চিন্তা করতে হবে। ' নিজের বাড়ি নেই ' এটা বলে সারাক্ষণ মায়াকান্না করে লাভ নেই। বাড়ি করতে হলে আগে উপার্জন করতে হবে। সৎ উপায়ে উপার্জন করার জন্য পরিশ্রম করতে হবে।
ছেলেরা নিজেরা পরিশ্রম করে। যাদের বাড়ি করার সামর্থ্য হয় তারা বাড়ি করে। যাদের সামর্থ্য হয় না তারা ভাড়া বাসায় থাকে। যখন আপনার স্বামী / ছেলের বউয়ের সাথে বনিবনা হবে না তখন তারা না চাইলে আপনাকে তাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হবে। বাবা - মা যতদিন জীবিত থাকে ততদিন তাদের কাছে থাকা যায়। বাবা - মা না থাকলে ভাইয়ের সংসারেও বেশিদিন টিকে থাকা যায় না।
আরো পড়ুন: মেয়েদের চাকরি করার সিদ্ধান্ত শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিবে?
আল্লাহ আপনাকে হাত দিয়েছে, পা দিয়েছে, বুদ্ধি দিয়েছে। তাহলে আপনি কেন অন্যের উপর বোঝা হয়ে থাকবেন ? কেন নিজের দুইবেলার খাবার, পরনের কাপড় আর মাথার উপরের সামান্য ছাদের ব্যবস্থা করতে পারবেন না ?
আপনি পারেন না কারণ আপনি অলস। আপনি পারেন না কারণ আপনার ইচ্ছেশক্তি নেই। আপনি পারেন না কারণ আপনি ব্যস্ত কোন সিরিয়ালে কোন নায়িকা কোন শেডের লিপস্টিক দিয়েছে, কোন ব্রান্ডের আইলাইনার দিয়েছে, সাদার সাথে ম্যাচ করে পিংক রংয়ের শাড়ি ওই আপুটা কোন দোকান থেকে নিয়েছে , পাশের বাসার ভাবীকে তার স্বামী ভালোবাসা দিবসে কী দিয়েছে, ওই বাসার ভাবীর সাথে তার স্বামীর কী নিয়ে ঝামেলা চলছে ইত্যাদি।
আপনি যখন আপনার ছোট্ট মাথায় এতকিছু নিয়ে ঘুরে বেড়ান তখন আপনি নিজের নামে একটা বাড়ির করার চিন্তা কখন করবেন ? সময় আছে পরিশ্রম করার ? সময় আছে নিজের ভবিষৎতের জন্য চিন্তা ভাবনা করে এগিয়ে যাওয়ার ? আজকাল নিজে কিছু করার জন্য বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কেনাকাটা করার জন্য অনলাইন এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়। ঘরে বসে সংসার, সন্তান সামলানোর পাশাপাশি নিজের পরিচিতও তৈরী করা যায়।
কিন্তু আপনি তো এখানে সময় দিবেন না । সময় দিবেন কোথায় ? যেখানে স্বামী, প্রেমিক কাকে কী গিফট দিলো, কিভাবে সারপ্রাইজ দিলো, গালে চোখে কপালে একসাথে কোন উপাদান মিশিয়ে দিলে গাল, চোখ, কপাল একসাথে চকচক করবে। তারপর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর কয় হাজার লাইক, কমেন্ট আর লাভ আসলো সেখানে।
আরো পড়ুন: শিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী মেয়েদের দোষ দেওয়ার আগে পিছনের গল্প জানুন
আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। একবার গার্লস গ্রুপে একটা মেয়ের পোস্ট দেখেছিলাম তার জীবনে খুব শখ ছিলো তার ছবিতে এক হাজার লাইক হবে। সেদিন তার একটা সুন্দর ছবিতে প্রায় ৫ হাজার লাইক এসেছিলো। শখ পূরণ হয়েছিলো তার। সেই আনন্দে ওই পোস্ট দিয়েছিল।
মেয়েরা সাজবে স্বাভাবিক। সাজে মেয়েদেরকেই মানায়। মেয়েরা সাজবে, রূপচর্চার করবে। আর, এই সাজের আর রুপর্চচার টাকা যদি নিজের ইনকামে হয় তাহলে ভালো হয় না ? আরেকজনের পরিশ্রমের টাকায় নিজের গাল চকচক করাতে কিছুটা লজ্জা লাগারও কথা। উপহার এবং সারপ্রাইজ পেতেও আনন্দ, দিতেও আনন্দ। অন্যের পরিশ্রম করা টাকায় উপহার এবং সারপ্রাইজ পেয়ে যতটা আনন্দিত হন, কখনো নিজে কিছু ইনকাম করে সেই টাকায় পছন্দের এবং ভালোবাসার মানুষকে কিছু উপহার বা সারপ্রাইজ দিয়ে দেখবেন। পাওয়ার আনন্দের থেকে দেওয়ার আনন্দ অনেকগুন বেশি।
নিজে মেয়ে হয়ে বলছি আমাদের মেয়েদের এমন অনেক গুন আছে যার জন্য গর্বের এবং আনন্দের শেষ নেই। এবং একইসাথে কিছু মেয়েদের এমন কিছু স্বভাব আছে যার কারণে লজ্জায় মাথা কাটা যায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো নিজে কিছু করার সময় এবং সুযোগ থাকার পরেও অন্যের কাঁধের উপর বসে নিজের শখ পূরণ করার স্বপ্ন দেখা।
বইনেরা, একজন ছেলে যদি পড়াশোনা করে চাকরি - বাকরি করে নিজে বাসা ভাড়া বা বাড়ি বানাতে পারে। একজন মেয়েও পারবে। প্রয়োজন ইচ্ছেশক্তির। সবাই আফসোস করতে পারে, স্বপ্ন সত্যি করতে পারে না। আফসোস করতে পরিশ্রম লাগে না, স্বপ্ন সত্যি করতে পরিশ্রম লাগে।