প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার: প্রথম বিপ্লবী নারী শহীদ ব্যক্তিত্ব
- ফারজানা আক্তার
- এপ্রিল ১১, ২০২১
জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে প্রীতিলতা একজন। প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত। নবাবী আমলে পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ “ওয়াহেদেদার” উপাধি পেয়েছিলেন, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার।
১৯১৮ সালে প্রীতিলতা প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। তার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ডাঃ খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। পড়াশোনায় ভালো ছাত্রী ছিলেন। দ্রুত সকল শিক্ষকের প্রিয় হয়ে উঠেন। তাদের একজন ইতিহাসের ঊষাদি। তিনি প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানী লক্ষীবাইয়ের ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন।
প্রীতিলতার প্রিয় বন্ধুদের একজন কল্পনা দত্ত (পরবর্তীকালে বিপ্লবী)। তারা দুইজন একসাথে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। কোন এক স্বপ্নের কথা প্রসঙ্গে কল্পনা দত্ত বলেছিলেন, “কোন কোন সময় আমরা স্বপ্ন দেখতাম বড় বিজ্ঞানী হব। সেই সময়ে ঝাঁসীর রানী আমাদের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে। নিজেদেরকে আমরা অকুতোভয় বিপ্লবী হিসাবে দেখা শুরু করলাম।”
আরো পড়ুন : মেহেদি পাতা দিয়ে দূর করতে পারেন যে সাতটি শারীরিক সমস্যা!
প্রীতিলতার পছন্দের বিষয় ছিল আর্টস এবং সাহিত্য। ১৯২৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলাপ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অংকে কম পেয়েছিলেন বলে তার বৃত্তি মিস হয়েছিল।
এসএসসি পরীক্ষার পর তিনি একটি নাটক লিখেন। নাটক লেখা শেষ করে মেয়েদের একটি গ্রুপ তৈরী করেন। চৌকি দিয়ে মঞ্চ তৈরী করে সব মেয়েরা মিলে সেই নাটক পরিবেশন করেন। পরীক্ষার ফলাফলের পর তার একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্ত তিনি সেই বিয়েতে অসম্মতি জানান।
এইচএসসি পড়ার সময় তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। মাসিক ১০ টাকায় তখন তার থাকা, খাওয়া এবং কলেজের খরচ হয়ে যেত। ১৯৩০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। চমৎকার এই ফলাফলের জন্য তিনি ২০ টাকা বৃত্তি পান। এরপর তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ়ে বি এ পড়তে যান।
আরো পড়ুন : কিছু ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারেও জীবানুমুক্ত হয় না আপনার হাত!
প্রীতিলতা খুব চমৎকার বাঁশি বাজাতো। বানারসী ঘোষ স্ট্রীটের হোস্টেলের ছাদে প্রীতিলতার বাঁশীঁ বাজানো তার সহপাঠীরা উপভোগ করতো। বি এ তে তার পছন্দের বিষয় ছিল দর্শন। দর্শন পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করেন। ইচ্ছে ছিল এই বিষয়ে অনার্স করবেন। কিন্তু পরে বিপ্লবের সাথে যুক্ত হওয়ায় অনার্স করতে পারেননি।
১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস এর মোড়ে সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারী কর্মচারীদের বেতনের ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে। ছিনতাই করার প্রায় দুই সাপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেই অভিযানে সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী গ্রেফতার হন। তাদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে ডাকাতি মামলা দেওয়া হয়। এই ঘটনা প্রীতিলতার মনে নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এই ঘটনা নিয়ে প্রীতিলতা তার পছন্দের শিক্ষক ঊষাদির সাথে আলোচনা করে অনেক কিছু জানতে পারে। তখন ঊষাদি তাকে “ঝাঁসীর রাণী” বইটি পড়তে দেন। ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের জীবনী প্রীতিলতার মনে গভীর দাগ কাটে।
১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিনান্স নামে এক জরুরি আইনে বিপ্লবীদের আটক শুরু হয়। এই আইনে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদলের অনেক নেতা এবং সদস্য আটক হয়। সরকার বিপ্লবীদের প্রকাশনা সমুহ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। বিপ্লবী সংগঠনের ছাত্র এবং যুবকরা তাদের সাইকেল, বইপত্র, অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখতো।
আরো পড়ুন : ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় হাটতে সমস্যা হচ্ছে? জানুন নিয়ন্ত্রণের উপায়
পূর্ণেন্দু দস্তিদার ছিল প্রীতিলতার নিকট আত্মীয় এবং বিপ্লবী দলের কর্মী। তিনি তখন কিছু বই প্রীতিলতার কাছে লুকিয়ে রাখেন। প্রীতিলতা তখন লুকিয়ে লুকিয়ে “দেশের কথা”, “বাঘা যতীন”, “ক্ষুদিরাম” আর “কানাইলাল” পড়ে ফেলেন। এই বইগুলো তাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে।
