`আমার ঘর`
- সুমনা বাগচী
- এপ্রিল ১৩, ২০২১
ঘর কথাটি এলেই মনে ভিড় করে একরাশ সাজানো অনুভূতি। যাতে ভালোবাসার স্পর্শ আছে, যাতে অভিমান আছে আর যার মধ্যে তিলে তিলে করে বেড়ে উঠেছে মায়া ও আগলে রাখার ভরসা। আমরা একটা বাড়ি কে ঘরের রুপ দিয়ে সাজাই আর সেটা ছোটো ছোট মুহূর্তকে কেন্দ্র করে। বাড়ি মানেই নানান তার পরিভাষা। কখনো সেটা অট্টালিকা, কখনো সেটা দম্ভের প্রকাশ, কোথাও মাটির বাড়িতে শীতল অনুভূতি।
একটা বাড়ি তখনই ঘর হয় যখন তার মধ্যে নিরাপত্তা বিশ্বাস ভালোবাসা আর আস্থার জন্ম নেয়। আমাদের মেয়েদের বাড়ি নিয়ে অনেক লেখা আর আমাদের অনুভূতিও জড়িয়ে আছে। কোথাও আমার বাড়ি কথাটির মধ্যে উচ্চারণ করতে গেলে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে করতে হয়।বাস্তবে কি সত্যি আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি আছে? বাপের বাড়ি,শ্বশুর বাড়ি,স্বামীর বাড়ি আর ছেলের বাড়ির মধ্যে আটকে থাকে আমাদের জীবন। যে বাড়ি গুলি পরম মমতায় ভালোবাসায় সাজিয়ে ঘর তৈরি করি আমরা,হটাতই কঠিন শব্দে হৃদয় ভেঙে যায়।
আরো পড়ুনঃ মায়ের জিন থেকেই শিশুর বুদ্ধি বিকশিত হয় !
খুব সহজ তখন বলা,বেরিয়ে যাও,থাকতে দেবো না,আমার বাড়ি,আর আমার পারমিশন ছাড়া ঢুকতে পারবে না। আসলে আমরা মেয়েরা কোনো দিন একবারের জন্য ভাবি না নিজেদের জন্য কিছু করা উচিত।নিজেদের ভালো রাখা উচিত।কোথাও সব টুকুই কাছের মানুষদের ভালো রাখার উদ্দেশ্যে নিজেদের সত্তা হারিয়ে যায়। কন্যা ,স্ত্রী, মা এই শব্দ গুলোর মধ্যে আটকে থেকে চলতে হয় আমাদের।এর বাইরে একটা জগতে প্রবেশ করা মানেই তুমি ব্যভিচারী অথবা তোমার চারিত্রিক ত্রুটি আছে।
আজও সমাজে তথাকথিত শব্দ হলো, স্বামী ছেড়ে চলে গেছে কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা, বাবার বাড়ি দেখে না কিংবা ছেলে মেয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছে। কথাগুলি বলা খুব সহজ,কিন্তু এই মহিলা একদিন সকল কে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল,ঘর কে সাজাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসার অনুভূতি তে।ছোটো ছোটো ত্যাগ,ইচ্ছার কবর দেওয়া সব কিছুই ছিল তার পরিবার ঘিরে।কিন্তু সময় আজ তা মনে রাখেনি। কোথাও বিশেষ চরিত্র পালন করতে করতে সে আজ শুধুই একটা চরিত্র।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ এবং প্রতিকার
যার নাম নেই, যার কোনো পরিচয় নেই শুধুই একটা আসবাব পত্র। ঠিক বাড়িতে যেমন এক কোণে পড়ে থাকে। আসলে কোথাও আমরা বড্ড আগলে রাখতে চাই,কোথাও এতটাও নাটক করতে পারি না,ভালোবাসার প্রকাশ যেমন মন থেকে হয় আর ঘৃণার প্রকাশও তাই। তাতে কোনো রাখঢাক রাখতে চাই না। ঝগড়া করেও,মাছের কাঁটা বেছে দেওয়া, জামা কাপড় গুছিয়ে দেওয়া কিংবা ফোন করে খবর নেওয়া সব কিছু কিন্তু নাটকের পর্যায় পড়ে না। আসলে এই মন টাকে সবাই বুঝতে চায় না।
নাটক করে সারাজীবন অন্যের কাছে ভালো সাজা যায় না, যবনিকা একদিন ঠিক পড়বেই। তবে কঠিন তখনই মনে হয়,যখন অস্তিত্ব শুধুই প্রয়োজনের হয়ে দাড়ায়। আবার প্রয়োজন শেষ হলে সেই অধ্যায় শেষ হয়ে যায়।কিন্তু শেষ হয় না আমাদের অনুভূতি,ভালোবাসা আর তার প্রকাশ।
আজ আমাদের ঘর নিয়ে লিখতে লিখতে মনে হচ্ছিল,তুমি যতোই শিক্ষিত হও যতোই রোজগার করো না কেনো,মেয়েদের নিজের একটা ছোটো ঘরের অবশ্যই প্রয়োজন। তাতে ঝাঁ চকচকে প্রকাশ না হলেও কোথাও এক টুকরো শান্তি থাকবে। শুনতে হবে না,আমার বাড়িতে তোমার ঢোকার কোনো অধিকার নেই। আসলে আমরা মনুষ্য জাতি অধিকার বোধ কে প্রকাশ করি দম্ভ দিয়ে।তাতে অন্য মানুষের যে যন্ত্রণা হয় সেটা বোঝার অধিকার অন্য মানুষের থাকে না। তাই মেয়ে তুমি....
আরো পড়ুনঃ স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কেমন হওয়া উচিত ?
নিজের জন্য বাঁচো। অনেক হলো তোমার ত্যাগ,তোমার প্রকাশ আর তোমার আগলে রাখা। এর পাশেও ভুলে যেও না তুমিও একজন মানুষ,ভালো ভাবে বাঁচার অধিকার তোমার আছে আর এই অধিকার টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি না... সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার...