তিন কবুল বলা সহজ, কিন্তু সত্যিকার অর্থে স্বামী হয়ে উঠা কঠিন।
- ফারজানা আক্তার
- জুন ২২, ২০২১
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ের সময় পাত্রীকে পাত্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়। একজন মেয়ে তার নিজের আপনজন, চেনা ঘর ছেড়ে নতুন পরিবেশকে নিজের আপন ঘর বানিয়ে সারাজীবন থাকবে বলে আসে। নিজের ঘরে মানুষ যেভাবে থাকতে চায় বা স্বপ্ন দেখে সেটা কি সত্যিকার অর্থে সব মেয়ের ভাগ্যে জুটে ?
পাত্রীর বাবা - মা নিজের হাতে নিজের মেয়েকে পাত্রের হাতে তুলে দেয়। নিজের মেয়েকে মেয়ের জামাইয়ের হাতে তুলে দিতে দিতে বলেন তাঁদের মেয়েকে যেন দেখেশুনে রাখে; আগলে রাখে; যত্নে রাখে; স্নেহ - ভালোবাসায় রাখে।
আরো পড়ুন : মনোবিজ্ঞানী এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে পার্থ্যক কী ?
পাত্র তখন নিজের শ্বশুর - শাশুড়িকে আশ্বাস দেন তিনি তাদের মেয়েকে দেখেশুনে রাখবেন; আগলে রাখবেন; যত্নে রাখবেন; স্নেহ - ভালোবাসায় রাখবেন। বাবা - মা সন্তানকে যেভাবে যত্নে রাখে সেটা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়; কিন্তু পাত্রসমাজ নিজের শ্বশুর - শাশুড়িকে যতটুকু আশ্বাস দেন সেটাই বা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারেন ?
গার্লস গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন শতশত পোস্ট দেখা যায় শ্বশুরবাড়িতে অনেক মেয়েরা তাদের যতটুকু খাবার প্রয়োজন সেটাও সময়মতো পায় না। একটা ডিম ভেজে খেতে হলেও শাশুড়ির অনুমতি নিতে হয়। এসব বিষয়ে স্বামীরা হয় উদাসীন। তাঁদের মায়েরা তাঁদের প্লেটে পরিমাণমতো খাবার দিচ্ছে এতেই তারা খুশী। বউ খাইলে খাবে, না খাইলে নাই।
আরো পড়ুন : সাইকোথেরাপি নিয়ে কিছু মিথ এবং বাস্তবতা
একজন স্বামী হিসেবে আপনার দায়িত্ব আপনার বউ সময়মতো খাচ্ছে কিনা বা খাবার পাচ্ছে কিনা! তাঁর কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা! তাঁর কিছু লাগবে কিনা! সে মানিয়ে নিতে পারছে কিনা! আপনার পরিবারের পরিবেশ বা লোকজন তাঁর অস্বস্তির কারণ কিনা এবং ইত্যাদি।
একজন বিবাহিত মেয়ে যখন সাপোর্টিভ পার্টনার পায় তখন শ্বশুরবাড়ির অন্য লোকেরা কেমন বা তার চারপাশে কতটা লিমিটেশন আছে সেটা ম্যাটার করে না। সেই মেয়ে যাবতীয় সকল প্রতিকূলতা জয় করে চলে আসতে পারে। একজন সাপোর্টিভ পার্টনার একজন মেয়ের জন্য কতবড় মানসিক স্বস্তি সেটা শুধুমাত্র একজন মেয়ের জায়গায় দাঁড়িয়েই উপলব্ধি করা যাবে। অন্যথায় সম্ভব নয়।
আরো পড়ুন : ড্রিপ্রেশনে থাকা আর দুঃখ বা শোকে থাকা কি একই ?
গার্লস গ্রুপে অনেকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে অনেক পজেটিভ পোস্টও দিচ্ছে। স্বামী, শ্বশুর - শাশুড়িরা আজকাল বন্ধু হয়ে উঠছে। বিষয়টা সুন্দর এবং আনন্দের। কিন্তু এই চিত্র হাতে গোনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্বশুরবাড়িতে পা রেখে মেয়েরা পড়ে যায় অথৈ সাগরে।
বেশিরভাগ বিবাহিত এবং গৃহিনী আপুর কাছ থেকে কমন একটি সমস্যা শুনি সেটা হচ্ছে তাঁদের বরেরা তাদের হাতে টাকা দেয় না। টাকা বলতে সংসারের খরচ না। তাঁদের হাত খরচ। কিছু লাগলে এনে দিবে, অনেকে সেটাও অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এনে দেয় কিন্তু হাতে এক টাকাও দিবে না।
আরো পড়ুন : নারীদের লড়াইয়ের শেষ কোথায় ?
এই প্রশ্নটা পুরুষ মানুষকেই করছি! আপনাকে আপনার বউ আপনার প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র কিনে দিলো কিন্তু হাতে এক পয়সাও দিলো না; আপনি চলতে পারবেন ?
কখনো মনে হবে না ছোট্ট ভাগ্নি/ ভাতিজিকে চকোলেট কিনে দেই ? বা হাতে করে বাবা মায়ের পছন্দের কোন খাবার কিনে নেই ? অথবা বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডায় চায়ের বিলটা দেই ? নিজের ছোট ভাই - বোনদের কিছু একটা কিনে দেই ? বা রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাই ?
এমনো কিছু গল্প আছে বিয়ের আগে যে মেয়েটা বাবার টাকায় মাসে দুই - তিনটা থ্রি পিস কিনতো, সেই একই মেয়ে বিয়ের পরে বছরে দুই - তিনটা থ্রি পিস কিনে। বাপেরও সামর্থ্য ছিল, বরেরও আছে। পার্থক্য মন - মানসিকতায়। বাবা - মা সন্তানদের সাধ - আহ্লাদ বুঝে, বেশিরভাগ স্বামীরা তাদের বউদের সাধ - আহ্লাদ বুঝে না বা বুঝতে চায় না।
আরো পড়ুন : আপনি কেন আগে সরি বলবেন ?
কোন মেয়ের বাবা - মা পাত্রের বাড়ি এসে পাত্রের কাছে জোর করে তাদের মেয়েকে দিয়ে যায় না। সম্মতিক্রমে এবং সম্মানের সহিত পরিবারের লোকজন নিয়ে গিয়ে শরীয়ত মোতাবেক পাত্রীকে বিয়ে করে নিয়ে আসা হয়। তাহলে সেই পাত্রীকে এতো অসম্মান, অযত্ন এবং অবহেলা কেন ?
যদি আপনি অন্যের মেয়েকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে ভালো রাখতে না পারেন তাহলে বিয়ে করবেন না। বিয়ের পরের যে দায় - দায়িত্ব সেটা যদি পালন করতে না পারেন তাহলে বিয়ে করবেন না। আপনার হাতে যখন মেয়ের বাবা - মা তাদের মেয়ের হাত তুলে দিচ্ছে যদি সেই ভার বহন করতে না পারেন তাহলে বিয়ে করবেন না। ঘরে বউ থাকলে বিছানায় যে সাময়িক সুখ পাওয়া যায় সেইটুকুর জন্য কোন মেয়ের জীবন, স্বপ্ন, সাধ - আহ্লাদ এলোমেলো করে দিবেন না।
তিন কবুল বলা সহজ, কিন্তু সত্যিকার অর্থে স্বামী হয়ে উঠা কঠিন।