প্রীতিলতা পূর্ণেন্দুকে বলে সেও বিপ্লবী দলে যোগ দিতে চায়। তখন পর্যন্ত বিপ্লবী দলে কোন মহিলা সদস্য যোগ দেয়নি। নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে মেলামেশাও বিপ্লবীদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
ঢাকায় “শ্রীসংঘ” নামে একটি বিপ্লবী সংঘঠন ছিল। এই দলটি প্রকাশ্যে লাঠিখেলা, কুস্তি, ডনবৈঠক, মুষ্টিযুদ্ধ শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব তৈরী করেছিল। শ্রীসংঘের ' দীপালী সংঘ ' নামের একটি মহিলা শাখা ছিল। লীলা নাগ বিয়ের পর অবশ্য তিনি লীলা রায় হয়েছেন তার নেতৃত্বে এই সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজ করতো। গোপনে তারা মেয়েদের তাদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতো। ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির মাধ্যমে প্রীতিলতার সাথে লীলা রায়ের পরিচয় হয়। দীপালি সংঘে যুক্ত হয়ে প্রীতিলতা লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।
আরো পড়ুন : ম্যাসাজ করে পেট ফাঁপা ও বদহজম দূর করেন
১৯২৯ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগীরা চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের জেলা সম্মেলন, ছাত্র সম্মেলন, যুব সম্মেলন ইত্যাদি আয়োজনের পরিকল্পনা করেন। নারী সম্মেলন করবার কোন পরিকল্পনা তিনি তখনো করেননি। পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বিপুল উৎসাহের কারণে পরবর্তীতে সূর্য সেন নারী সম্মেলন আয়োজনের সম্মতি দেন। মহিলা কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রীতিলতা ঢাকা থেকে এবং কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে এসে যোগদান করেন। তাদের দুজনের খুব ইচ্ছে ছিল সূর্য সেনের অধীনে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ার কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা ফিরে যান।
এইচএসসি পরীক্ষার পর ঢাকা থেকে চট্রগাম ফিরে যান প্রীতিলতা। আগের দিন রাতে চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অস্ত্রাগার, পুলিশ লাইন, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন। এটি পরবর্তীতে “চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ” নামে পরিচিত লাভ করে। এই বিদ্রোহ বাংলার ছাত্রসমাজকে উদ্দীপ্ত করে।
১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতা পড়তে যায়। পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। যুব বিদ্রোহের পর পূর্ণেন্দু মধ্য কলকাতায় বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায়ের পিসির (গুণু পিসি) বাসায় আশ্রয় নেন। প্রীতিলতা প্রায় সেখানে যেতেন। পূর্ণেন্দু পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর মনোরঞ্জন রায় নারী বিপ্লবীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। কারাগারে বন্দী নেতাদের সাথে আত্মগোপনে থাকা সূর্য সেন বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করতো। নতুন হামলার পরিকল্পনা তারা এভাবেই করে যাচ্ছিলো।
আরো পড়ুন : কানের ব্যথা দূর করার উপায় জানুন
প্রীতিলতা এবং কল্পনা দত্তের সাথে পরিচয়ের পর মনোরঞ্জন বুঝতে পারেন এই মেয়ে দুইটি সাহসী এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম।
গ্রামের যুবকদের পুলিশরা বেশ সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করলো। যুবক বয়সী কাউকে দেখলেই ডেকে নানান প্রশ্ন এবং তল্লাশি চালাতো। সূর্য সেন তখন ভাবলেন এই অবস্থায় যুবকদের এড়িয়ে নারীদের কাজে লাগাতে হবে। মেয়েদের তখনো সন্দেহ করা শুরু হয়নি। সূর্য সেনের অনুমতি পাওয়ার পর মেয়েদের কাজে লাগানো হলো।
চট্টগ্রামে সূর্য সেনের কাছে বোমা পৌঁছে দিয়ে কলকাতা ফিরে যায় মনোরঞ্জন। কলকাতা যাওয়ার একদিন পরেই পুলিশ তাকে আটক করে। ঠিক সেই সময়ে টি জে ক্রেগ বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পদে নতুন দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম আসেন। তাকে হত্যা করার জন্য রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে ঠিক করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা আক্রমণ চালায় কিন্তু ভুলবশত মিঃ ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এস ডি ও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করে। সেদিনই পুলিশ বোমা আর রিভলবারসহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে। তারিণী মুখার্জি হত্যা মামলার রায়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মৃত্যুদন্ড এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসন দন্ড দেয়া হয়।
আরো পড়ুন : ভিটামিন সি বেশি খেলে কোন সমস্যা হবে?
