`হঠাৎ ভুলে যাওয়া`
- সুমনা বাগচী
- এপ্রিল ৬, ২০২১
দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেক মুহূর্তে কঠিন পরিস্থিতি, স্ট্রেস, এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে আমাদের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাম যেমন, ডিমেনশিয়া, Alzheimer's ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। চোখের সামনে দেখা এমন অনেক ঘটনা দেখেছি, যেখানে স্ত্রী কে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে দিদি বলে সম্বোধন করা, সন্তানদের চিনতে না পারা, বাইরে বেরোলে রাস্তা ভুলে যাওয়া, বাস্তব জীবন,অভিজ্ঞতা, কর্ম জগৎ সব কিছুই থমকে যায়। যা যা পরিচিত ছিল হটাত করে সব কিছুই অজানা হয়ে যায়। এই বিষয় টা যদিও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা।
আরো পড়ুনঃ নিউকাল কর্ড! গর্ভে শিশুর গলায় পেঁচিয়ে যাওয়া
যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঔষধ সেবন ও থেরাপি মাধ্যমে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভুলে যাওয়া বিষয় টা একজন মানুষের স্বভাব গত বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে।যেমন ধরুন দুটি মানুষ একসাথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, হাজার বাধা বিপত্তি পেরিয়ে একসাথে থাকার কথা ভাবে,আর ছোটো ছোটো স্যাক্রিফাইস গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনে ভালো থাকতে চায় সেটা আমাদের জীবনে বাঁচার রসদ। কিন্তু সেই সম্পর্ক কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে যখন তা taken for granted হয়ে যায়। সকল কঠিন পরিস্থিতি তে পাশে থেকে হটাত করেই মানুষ সম্পর্কের গুরুত্ব ভুলে যায়।পৃথিবীতে যে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। কোনো সম্পর্কই এতটাও মসৃণ হয় না।
সোশ্যাল মিডিয়া তে দেওয়া ছবি গুলো যেমন হাসি মুখের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু কোথাও তার ভিতরে জমাট বাঁধা অন্ধকার আমাদের মনের চোখ কে ফাঁকি দেয়। আমরা কোথাও ভাবি না,যে সম্পর্ক তৈরি করতে এত টা সময় আর ডেডিকেশন লেগেছিলো মুহূর্তে স্বার্থ ফুরালে সব টাই ভুলে যাওয়া। যদিও এই ভুলে যাওয়া টা কোনো রোগ না, নিজের ইচ্ছায় ভুলে যাওয়া। ভুলে যাওয়া খুব সহজ সেই একসাথে থাকার মুহূর্ত গুলো,ভালো থাকার জন্য চেষ্টা,হাজার কাজের মাঝেও পাশের মানুষ টির জন্য তার পছন্দের খাবার তৈরি করা,একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, সন্তানের প্রতি কর্তব্য আরো এমন অনেক কিছু যা গোনা বা হিসাবের সম্পূর্ণ বাইরে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভকালীন অবস্থায় প্লাসেন্টার অবস্থান কেমন হয়?
প্রত্যেক সম্পর্কে ঝড় আসে।আর সেই ঝড় প্রতিরোধের দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের।কারুর একার চেষ্টা তে সম্পর্ক টেকানো যায় না। কঠিন লাগে তখন যখন মন ভাবায় পাশের মানুষ টি হটাত কেমন বদলে গেলো,হাজার প্রমিজ কেমন মিথ্যা আর সাজানো ছিল,বছরের পর বছর একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি হারিয়ে যায়। কেউ বুঝতে পারে না মনের ঝড়ের কারণ কি। একসাথে থেকে হটাত হাত ছেড়ে যাওয়া কোথাও দায়িত্ব হীনতার পরিচয়। আর মনে হয় সম্পর্ক টা শুধু কি ব্যবহারের জন্য ছিল? এই প্রশ্ন টা নিজের কাছে করুন।
কারণ একটা সত্যি কথা হলো, জোর করে সম্মান বা ভালোবাসা দুটোই পাওয়া যায় না। কোথাও নিজেদের কে এগিয়ে যেতে হয়। ইগো শব্দ টা ভালোবাসার কাছে খুব ভারী হয়ে যায়। আর মন যদি বলে যে পুরোনো ভালোবাসা সরিয়ে আবার নতুন করে এগোনো যায়,সেখানে ভুল হয় কারণ প্রত্যেক টি মানুষ আলাদা। এতদিন যা অভ্যাস ছিল ভালোবাসা ছিল কাল নতুন মানুষ টির মধ্যে সেই গুলো নাই থাকতে পারে। আমরা ভুলে যাই ভালোবাসা একটা অভ্যাস।
প্রত্যেক দিন আমরা যেমন নিজেদের রোজকার কাজ করে থাকি তেমন ভালোবাসাও একটা অভ্যাস একটা অনুভুতি যা সময়ের সাথে কিছু টা পরিস্থিতির চাপে ফিকে হয়ে গেলেও সম্পূর্ণ রঙ হারায় না। কিন্তু আমরা নিজেরা ভুলে যাই তার গুরুত্ব দেওয়া। ঠিক ঘুম থেকে উঠে চারদিক টা যেমন অন্ধকার লাগে,একদিন সেই ভাবেই আমরা সব কিছু ভুলে যাই।এর দায় ভার কে নেবে? মানুষ নাকি তার মনুষ্যত্ব বোধ?
আরো পড়ুনঃ নারী যৌনাঙ্গের না বলা সমস্যাসমূহের সঠিক যত্ন
ভেবে দেখবেন বন্ধুরা, সময়ের সাথে সব কিছু পাল্টালেও নিজেকে পাল্টিয়ে একজন অন্য মানুষ তৈরি করার মধ্যে কোনো আনন্দ আসে কি? যেখানে নিজের প্রিয়জন কে ফাঁকি দিয়ে সমস্ত পুরনো স্মৃতি জোর করে ভুলে সব থেকে কাছের মানুষ টি কে বদনাম করা?? ঠিক জানা নেই। পৃথিবীতে প্রত্যেকদিন নানান পরিবর্তন আসছে,আজকে বিশ্ব কালীন সমস্যা অর্থাৎ Covid আমাদের জানার বাইরে ছিল কিন্তু তাও আমরা এগিয়ে চলেছি। তবে ভাবনায় জোর করে ভাইরাস আনলে একদিন আমরাই থমকে দাড়িয়ে যাবো। আসলে জীবনে সব কিছু মিথ্যা ও নাটক দিয়ে হয় না। বাস্তবের সামনে আসতেই হয়।