আপনি অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়েন ?
- ফারজানা আক্তার
- মে ২৬, ২০২১
এই গল্পটা আরব দেশের। দুই ভাইকে নিয়ে। দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই ছিলেন কাফের, অন্য ভাই ছিলেন ধার্মিক। পেশায় দুই ভাই জেলে। প্রতি রাতে দুই ভাই দুইটি আলাদা আলাদা নৌকায় করে মাছ ধরতে যেতেন। যে ভাই কাফের ছিলেন তার জাল ভর্তি মাছ উঠতো।
অন্যদিকে ধার্মিক ভাইয়ের জালে নামমাত্র মাছ উঠতো। সেই মাছ বিক্রি করে সংসার চালানো তার জন্য খুব কঠিন ছিলো। যেহেতু কাফের ভাইয়ের জাল ভর্তি মাছ উঠতো, সেই মাছ বিক্রি করে অল্প সময়ে তার দিন ঘুরে গেলো। বাড়ি ঘরের চেহারা বদলে গেলো। তার বউ সারাক্ষণ ল গা ভর্তি গহনা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দামি দামি শাড়ি পরে।
আরো পড়ুন : গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে আবার কি হতে পারে?
সেসব দেখে ধার্মিক ভাইয়ের বউয়ের মন খারাপ হয়ে গেলো। সেও তার স্বামীর কাছে দামি শাড়ি, গহনার আবদার করে। কাফের ভাইয়ের সাথে মিলে মাছ ধরার জন্য জোর করতে লাগলো। কিন্তু ধার্মিক ব্যক্তি কিছুতেই সেদিকে কর্নপাত করলো না।
একদিন ধার্মিক ভাইয়ের বউ খুব রেগে গিয়ে ডিভোর্স চাইলো। এতো অভাবের মাঝে সে আর সংসার করতে পারবে না সোজা বাক্যে জানিয়ে দিলো। সেদিন ধার্মিক ব্যক্তির খুব মন খারাপ হলো। সে বাড়ি থেকে বের হয়ে দূরে এক নদীর পাড়ে বসে সারাদিন ইবাদত করে কাটালো।
আরো পড়ুন : জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে ওজন বাড়ে, এটা কি সত্যি?
সন্ধ্যায় বাড়ি আসার পর তার বউ জানতে চাইলো সারাদিন সে কোথায় ছিলো! ধার্মিক ব্যক্তি উত্তর দিলো সে দূরের এক রাজার দরবারে কাজ নিয়েছে। রাতে মাছ ধরবে, আর দিনে রাজার দরবারে কাজ করবে। তাদের আর অভাব থাকবে না। এই কথা শুনে বউ খুব খুশী হলো। এভাবে প্রতিদিন রাতে তিনি মাছ ধরেন, আর দিনে সেই নদীর পাড়ে ইবাদত করেন। প্রতিদিন তার বউ তার কাছে টাকার কথা জানতে চায়। তিনি প্রতিদিনই উত্তর দেন এইতো আজ দিবে, কাল দিবে!
এভাবে ২৯তম দিনে বউ আবার রেগে গিয়ে ডিভোর্স চাইলো। সেদিন ধার্মিক ব্যক্তি সেই নদীর পাড়ে না গিয়ে শহরে যান কাজের জন্য। এক হোটেলে কাজ নেন। দিনশেষে সেদিনের পারিশ্রমিক নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে দেখেন তার বউ বেশ হাসিখুশি। বউ হাসিমুখে তাকে জিজ্ঞেস করলো সে আজকে সারাদিন কোথায় ছিল!
আরো পড়ুন : সুজির চকলেট হালুয়া রেসিপি
রাজার দরবারে কাজে যায় নি কেন! ধার্মিক ব্যক্তি কিছুই বুঝতে পারলেন না। তিনি তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার বউ হাতের কাজ করতে করতে তাকে বললেন। বিকেলে রাজার দরবার থেকে লোক এসেছিলেন। তোমার ২৯দিনের পারিশ্রমিক দিয়ে গেছেন। আর বলে গিয়েছেন তুমি যদি আরেকটুঁ ধৈর্য নিয়ে আরেকটা দিন কাজে যেতে তাহলে তোমার জন্য বিশেষ উপহার ছিল। তুমি ধৈর্য হারা হয়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে ভুল করে ফেললে।
লোকটি তাড়াতাড়ি ওজু করে নামাজে দাঁড়ালেন। অধৈর্য্য হওয়ার জন্য লজ্জিত হলেন। ২৯দিনের পারিশ্রমিকের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন আর তার অসীম ধৈর্যশক্তি বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দোয়া করলেন। আমরা যেমন আল্লাহর কাছে দোয়া করতে করতে অধৈর্য্য হয়ে পড়ি, তেমনি কোন কাজে সফলতা না পেলেও অধৈর্য্য হয়ে পড়ি।
ভিডিওটি দেখতে ভিজিট করুন : মেয়েদের কেন নিজের একটা বাড়ি হয় না ?
অথচ দেখা যায় দোয়া হয়তো এইতো কবুল হওয়ার পথে, অথবা এই বুঝি সফলতা আসলো ঠিক তখনই আমরা হাল ছেড়ে দেই। ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুব কঠিন। আমি হয়তো দুই লাইনে খুব সহজে লিখে দিলাম, অথবা কেউ হয়তো খুব সহজে মুখে বলে দিলো।
কিন্তু যে কঠিন সময় পার করে সে বুঝে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা কতটা কঠিন। সে বুঝে ঠি-ক ক-ত-টা ক-ঠি-ন। আল্লাহ আমাদের কঠিন সময় সহজ করে দিক। আমাদের ধৈর্যশক্তি বাড়িয়ে দিক। সবার জীবন শান্তিময় হোক।