ব্যয়বহুল থাকার কারণে আলিপুর জেলে ফাঁসির জন্য অপেক্ষারত রামকৃষ্ণের সাথে কেউ দেখা করতে যায়নি। এই কথা জানার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতার কাছে একটি চিঠি লিখে। চিঠিতে লেখা হয় প্রীতিলতা যেন রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে। মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী যখন তার সাথে দেখা করতে জেলে যায় তখন গোপনে মায়ের হাত দিয়ে এই চিঠি পাঠায়। গুনু পিসির উপদেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে “অমিতা দাস” ছদ্মনামে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের “কাজিন” পরিচয় দিয়ে দরখাস্ত করেন। অনুমতি পাওয়ার পর প্রায় ৪০ বার রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করেন।
১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয়। এই ফাঁসির পর বিপ্লবী কর্মকান্ডে সরাসরি যুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা প্রীতিলতার অনেক বেড়ে যায়। রামকৃষ্ণের ফাঁসির পর প্রায় নয় মাস প্রীতিলতা কলকাতায় থেকে যায়। কারণ তখন সে বি এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি এসে দেখে তার বাবার চাকরি চলে গেছে। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য তখন তিনি শিক্ষকতায় যোগ দেন। স্কুলে যাওয়া, প্রাইভেট পড়ানো, মাকে সাহায্য করে তার দিন কেটে যাচ্ছিলো। নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।
আরো পড়ুন : ভিটামিন সি সত্যিই করোনা ঠেকায়?
প্রীতিলতা মাষ্টারদা সূর্য সেনের সাথে দেখা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। এই আগ্রহের কথা তিনি কল্পনা দত্তকে জানান। কল্পনা দত্ত আগেই বদলী হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। তাই সূর্য সেনের সাথে তার আগেই দেখা হয়েছিল। একদিন গ্রামের এক ছোট্ট কুটিরে কল্পনা দত্ত প্রীতিলতার সাথে নির্মল সেনের পরিচয় করিয়ে দেন। কথায় কথায় নির্মল সেন প্রীতিলতার কাছে জানতে চায় পরিবারের প্রতি তার কেমন টান আছে। তখন প্রীতিলতা বলেন , “টান আছে। কিন্তু duty to family-কে duty to country-র কাছে বলি দিতে পারব”।
যুব বিদ্রোহের পর সংগঠন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য মাষ্টারদা এই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করছিল। এই কারণে প্রীতিলতার সাথে তার দেখা হয়নি। নির্মলবাবু মাষ্টারদাকে প্রীতিলতার কথা বলে। বিশেষ করে রামকৃষ্ণের সঙ্গে সে ফাঁসীর আগে দেখা করেছে শুনে মাষ্টারদায়ের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতার প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনাতে মাষ্টারদা লিখেছেন “তার চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম। এতদূর পথ হেঁটে এসেছে, তার জন্য তার চেহারায় ক্লান্তির কোন চিহ্নই লক্ষ্য করলাম না। যে আনন্দের আভা তার চোখে মুখে দেখলাম, তার মধ্যে আতিশয্য নেই, Fickleness নেই, Sincerity শ্রদ্ধার ভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। একজন উচ্চশিক্ষিত cultured lady একটি পর্ণকুটিরের মধ্যে আমার সামনে এসে আমাকে প্রণাম করে উঠে বিনীতভাবে আমার দিকে দাঁড়িয়ে রইল, মাথায় হাত দিয়ে নীরবে তাকে আশীর্বাদ করলাম। ”
আরো পড়ুন : কোমর ব্যথা হলেই কি বেড রেস্টের প্রয়োজন হয়?
