সন্তানকে আদর্শবান করে গড়ে তুলবেন যেভাবে
- কামরুন নাহার স্মৃতি
- এপ্রিল ৮, ২০২১
অনেক মা-বাবাই অভিযোগ করেন যে বাচ্চা প্রচন্ড দুষ্টু। কথা শোনে না, জিদ করে, খারাপ জিনিস দ্রুত শেখে। কারো কারো বাচ্চা বেড়াতে গেলে এমন কিছু করে বসে যে মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। তাছাড়া একটু বড় হলেই বাচ্চার অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া বা মাদকাসক্ত হয়ে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকেন এখন সকল পিতা-মাতাই।
আরো পড়ুনঃ পেটের মেদ বাড়ার ৫ কারণ
কখনও কি ভেবেছেন যে আপনার শিশুপালন পদ্ধতিতে ভুল থাকতে পারে? কখনও কি ভেবেছেন যে আজকের অতিরিক্ত আদরবাসা আসন শিশুরা আগামী ধ্বংস করে দিতে পারে? আজকাল অনেক বাচ্চারাই অল্প বয়স থেকে টাকা কিংবা দামি জিনিসের জন্য পিতামাতাকে চাপ দিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান ঠিক সেভাবেই বেড়ে উঠবে যেভাবে আপনি তাকে মানুষ করবেন।
নিয়মিত না বলুন: সন্তান যা চাইবে, সেটাই দিয়ে দেবেন না। বড় হলে তো না-ই, ছোটবেলাতেও না। অনেক পিতা-মাতাই ছোট শিশুরা যেটা চাইছে কান্না থামানোর জন্য সেটাই হাতে দিয়ে দেন। ফলে মোবাইল ফোন বা টেপ সহ সকল বাজে জিনিস হাতে নিয়ে তাদের অভ্যাস হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে বুঝতে হবে যে চাইলেই সব পাওয়া যায় না, কেঁদে কোন লাভ নেই। ফলে বড় হলেও অযৌক্তিক কোন জিনিস পাবার আশা সন্তানেরা করবে না।
শিষ্টাচার শিক্ষা: বাচ্চাকে সমস্ত মানবিক আদব-কায়দা ছোটবেলা থেকেই শেখান। যেমন স্যরি বা থ্যাংক ইউ বলা, অন্যকে সাহায্য করা, কাউকে ব্যঙ্গ না করা, মিথ্যা না বলা, অন্যের ক্ষতি না করা, গালাগাল না করা ইত্যাদি। কিভাবে শেখাবেন জানেন? আপনার নিজেকেও এসব করার অভ্যাস করতে হবে। শিশুকে শেখান, কিন্তু তার আগে নিজে এসব অভ্যাস ত্যাগ করুন। আপনাকে দেখেই সন্তান খারাপ ও ভালো শেখে।
আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খেতে পারেন তরমুজ
দান করতে শেখান: যেসব জিনিস আপনার বাচ্চাদের এখন লাগছে না, সেগুলো নিয়মিত অন্যদেরকে দিয়ে দিন যাদের প্রয়োজন। আর এই কাজটি সন্তানদের সাথে নিয়েই করুন। এর ফলে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা শিখবে অন্যদের কত কষ্ট এবং অহেতুক দামি জিনিস কিনে অর্থ অপচয় না করতে। ফলে বড় হয়েও তারা উগ্র স্বভাবের হয়ে বেড়ে উঠবে না, কারণ ঘরেই আছে সহানুভূতির শিক্ষা।
ভালো মানুষের সাথে সম্পর্ক: কাদের সাথে মেলামেশা করছেন, সেটা খুব খেয়াল রাখুন। যদি এমন সব পরিবারের সাথে মেলামেশা করেন যারা কিনা বাচ্চাদেরকে সঠিকভাবে মানুষ করছে না, অকারণেই দামি জিনিস কিনে দিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আপনার বাচ্চা ও দ্রুত এদের দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং খারাপ জিনিস শিখবে। এমনকি নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এসব মানুষেরা বাচ্চাদেরকে কোমল মনকে খারাপ ভাবে প্রভাবিত করে। কোন পারিবারিক বাজে ঘটনাও বাচ্চাদের সামনে আলোচনা করতে নেই।
শিশুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন: বাচ্চাদের প্রতি নিজের ভালোবাসা নিয়মিত প্রকাশ করুন। কিন্তু জিনিস কিনে দিয়ে নয়। বরং তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে। সুন্দর করে কার্ডে লিখে ধন্যবাদ জানাতে পারেন একজন চমৎকার সন্তান হবার জন্য বা কোন ভাল কাজের জন্য। মাঝে মাঝে দিতে পারেন ছোট উপহার। সে খুব ভালো কিছু করলে বিনিময়ে তার আকাঙ্ক্ষিত উপহার কিনে দেবেন মাঝে মাঝে। কিন্তু সবই করবেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী।
চেষ্টা করতে দিন: জীবনের পথে সবাইকেই ঠেকে ঠেকে শিখতে হয়। আপনার বাচ্চাদেরকেও শিখতে হবে। নিজের জীবনের পথে নিজেকে চলে চলে শিখতে হবে। তারা পড়ে যাবে, ব্যথা পাবে, নিজেরাই আবার উঠে দাঁড়াতে শিখবে। সব পড়ায় দৌড়ে যাবেন না ধরতে। বরং তাকে পরামর্শ দিন যে সে উঠে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদেরকে বলুন: বাচ্চাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যেমন দাদা-দাদী, নানা নানি, খালা, মামা কিংবা চাচা, ফুপিদেরকেও ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলুন যে আপনি কিভাবে ওদের মানুষ করতে চান। তাদেরকে বলুন যে সঠিক সময়ে আদর করতে, ভুল হলে বুঝিয়ে বলতে, প্রয়োজনে শাসন করতে। টাকা কিংবা জিনিস দিয়ে ভালোবাসা প্রদর্শন করতে, বা তাদের সামনে বাজে আচরণ না করতে অনুরোধ করুন।
আরো পড়ুনঃ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে স্ট্রবেরি
শিশুকে বিশ্বাস করুন: তাদের ওপরে আস্থা রাখুন। কোন কারনে বিশ্বাস বা আস্থা না রাখতে পারলেও সেটা তাদেরকে বুঝতে দেবেন না। নিয়মিত পকেটমানি দিন অল্প করে এবং সে টাকা দিয়ে কিভাবে চলতে হবে সেটা শেখান। এতে তার মানি ম্যানেজমেন্ট শেখা হবে এবং সে বুঝতে শিখবে যে টাকা উপার্জন একটি কঠিন কাজ।
নিজের গল্প বলুন: সন্তানদেরকে নিয়মিত নিজের গল্প বলুন। আপনি কিভাবে অর্থ উপার্জন করেন, কিভাবে কষ্ট করতে হয় সেটা তাদেরকে জানান। ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শেখান যে টাকা খরচ করতে শেখার আগে উপার্জন করা শিখতে হবে।