`নারী তোমায় বাঁধি সমাজের ভাবনার শিকলে`
- সুমনা বাগচী
- মে ২১, ২০২১
নারী বাদী বিষয়টি বহুদিন থেকে চর্চিত। সভ্যতার শুরুর থেকে বর্তমান পরিস্থিতির মাঝে নারীর উন্নয়ন হলেও কোথাও যেনো আজও সমাজের ভাবনার শিকলে আটকে আছে নারীর সত্তা। অনেকেরই মনে হতে পারে নারী বাদী মানেই সমাজে এক জায়গায় নারী আর অপর জায়গায় পুরুষদের মধ্যে ভেদাভেদের গল্প। কিন্তু আসলে তা কখনোই সত্যি নয়। এক নারীর দ্বারা অপর নারী শোষিত নির্যাতিত হতে পারে। তাই এক পেশে ভাবনার বিরুদ্ধে আমি। সমাজ আজ অনেকটাই বদলে গেছে।
ভাবনা চিন্তা শিক্ষা তে নারী আজ অনেক বেশি অগ্রসর। কিন্তু কোথাও যেনো বাঁধ সাধে সমাজের কিছু ভাবনা ও মানসিকতা। আসলে এই সমাজ গঠন কিন্তু আমরাই করেছি, পরিবেশ গঠন কিন্তু আমরাই করেছি। তাও এত কিছু উন্নতি সাধনের পরেও নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে সমাজ আসে। ভেবে দেখুন কিছু গতানুগতিক ভাবনা চিন্তা। বিবাহ অবশ্যই আমাদের কাছে একটি পবিত্র সম্পর্ক। আর অবশ্যই এই সম্পর্ক কে স্বাভাবিক রুপ দিতে প্রয়োজন নারী ও পুরুষের সমান প্রচেষ্টা। সেখানে শুধু নারী টেকেন ফর গ্র্যান্টেড নয়। কি অদ্ভুত নিয়ম তাই না? শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে সকলের মন জয় করতে হবে অ্যাডজাস্ট করতে হবে অপমান সয়ে চলতে হবে আর কিছু প্রতিবাদ করলেই সমাজ বলবে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা আমের মিষ্টি আচার
যে সয় সে রয়! একটা লাইনের ভিত্তিতে সে তার সারা জীবন কাটিয়ে দেবে। প্রত্যেক ধর্ম তে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন আর তার অনুষ্ঠান যথেষ্ট সম্মানের সাথে পালন করা হয়। হিন্দু ধর্মে যেমন সপ্তপদী, অগ্নী সাক্ষী,আর অনেক অনেক পবিত্র মন্ত্রের উচ্চারণ। আর তার পবিত্রতা রক্ষা করা কি শুধুই নারীর কাজ? আজকাল শিক্ষিত আর চাকুরীরত বউ দের অনেক সম্মান। হ্যা অর্থ উপার্জন করতে পারছে তো? স্বামী কে সাহায্য করবে তো? আর না করলেই সে মহান পাপী। সে যতোই যাই করুক, পুরুষ অবিচল ভঙ্গি তে বলে দিতে পারে,তোমার দায়িত্ব নেবো না। বাহ্ আর তাহলে সেই ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নেওয়ার কথা? সেটা কি মিথ্যা ছিল?? তাহলে বিবাহ পবিত্র,অবিচ্ছেদ্য বন্ধন কোন কথা টা ঠিক? নাকি সব টা বানানো আর মানুষের মন জয়ের বিষয়।
নারী তুমি যন্ত্রণা পাও কষ্ট পাও তাও তোমার শ্বশুর বাড়ি যে স্ব সম্মানে রাখতে হবে। তারা যাই যন্ত্রণা দিক লোকের সামনে মুখোশ পড়ে চলতে হবে। কোনো দিন মনের কথা বন্ধু কে বললে কিংবা যন্ত্রণা গুলো লিখে মন থেকে মুছতে চাইলে তোমার মত পাপী আর কেউ নেই যে। সেখানে দেখবে যে মানুষটার জন্য তোমার সব কিছু সেও সুযোগ পেয়ে পাল্টি খেয়েছে আর অবশ্যই সেটা নিজের সুবিধার জন্য। এতদিন নিজের পরিবার, নিজের বাবা মা ভাই বোন নিয়ে যা যা বলেছে তা মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়ে তোমায় ছোটো করতে সে একবারও ভাবলো না। তোমার একটা ব্যাক্তিগত জগৎ হোক, পরিধি হোক সেখানে সবাই কে টেনে এনে কি করছো দেখাতে হবেই।এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া এর প্রভাব খুব বেশি।
আরো পড়ুনঃ সন্তান কথা শোনে না? কোন নিয়মই মানতে চায় না? সমাধান জানুন
তুমি কি করছো, কোথায় যাচ্ছ কি খাচ্ছো আর কি লিখছো সেটা সবাই কে জানাতে হবেই। না হলেই তুমি সমাজের চোখে নষ্ঠ।খুব অদ্ভুত লাগে তাই না? সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগে কোনো দিন সোশ্যাল মিডিয়া এর পরিচয়ে আসা হয় নি। চিঠি আর ল্যান্ড ফোনের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ পেলেও আজ সকলের সামনে আনতে হবেই। কেনো নিজের কি কোনো ব্যাক্তিগত জায়গা থাকতে পারে না? স্বামী যখন লুকিয়ে চুরিয়ে অনেক কাজ করেন, নিজের ইচ্ছা মত জীবন চালান, বান্ধবীদের সাথে সময় কাটান কথা বলেন কিংবা ফেস বুকে সুন্দরী নারীর হাতছানি দেওয়া ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেটা কতো টা ঠিক না ভুল না জেনেও অ্যাকসেপ্ট করে সেখানে কোথায় ভুল? আর কিছু মানুষের কাজ না থাকার জন্য নিজেরাই ডিটেকটিভের ভূমিকা গ্রহণ করেন।
সমাজে নিজেদের একটু উচ্চ আসন আর আদর্শ বাদী দেখিয়েও কোথাও মানুষের পিছনে সময় ব্যয় করতে আগ্রহী হন আর এরা কোনো বিশেষ জাত ধর্ম বর্ণ নয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই হয়। নারী মানেই তার কোনো বন্ধু হবে না, সে মনের কথা যন্ত্রণার কথা বলতে পারবে না, বুকে যন্ত্রণা আর অবিচার চেপে রেখে একটা ভাবলেশহীন মূর্তি ধারণ করবে সেই কি আদর্শ নারী? সমাজ নারী কে ঠিক কি ভাবে দেখতে চায় তা তারা নিজেরাই জানে না। নারীর আরেক সত্তা সে শরীর। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম নেই সেখানে।স্বামীর তৃপ্তি তেই তার তৃপ্তি। তার ইচ্ছা হতে পারে না প্রকাশ হতে পারে না। উল্টে ম্যারিটাল রেপের শিকার হয়েও চুপ থাকতে হবে, বাধ্য হয়ে যন্ত্রণা সহ্য করে অবর্শন করতে হবে। আর পুরুষের ইচ্ছা পূরণ না হলেই তাকে শুনতে হয় যন্ত্রণা ভোগ।
আরো পড়ুনঃ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ফুসফুস পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানুন
কি সমাজ তাই না,যেখানে ভালোবাসার প্রকাশ স্পর্শে হতে পারে,অনুভূতিতে হতে পারে। আর সেখানে স্বামীর স্পর্শ মানেই শুধু চাহিদা? ভেবে দেখুন তো, এই রকম মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের শিকার হয়েও সম্পর্ক বাঁচাতে অনেক নারী কে বলি হতে হয়। কারণ সত্যি কথা বলা যে পাপ। যন্ত্রণা ভুলতে সে বন্ধুত্ব করতে পারবে না, কাউকে মনের কথা বলতে পারবে না বললেই সে সমাজের চোখে অপবিত্র? কি নিয়ম তাই না? আচ্ছা এই নিয়ম কোন ধর্ম শাস্ত্রে আছে? আমার তো জানা নেই। নারী মানেই পুরুষের মন ভালো রাখতে হবে, তার জন্য যা খুশি করতে হবে। তার পর সন্তান পালন করতে হবে তাকে বড়ো করতে হবে। যেনো পৃথিবীতে তাকে আনার দায়িত্ত্ব একা নারীর। আর মনে রাখবেন এই ধরনের কুটিল আর জটিল ভাবনার উদ্যোক্তা কিন্তু আরেক নারী। যারা লোক চোখের সামনে অতি ভদ্র সভ্য আর বিশিষ্ট সামাজিক জীব। কিন্তু অপর নারীর উপর অত্যাচার করে তারাও তৃপ্তি লাভ করে।
সমাজের যত অতল গভীরে যাবেন,প্রত্যেক মুহূর্তে অনেক নতুন কিছু পাবেন। নারী হৃদয় বোঝা সম্ভব না। যে নারী মার খেয়েও সংসার বাঁচাতে স্বামী কে বাঁচিয়ে দেয়, পরে প্রতিবাদ করলে সেই বেঁচে যাওয়া স্বামী মিথ্যা অবিচার করে তাকে ছোটো করতে পিছপা হয় না। যে নারী চেষ্ঠা করেও মন জয় করতে পারে না স্বামী বা অন্যান্যরা তা দেখে বুঝেও বোবা সাজতে ভালোবাসে।
আরো পড়ুনঃ যেভাবে শিশুর ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলবেন
যে নারী নিজে অত্যাচারিত ও অনেক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সময় হটাৎ তার চারিত্রিক গুণাবলী বদলে দিয়ে অন্য নারীর প্রতি অত্যাচার করে মানসিক সুখ পাবার চেষ্টা করে। অনেক কিছুই প্রমাণ করা যায়,অনেক কিছু সামনে আনা যায়। কিন্তু সমাজ তো অন্ধ, আমরা অন্ধ! চোখ মেলেও কিছু দেখতে পাইনা, শুনতে চাই।