মাষ্টারদা আরো লিখেছেন “তার action করার আগ্রহ সে পরিষ্কার ভাবেই জানাল। বসে বসে যে মেয়েদের organise করা, organisation চালান প্রভৃতি কাজের দিকে তার প্রবৃত্তি নেই, ইচ্ছাও নেই বলে”। ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী দেবীর বাডিতে ৩ দিন অবস্থান করে প্রীতিলতা। এই তিনদিনে সে আগ্নেয়াস্ত্র triggering এবং targeting এর উপর প্রশিক্ষন গ্রহণ করে।
যুব বিদ্রোহের দুই বছর অতিবাহিত হলেও বিপ্লবীরা নতুন কোন সাফল্য অর্জন করেনি। এর মাঝে বিপ্লবীদের অনেকে নিহত হয়েছে। অনেকে জেলে গিয়েছে। মাষ্টারদা এবং নির্মল সেন গ্রামে গ্রামে গোপনে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ধলঘাট গ্রাম ছিল বিপ্লবীদের জন্য অতি শক্তিশালী গোপন আস্তানা। এর মধ্যে সাবিত্রী দেবীর টিনের ছাউনি দেয়া মাটির দোতলা বাড়িটা অন্যতম। বিধবা সাবিত্রী দেবী এক ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে ঐ বাড়িতে থাকতেন। বিপ্লবীদের কাছে এই বাড়ির নাম ছিল “আশ্রম” । এখানে বসে সূর্য সেন এবং নির্মল সেন অন্য বিপ্লবীদের সাথে দেখা করতেন, আলোচনা করতেন, নিজেরা পড়াশোনা করতেন এবং লিখতেন।
১৯৩২ সালের ১২ জুন। সেদিন অনেক ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো। সেই রাতে মাষ্টারদা একজন লোক পাঠান প্রীতিলতাকে আশ্রমে নিয়ে আসার জন্য। প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুণ্ডে যাবার কথা বলে এই আশ্রমে আসে। সেদিন সেই বাড়িতে মাষ্টারদা, নির্মল সেন ছাড়াও ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক আসামী তরুন বিপ্লবী অপূর্ব সেনও অবস্থান করছিলেন।
আরো পড়ুন : মাইগ্রেনের ব্যথার তীব্রতা বাড়ার কারণ জানুন!
১৩ জুন সন্ধ্যায় পটিয়া পুলিশ জেনে যায় সূর্য সেন এবং তাঁর সহযোগীরা সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থান করছে। তার আগের মাসে মানে মে মাসে ইংরেজ প্রশাসন ঘোষণা দেয় জীবিত অথবা মৃত মাষ্টারদা এবং নির্মল সেনকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০,০০০ টাকা পুরস্কার পাবে।
ক্যাম্পের অফিসার-ইন-চার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটা পাওয়ার পর খুব উত্তেজিত বোধ করেন। পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশা নিয়ে তিনি একটা টিম রেডি করেন। সেই টিমে ছিল দুজন সাব-ইন্সপেক্টর, সাতজন সিপাহী, একজন হাবিলদার এবং দুজন কনষ্টেবল। বিশাল এই টিম নিয়ে রাত প্রায় ৯টার তিনি সেই বাড়িতে উপস্থিত হন।
পুলিশ আসার একটু আগেই মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতা দোতলা বাড়ির নীচতলার রান্নাঘরে ভাত খেতে বসেছিলেন। জ্বরের কারনে নির্মল সেন এবং ভোলা উপরের তলায় শুয়ে ছিলেন। মাস্টার দায়ের সাথে ভাত খেতে প্রীতিলতা লজ্জা পাচ্ছিলো। তাই সে খাবার নিয়ে উপরে চলে যায়। এমন সময় মাষ্টারদা ঘরের ভিতরের মই বেয়ে দোতলায় উঠে বলেন “নির্মলবাবু, পুলিশ এসেছে”।
আরো পড়ুন : পুরুষদের অকাল মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার, ঝুঁকি কমাতে জানুন!
মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে নিচে গিয়ে মেয়েদের সাথে থাকতে বলে। সিপাহী এবং কনষ্টেবলরা পুরো ঘর ঘিরে ফেলেছে। ক্যাপ্টেন ক্যামেরন এবং সাব-ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন বোস ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে সাবিত্রী দেবীকে জিজ্ঞেস করেন ঘরে কে কে আছে! কিন্তু সাবেত্রী দেবী কোন উত্তর দেয়নি।
ক্যাপ্টেন ক্যামেরন সিদ্ধান্ত নেয় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতেই নির্মল সেনের করা দুইটা গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মৃত্যুবরন করেন। গুলির শব্দ পাবার সাথে সাথে চারিদিকে থাকা সৈন্যরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। একটি গুলি নির্মল সেনের বুকে লাগে এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। টাকা পয়সা, কাগজপত্র গুছিয়ে মাষ্টারদা প্রীতিলতা এবং অপুর্ব সেনকে সঙ্গে নিয়ে অন্ধকারে বাহিরে আসেন। শুকনো পাতায় পা পড়তেই শব্দ হয়। ছড়িয়ে থাকা সৈন্যেরা তখন আওয়াজ যেদিন থেকে এসেছে সেইদিকে গুলি বর্ষণ করে। অপুর্ব সেন সবার সামনে ছিল। সবার আগে সে মারা যায়।
সেই অন্ধকার রাতে মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতা কচুরিপানা ভরা পুকুরে সাঁতার কেটে আর কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে পটিয়ার কাশীয়াইশ গ্রামে দলের কর্মী সারোয়াতলী স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র মনিলাল দত্তের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত লিখে প্রীতিলতা মাষ্টারদায়ের জন্য নিয়ে এসেছিল। সেটা হারিয়ে যায় । মাষ্টারদা মণিলালকে বলেন তাদের নিরাপদ কোন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে।
আরো পড়ুন : শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে না খেয়ে থাকা কতটা কার্যকর!
ধলঘাট হতে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে পাহাড়, জঙ্গল এবং নদীর কাছাঁকাছি একটি গ্রাম জৈষ্ট্যপুরায় তাদের নিয়ে যায় মণিলাল। পরেরদিন মাস্টারদা মণিলালকে বলে প্রীতিলতার বাড়িতে পুলিশি পাহারা আছে কিনা খোঁজ নিতে। মণিলাল যখন জানায় সব ঠিক আছে তখন মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে বাড়ি গিয়ে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে বলেন।
ধলঘাট সংঘর্ষের সে রাতেই পুলিশের এস.আই মনোরঞ্জন বোস সাবিত্রী দেবীর বাড়িটা ধ্বংস করে দেয়। সকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও সেনাধ্যক্ষ মেজর গর্ডন দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। সাবিত্রী দেবী এবং তার ছেলে মেয়েকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। কন্যা স্নেহলতার জবানবন্দিতে আরো তিন যুবক দীনেশ দাশগুপ্ত, অজিত বিশ্বাস, এবং মনীন্দ্র দাশকে গ্রেফতার করা হয়। সাবেত্রী দেবী এবং তার ছেলে মেয়ের চার বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। সাবেত্রী দেবীর ঘর থেকে রিভলবার, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের দুইটা ছবি, পাশাপাশি দুইটা মেয়ের ছবি (যার মধ্যে একজন ছিল প্রীতিলতা) সহ কিছু চিঠি এবং দুইটা বইয়ের পান্ডুলিপি উদ্ধার করে পুলিশ।
আরো পড়ুন : দাঁতের ব্যথা-বাতের ব্যথা নিরাময় হবে সজনে ডাঁটায়!
