`আমাদের পরিবার প্রথা ও বিষাক্ত প্যারেন্টিং`
- তামান্না ইসলাম
- মে ২৬, ২০২১
একটা মেয়ের সুইসাইড করেছে। অভিযোগ উঠেছে মেয়েটা তার মায়ের কাছ থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতো। গত কয়েক মাসে আমি এমন বেশ কিছু ঘটনার বিষয় জেনেছি যেখানে পারিবারিক কলহের কারণে সন্তানেরা নিজেদের জীবন নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
পারিবারিক কলহ একটা স্লো পয়জন। আমাদের দেশে কী পরিমান ছেলেমেয়েরা তাদের পারিবারিক কলহের কারণে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে সেটার কোন সঠিক সমীক্ষা আছে বলে আমার মনে হয় না। যারা এই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না তাদের আমরা বিভিন্ন সংবাদের শিরোনাম হতে দেখি।
আরো পড়ুনঃ আপনার ওজন বাড়াবে প্রতিদিনের যে খাদ্য তালিকা !
আর যারা এসব মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করে টিকে যায় তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ফাদার্স ডে/মাদারস ডে তে বাবা-মায়ের সাথে ছবি আপলোড দিয়ে লেখে 'বেস্ট ফাদার অর বেস্ট মাদার ইন দিস ওয়ার্ল্ড'!
আমাদের এই জেনারেশনের মাথায় খুব ছোটবেলা থেকে একটা কথা খুব যত্ন করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে - 'দিনশেষে বাবা মা ছাড়া আর কেউ আপন হয় না। পরিবার ছাড়া দুনিয়াতে আর কেউ আপন না' যদিও পারিবারিক কলহযুক্ত পরিবারের অভিভাবকরা তার সন্তানদের কাছে কতটুকু আপন হতে পারে সেই বিচার করবার জন্য কেউ আদালতে যাবে না।
ইউটিউবে আমি দুটো চ্যানেল ফলো করি। একটা storybooth আরেকটা Psych2Go. Psych2Go চ্যানেলটাতে মেন্টাল হেলথ নিয়ে অনেক অনেক উপকারী ভিডিও দেওয়া আছে। আর টক্সিক প্যারেন্টিং এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়েও অনেক ভিডিও আছে। storybooth যে চ্যানেল টা ফলো করি সেখানে আউট কান্ট্রির কিছু ভিডিও এমন আছে, বাবা মা যদি সন্তানের সঠিকভাবে দেখাশোনা না করে, মেন্টাল টর্চার করে কিংবা ফিজিক্যাল টর্চার করে, সেক্ষেত্রে সন্তান চাইলে আইনের সহায়তা নিতে পারে। কোন বাবা মা যদি সন্তানের ভরণপোষণ ব্যর্থ হন তাহলে আইনগতভাবে সন্তানটিকে অন্য কোন সামর্থ্যবান পরিবারে দত্তক দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ কাঁচকলা ও ইলিশ মাছের ভর্তা
একটু খেয়াল করে দেখবেন ইউরোপ কান্ট্রি গুলোতে একটা নির্দিষ্ট বয়স পরে ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়। তারা নিজেদের খরচ নিজেরা বহন করে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এটা ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর আমাদের দেশে একটা ছেলে চাকরি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত তার বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে। একটা মেয়ে চাকরি করলেও বিয়ের আগ পর্যন্ত তার বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে। এই নির্ভরশীল থাকার প্রথা আমাদের আসলে মানসিকভাবে পঙ্গু বানিয়ে রেখেছে। আমাদের অভিভাবক আর সন্তানের মাঝে জেনারেশন গ্যাপ স্পষ্ট। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেই তা মানতে নারাজ।
তাই বিভিন্ন সময়ে যারা পারিবারিক কলহ থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন সাজেশন চান তাদের বেশিরভাগেরই প্রশ্ন থাকে কিভাবে আমার পরিবারকে মানিয়ে চলতে পারি বা কিভাবে আমার পরিবারের মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব...
আরো পড়ুনঃ আপনার চুলের খুশকি দূর করুন এখনই
শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি টা হচ্ছে টক্সিক পরিবারের মানসিকতার পরিবর্তন আদৌ সম্ভব কিনা সেটা বলা কঠিন। আর আমাদের সেই ছেলেবেলা থেকে পাওয়া শিক্ষা "পরিবারই সব", এই থিউরির কারনে প্রতিদিন টক্সিক পরিবারের সন্তানগুলো না পারছে মানিয়ে নিয়ে চলতে, না পারছে ছেড়ে চলে যেতে। এমন পরিবারের সন্তানেরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে রোজ। এমন একটা/দুটো আত্মহত্যা তাই বড়জোর আলোচনার টপিক হতে পারে। আমাদের অভিভাবকদের দম্ভ, মানসিক দৈন্যতা দূর হতে আরো কতো সময় লাগবে সেটা অজানাই থাকে।