`মা`
- সুমনা বাগচী
- মে ১৬, ২০২১
মাতৃ দিবসের বেশ কিছু দিন পর কলম ধরলাম এই বিষয়ে কথা বলতে। আমরা সামাজিক জীব তাই আনন্দ, ভালোবাসা সব কিছুর জন্য জীবনের প্রত্যেক মুহূর্ত কে সাজিয়ে রাখতে চাই। তাই জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, মাতৃ দিবস , পিতৃ দিবস আরো নানান দিন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আনন্দ করি, দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলি। আজ অবশ্যই মা দের নিয়ে কথা বলবো, কিন্তু একটু অন্যরকম অনুভূতিতে।পৃথিবীতে সব থেকে নিরাপদ আশ্রয় হলো মা।
যেখানে নিরাপত্তা,ভালোবাসা,ভরসা ও বিশ্বাসে ভরা থাকে। মা দের আমরা সবাই সুপার ওমেন মনে করি। অর্থাৎ মা মানেই সে সব কিছুর সমাধান, সব কিছু করার ক্ষমতা রাখে।সন্তান জন্ম দেবার সাথে সাথেই আমরা আপাত দৃষ্টিতে মা হয়ে গেলেও,প্রত্যহ ছোটো ছোটো মুহূর্ত গুলো কে একত্র করে একজন নারী মা হয়ে ওঠেন। তাকে কোনো দিন আগে কেউ এই মা হবার ট্রেনিং দেন নি। প্রত্যেক দিন শিশুর সাথে সাথে তিনি নিজে অভিজ্ঞতা কে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেন।
আরো পড়ুনঃ যেভাবে শিশুর ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলবেন
কিভাবে কোলে নেবেন, কিভাবে তাকে খাওয়াবেন, কিভাবে তাকে যত্ন করবেন, সারা রাত জেগে তার পরিচর্যা করবেন এভাবেই সময়ের সাথে সাথে আসে মাতৃত্বের পূর্ণতা।আগে কার দিনে কোনো দিন মা দের নিয়ে এতটা ভাবা হতো না। শুনতে হতো মা হয়েছ দায়িত্ব করতে বাধ্য।যদিও আজও এই অবস্থা থেকে নারীদের সেরকম পরিবর্তন হয় নি।বাড়ির কাজ বাইরের কাজ সামলে তাকে মায়ের দায়িত্ব করতেই হবে।
কারণ তিনি যে জন্ম দিয়েছেন।তাই পেটে, কাটা ছেরার যন্ত্রণা সাথে নিয়ে, অনিদ্রা আর ঠিক মত খাবার না খেয়েও তাকে মায়ের দায়িত্ব করতেই হবে।কারণ সে যে মা।কিন্তু মায়ের কথা আমরা কত টা ভাবি? কি ভাবি? শুধুই কি মাতৃ দিবস? মায়ের কি মন নেই? তার কি ভালো থাকার দায়িত্ব নেই? নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নেই? সারাজীবন সমাজের বেড়া জালে জড়িয়ে থাকা মা এই খেতাব টি তার জন্যই বরাদ্দ??একজন বাবা তার সন্তান কে ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক মধ্যরাতে কিংবা ভোরেই কেন হয়?
