অন্যের মন খারাপে আপনার মমতার হাত বাড়িয়ে দিন
- ফারজানা আক্তার
- ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
দৈনন্দিন জীবনে চলতে, ফিরতে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায় না ? এই যেমন আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে যাওয়া, পা ভেঙে যাওয়া, মাথা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক সময় কিছু কাটতে গিয়ে আঙ্গুল কেটে যায়, রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলি। কত ধরণের দুর্ঘটনাই প্রতিদিন কারো না কারো জীবনে ঘটে যাচ্ছে।
শারীরিক আঘাত পাওয়া প্রতিটি দুর্ঘটনায় আমরা অনেক শুভাকাঙ্খী পাই। মনে করুন আপনি বাসে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন। হুট করে আপনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। তখন বাসে থাকা অন্য যাত্রীরা এগিয়ে আসবে। কেউ তার সাথে থাকা পানির বোতল এগিয়ে দিবে, কেউ তার হাতে যাই থাকবে সেটা দিয়ে বাতাস করার চেষ্টা করবে, কেউ আপনার মানিব্যাগ, ফোন থেকে ঠিকানা নিয়ে আপনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে এবং এতকিছুর মাঝেই আপনাকে নিয়ে সবাই হাসপাতালে ছুটে যাবে।
আবার, এই আপনি মনে করুন বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন। কোন একটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা পেশাগত কারণে আপনি খুব ডিপ্রেশনে আছেন। আপনার মনে হচ্ছে কারো সাথে মন খুলে একটু কথা বলতে পারলে ভালো লাগবে।
বাসে আপনার পাশে যিনি বসে আছেন তাকে বললেন আপনার অনেক মন খারাপ। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে চান। আপনি এই কথা বলার পর তার চেহারাটা কেমন হবে একটু ভাবুন তো! সে আপনার দিকে কিভাবে তাকাবে সেটা একটু কল্পনা করুন। কাউকে আমার পেট খারাপ বলা যতটা সহজ, আমার মন খারাপ মন ততটাই কঠিন। পেট খারাপ বললে কেউ পেট পরীক্ষা করে দেখে না। তবে বিশ্বাস করে।
আর, আমার মন খারাপ বললে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলবে, 'খাচ্ছ, ঘুমাচ্ছ, ফেসবুকে ফানি পোস্ট, ছবি আপলোড দিচ্ছ। তোমার আবার কীসের মন খারাপ ?'
মনের যে অসুখ হয় বর্তমানে সেটা অনেকেই জানে, কিন্তু মানে না। মনের যে যত্নের প্রয়োজন সেটা কেউ করে না। মনের অসুখকে এখনো অনেকে ভীমরতি মনে করে উড়িয়ে দেয়।
গতকাল রাতে একজন ছেলে সুইসাইড করেছে। ছয় মাস আগে তার ব্রেকআপ হয়। অল্প বয়সের প্রেম। হুট করে প্রেমিকা চলে যাওয়া মানতে পারে নি। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার পর বন্ধুরা মজা করে তাকে আধুনিক বাপ্পারাজ বলে ডাকতো। অনেক বন্ধুরা বলতো একজন গেছে, আরেকজন আসবে। অনেক বন্ধুরা তার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে মজা করেছে। খাওয়া - ঘুম, গোসল বাদ দিয়ে সারাদিন দরজা বন্ধ করে রুমে বসে থাকতো। এইজন্য পরিবারের মানুষও নানান কথা শুনাতো। অবশেষে নিজেকে পরাজিত করে গলায় ফাঁস দিয়েছে।
একজন মানুষের সদ্য ব্রেকআপ হয়েছে। তার সাথে মজা না করে, তাকে অপমান না করে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া যেতো না ? তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখা যেতো না ?
হুট করে আপনার পরিবারের একজন, আপনার সন্তান খাচ্ছে না, ঘুমাচ্ছে না, সারাক্ষণ রুমে কেন বসে থাকছে সেটা তার কাছে জানতে না চেয়ে অপমান করার খুব দরকার ছিলো? ছেলেটা তো চলে গেলো। তার চলে যাওয়ার পিছনে আপনাদের দ্বায় অস্বীকার করতে পারবেন ?
কেউ যদি তার মনের খারাপের কথা আপনাকে বলতে চায় একটু শুনুন। কেউ যদি তার মন খারাপের সময় আপনাকে পাশে চায় তার পাশে থাকুন। একটু মানবিক হন প্লিজ!