`বাঙালীর প্রেম দিবস সরস্বতী পুজো`
- সুমনা বাগচী
- ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
ছোটো বেলায় এই দিনটির জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকতাম। যদিও দুর্গা পুজোর অঞ্জলী আর সরস্বতী পূজার অঞ্জলীর মধ্যে কিন্তু একটা বিশেষ পার্থক্য আছে। বিদ্যার দেবী কে অঞ্জলী দিয়ে মনের সমস্ত ভয় উজাড় করে দেওয়া যায়। যেমন পুজো না হলে কুল খাওয়া নিষেধ।আর মন বলতো। মা প্লিজ রক্ষা করো, এই বার প্রিপারেশন এতো টা ভালো নেই,পাক্কা প্রমিজ পরের বছর মন দিয়ে পড়বই পড়বো।
সাত সকালে উঠে কপালে তেল হলুদের ফোঁটা দিয়ে স্নান করে হলুদ রঙের শাড়ি পড়া।সেই সময় এত ম্যাচিং করে পোশাক পড়া হতো না।তাই মা বাবার কিনে দেওয়া লাল পাড়,হলুদ শাড়ি আর তার সাথে কোনো স্কার্ট ব্লাউসের উপরের লাল ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পড়া হতো।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মহিলারা যেসব খাবার খাবেন না!
হাতে লাল কাঁচের চুড়ি আর ভেজা চুল আঁচড়ে,চোখে কাজল আর লুকিয়ে মায়ের লিপস্টিক পড়ে সাজ কমপ্লিট। পুজোর সাজানোর প্রস্তুতি হতো আগের দিন রাতে, বেশ অনেক ক্ষন জেগে নানান হাতে কাটা রঙিন কাগজতৈরি নক্সা, জরি চুমকি দিয়ে মা কে সাজানো হতো।ঠাকুর কিনতে যাওয়ার আরেক মজা,সুন্দর দেখতে,টানা টানা চোখ আর জড়ির গয়নায় সাজানো মা কে পছন্দ করে নিয়ে আসা হতো। সব মিলিয়ে উপস করে জম জমাট সরস্বতী পুজো।
সেই সময় আমাদের বাইরে বেরোনো এত সহজ ছিল না। তাই পাড়ার ছোটো ছোটো পুজোর ভিড়ে চোখের ভাব বিনিময়ের মিষ্টি প্রেম নিবেদন অনুভূতি এক অন্যরকম আঙ্গিকে ভরা। মনে আছে বাড়ির পুজোর পাশাপাশি,বাড়ির গলিতে আমরা পুজো করতাম। খুব কম টাকার চাঁদা নিয়ে আয়োজন হতো আর যেখানে বাড়ির লোক পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন। বাড়িতে বানানো খিচুড়ি দিয়ে চলতো অতিথি সেবা।
পাড়ায় যারা যারা আসছে তাদের প্রত্যেককেই খিচুড়ি দেওয়া হতো। সেই সময় মানুষের হাতে এত অর্থ না থাকলেও ভালোবাসা ছিলো। যা অবর্ণনীয়। কারণ সেখানে মন ছিল খাঁটি। কোনো ভেদ ভাব কে মর্যাদা দেওয়া হতো না। এরপর আসলো কলেজের সময়,বাড়িতে পুজো সেরে কলেজে যাওয়ার আনন্দ ছিল অন্যরকম।কারণ সেখানে বড়ো হওয়ার অন্য আনন্দ ছিল।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত সাদাস্রাব এর সমস্যা দূর করুন ঘরে থাকা ৫ জিনিসেই!
হাজার চোখের ভিড়ে চোখ খুঁজতো মনের মানুষ কে। সময় বদলায় আর আমরাও বদলাই।এখন পুজোর সেই হিড়িক দেখা যায় না।আগে রাস্তায় বেরোলেই হলুদ শাড়ির ঢল দেখা যেতো।সময়ের সাথে সাথে মনের রঙ পোশাকের মতো অনেক টাই বদলে গেছে । তবে সেই মনের কোণে লোকানো অনুভূতি ভাবলেই মন শিহরিত হয়ে ওঠে।ভালোবাসা আজও আছে,যদিও কিছুটা ধুলো চাপা পড়ে গেছে অনুভূতিতে।ঠিক কাঠের আলমারিতে একটি কোণে যত্ন করে রাখা লাল মলাটের ভালোবাসা। শুধু সময় টা বদলে গেছে!