শুধু টাকা দিয়ে দায়িত্ব করতে পারেন। আর সেই মা? তার মন খারাপ হলেও সন্তানের জন্য তার পছন্দের রান্না করতে হবে, পড়াতে হবে।কেউ কি ভাবে তিনি মা হবার আগে একজন মানুষ।তার ভালো লাগা না লাগার গুরুত্ব আছে।দায়িত্ব কি তার একার? হতে পারে যে মুহূর্তে তাকে কাজ করতে হবে সেই সময় তার ইচ্ছা হচ্ছে না কিংবা মন খারাপ,শরীর খারাপ।কিন্তু যেহেতু সে মা সে তার সন্তান কে দেখতে বাধ্য? সমাজ একজন নারী কে খুব সহজে বিচারের তকমা লাগিয়ে দিতে পারে।দেখ দুই ছেলের মা তার সাজ কেমন,দেখ কেমন করে সেজেছে, চাকরি করছে তাই কতো অহংকার।
এক্ষেত্রে বলবো আরেক জন মা অর্থাৎ নারী তাকে বিচারের কেন্দ্র বিন্দু করছে।আর মজাও পাচ্ছে।আর পুরুষ? কোথাও মাঝে মাঝে বিচার বুদ্ধি হীন পদার্থে রূপান্তরিত হয়।সব জেনে বুঝে তারা চুপ।নিজের স্ত্রী কে মর্যাদা দিতে পারে না।কিন্তু এরা এক অন্য মায়ের সন্তান। খুব অদ্ভুত উদাহরণ তাই না? সন্তান জন্মানোর পর পোস্ট পর্টাম ডিপ্রেসন বিষয়ে এখন সচেতনতা অনেক বেশি।কিন্তু বেশ কিছু বছর আগেও মেয়েদের মন খারাপ নিয়ে কেউ ভাবতো না।
সে মা মানেই শক্তিশালী সব পারে।কিন্তু তার মন তার শরীর কি চায়? সে তো বিশ্রাম পেতে পারে? অদ্ভুত সমাজ আর অদ্ভুত তার বিচার ব্যবস্থা। একজন মা যে সবার আগে একজন মানুষ সেটা কে ভাবে? মাঝে মাঝে মনে হয় মা দের কোনো চাহিদা থাকতে পারে না। মানে no expectations.. স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে expectation থাকবে না আবার মা হবার পর থাকবে না।সে শুধুই রোবট। মানে সবার মন রাখো,দায়িত্ব করো কিন্তু আশা করো না।
আরো পড়ুনঃ হাঁটু এবং পায়ের যে কোনো ব্যথা দূর করার উপায়
যে নারী তার স্বামীর হাতে মার খেয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না এনে তার দরকারে নিজের অর্থ অলঙ্কার হাতে তুলে দিতে পারে,যে নারী তার স্বামীর জন্য ভালো খাবার বানিয়ে এমন কি ভাত মেখে খাবার মুখে তুলে দিতে পারে আর তার বিনিময়ে গঞ্জনা,মিথ্যাচার আর মানসিক অত্যাচার সহ্য করে,শ্বশুর বাড়িতে অত্যাচার সহ্য করে তার প্রতিবাদ করেও সেই ননদ শাশুড়ি অর্থাৎ নারী দ্বারা শোষিত হন।সেখানে সমাজ কি দেখে? আর শেখায়?
যখন স্বামী কাপুরুষের মত অন্যায় করে স্ত্রী সন্তান ফেলে রাতের বেলা নিজের বাড়ি অর্থাৎ কমফোর্ট যোন এ চলে যান শুধুই নিজের স্বার্থের জন্য,সেখানে একজন মা ঝড় এলেও তার সন্তান কে ছাড়তে পারেন না। আসলে মানুষ নিজের স্বার্থ দেখে।তার জন্য সব কিছু করতে পারে।অর্থাৎ ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলা।কিন্তু একজন মা ব্যবহৃত হয়েও সন্তানের জন্য সব কিছু সহ্য করেন।
আরো পড়ুনঃ শিশুকে হাঁটতে শেখানোর সঠিক নিয়ম জানুন
একবার সবাই ভেবে দেখুন না মায়েদের মন আছে, আশা আছে তাদের যন্ত্রণা আছে।তারা রক্ত মাংসের শরীর।তাদের আঁচড় লাগল ব্যাথা করে।সমাজ একপেশে ভাবনা নিয়ে থাকে। তবে আমরা মানুষ আমরাই সমাজের সৃষ্টি কর্তা।তাহলে কি আমরা নিজেদের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাতে পারি না? বলতে পারেন কি? সব দায় কি মায়েদের?