ধলঘাটে ছবি পাওয়ার পর ১৯ জুন পুলিশ প্রীতিলতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২২ জুন এস.আই শৈলেন্দ্র সেনগুপ্ত এর নেতৃত্বে ওই বাড়িতে আরেক দফা তল্লাশি চালায়। তার নির্দেশে আশে পাশের সব জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয়। জঙ্গল আর আশেপাশের পুকুর থেকে অনেক কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। তল্লাশি অভিযানে কাজিন পরিচয় দিয়ে অমিতা দাশের (প্রীতিলতার) আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির আসামি রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎতের ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। হাতের লেখা মিলানোর জন্য প্রীতিলতার বাসা থেকে পুলিশ তার একটি গানের বই নিয়ে যায়। মাষ্টার দায়ের নির্দেশে প্রীতিলতা তখন আত্মগোপনে চলে যায়। ছাত্রী পড়ানোর কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়।
প্রীতিলতার বাবা অনেক খুঁজেও মেয়ের সন্ধান না পেয়ে থানায় যান। পুলিশ তখন কল্পনা দত্তের বাড়িতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কল্পনা দত্ত সেই ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লিখেন, “আমাদের বাসায় এসে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর বলেঃ এত শান্তশিষ্ট নম্র মেয়ে ও, এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, ভাবতেও পারি না তার ভিতর এত কিছু আছে! আমাদের খুব ফাঁকি দিয়ে সে পালিয়ে গেল।”
আরো পড়ুন : মাড়ি থেকে রক্ত পড়ছে? জানুন সমাধান
চট্টগ্রাম শহরে কিছুদিন অবস্থান করে প্রীতিলতা পড়ৈকড়া গ্রামের রমণী চক্রবর্তীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বিপ্লবীদের আরেক গোপন আস্তানা এই বাড়িটার নাম ছিল “কুন্তলা”। মাষ্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদার তখন সেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ১৯৩২ সালের ১৩ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রীতিলতাকে নিয়ে প্রকাশিত হয় , “চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ধলঘাটের শ্রীমতী প্রীতি ওয়াদ্দাদার গত ৫ই জুলাই, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহর হইতে অন্তর্ধান করিয়াছেন। তাঁহার বয়স ১৯ বৎসর। পুলিশ তাঁহার সন্ধানের জন্য ব্যস্ত”।
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করা। সেদিন আবার ছিল গুড ফ্রাইডে। তাই সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। পাহাড়তলী সেই স্টেশন ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। শ্বেতাঙ্গ এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া আর কেউ সেই ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না। ক্লাবের সামনের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল “ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড”। চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে সেই ক্লাবেরই একজন বেয়ারা যোগেশ মজুমদারের বাড়িতে বিপ্লবীরা আশ্রয় পেলেন।
১৯৩২ এর ১০ আগষ্ট ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দিন ঠিক করা হয়। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাতজনের একটা দল আক্রমন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। শৈলেশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ক্লাব আক্রমণ করার পর তিনি আত্মবিসর্জন দিবেন। পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
আরো পড়ুন : কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মানুন কিছু বিষয়
১৯৩২ এর সেপ্টেম্বর মাসে মাষ্টারদা আবার ক্লাবে হামলা করার পরিকল্পনা করেন। এই আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নারী বিপ্লবীদের দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। প্রীতিলতার উপর আক্রমণের দায়িত্ব পড়ে।
সেদিন মানে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী। চুল ঢাকার জন্য মাথায় সাদা পাগড়ি, পায়ে রবার সোলের জুতা। পাঞ্জাবীদের কোয়ার্টারটা ঠিক ইউরোপীয় ক্লাবের পাশেই ছিল। কোয়ার্টারের পাশ দিয়ে যেতে হবে বলে পাঞ্জাবি ছেলেদের মতো পোশাক পরতে হয়েছে। আক্রমণে অংশ নেয়া কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী পোষাক ছিল ধুতি আর শার্ট। লুঙ্গি আর শার্ট পরে ছিল মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন ।
রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ এর দিকে বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার আক্রমণের নিশানা দেখানোর পর আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন শনিবার ছিল এবং প্রায় ৪০ জন মানুষ সেই ক্লাবে অবস্থান করছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে বিপ্লবীরা আক্রমণ শুরু করে। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে উঠে। ক্লাবের সকল বাতি নিভে যায়। অন্ধকারে ছুটোছুটি শুরু হয়। ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার ছিল। তারা পাল্টা গুলি করলে প্রীতিলতার বাঁ-পাশে গুলির আঘাত লাগে। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিনের আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত হয় এবং চারজন পুরুষ এবং সাত জন নারী আহত হয়।
আরো পড়ুন : গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে প্রীতিলতার লাশ পাওয়া যায়। তার মৃতদেহ তল্লাশি করে বিপ্লবী লিফলেট, অপারেশনের পরিকল্পনা, রিভলবারের গুলি, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটা হুইসেল পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাতে নয়, পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে তার মৃত্যু হয়।
প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তার পরিবারের অবস্থা নিয়ে কল্পনা দত্ত লিখেছেন, “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে’। তাঁদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখেকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে নিয়েছেন, আজো তাঁদের সেভাবে চলছে। প্রীতির বাবা প্রীতির দুঃখ ভুলতে পারেননি। আমাকে দেখলেই তাঁর প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন। ”
নোট : এই লেখাটা লিখতে উইকিপিডিয়া এবং অনেকগুলো ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়েছি। বেশ কিছু লাইন ওদের থেকে সরাসরি এড করা হয়েছে।