নারীরা সমঅধিকার চায়, সমদায়িত্ব পালনে বিমুখ
- তানজিলা আক্তার
- ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮
আমি কিছুদিন হলো বিবিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা শেষ করে চাকরির পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বরাবরই সবার মতোই চাকরি এক সোনার হরিণ আমার কাছে। পরীক্ষার পড়া নিয়ে টুকটাক বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে কথা হয়। আমার বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলাম চাকরী পেয়ে ওরা কি করবে, ওদের কারো উত্তর ছিলো বাবার বয়স হয়েছে তাই সংসারের হাল ধরতে হবে, কারো উত্তর চাকরী বা ব্যবসা একটাতো করাই লাগবে, নাহলে বউকে খাওয়াবে কি, কেউ বললো ছোট ভাইবোনের দায়িত্ব নিবে, কেউ বলছে আর কতকাল এমনে কাটাবো, এবার না হলে কবে। মোটকথা বাবা-মা, সংসার, বউ-বাচ্চার জন্যে চাকরী। এসব শেষে কিছু থাকলে তা দিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা, আর তা না হলে নিজের স্বপ্নকে শিকেয়তোলা হয়।
যখন বান্ধবী বা বিভিন্ন গার্লস গ্রুপে জানতে চাইলাম যে তারা কি করবে চাকরী করে। তাদের মধ্যে কেউ বললো ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা চালাবে, কেউ বলছে বাবা অসুস্থ তাই এবার দায়িত্ব নিবে।কিন্তু পাঠক আপনারা কি জানেন? অধিকাংশই বললো শখ পূরণ করবে, যা যা এতদিন করতে পারেনি তা করবে, নতুন লাইফস্টাইল গড়ে তুলবে। হ্যাঁ, আমি মানি অধিকাংশ পুরুষেরা তাদের বউ, বোন, মেয়েকে চাকরী করতে দিতে চায়না। কিন্তু তারা কিন্তু বলে না যে সংসারের সব খরচ অর্ধেক দিবে। যদি বলেও সেটা খুব কম।
নারীরা চাকরি করে, কিন্তু একটা জিনিস পছন্দ হলে কিনি, তবে মাঝেমাঝেই অনেক নারী বলে ফেলে, "আমার জামাইর টাকা কে খাবে? এটা ওর টাকা দিয়ে নিবো।" কিন্তু বেশিরভাগ পুরুষই বলে না যে বউর টাকা কে খাবে, বউর টাকা দিয়ে কিনবে। বাবার সংসারেও আমরা ভাবি আমার ভাই টাকা দিচ্ছেই তো এটা ওদেরই সংসার, আমি এখানে এত টাকা কেন দিবো? কম দেই। দিচ্ছি তো তাইনা। আমরা কি সমঅধিকার নিয়ে সত্যিই সমদায়িত্ব পালন করছি?
তারপর ধরুন আমরা জানি আমাদের দেশের বাসগুলোতে মহিলা সিট থাকে। আচ্ছা তাহলে আমরা ধরেই নিতে পারি যে বাকি সিটগুলো পুরুষদের সিট। আমি যখন বাসে চড়ি, বেশিরভাগ সময়ে ঐ পুরুষের সিটেই বসি। একবার মহিলা সিটে একজন পুরুষ বসেছে বলে তাকে যাচ্ছেতাই বলে উঠিয়ে দেয়া হলো। আচ্ছা বাকিদের কি উচিত ছিলোনা যে আমাকে সেই পুরুষ সিট থেকে উঠিয়ে দেয়া। তারা কিন্তু তা করেনি। হ্যাঁ, ব্যবধান এখানেই। আর যদি এমন হয় যে মহিলা সিট আলাদা বাকিগুলো সবার জন্যেই। তবে মেয়েরা অধিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আলাদা সিট পাচ্ছে। এটা নিয়ে তো আমরা বলি না যে এ সমাজ বেশি অধিকার দিয়েছে আমাদের। বলি কি? সমঅধিকার এটাই আমার কাছে। মেয়েরা অভিযোগ করে ছেলেরা গায়ের রঙ দেখে বিয়ে করে, আমরা মেয়েরাও কিন্তু ছেলে ডাক্তার না প্রকৌশলী তা ভাবি, আর্থিক সিকউরিটি কেমন তা ভাবি। দুইপক্ষই তো এক।
আমরা মেয়েরা কেনো শাড়ী, বাড়ী আর গহনাগাঁটি ছাড়াও একটা জীবন দেখি না। কেনো? আমরা গৃহিনী হয়ে যেমন কাজ করি, বাইরের পুরুষরাও তো কাজ করেই আসে। আমরা চাকরী করি, তারপর চাকরী না ভালো লাগলে ছেড়ে দেই, কেউ কিছু বলেনা। কিন্তু একজন পুরুষ চাইলেই চাকরী ছাড়তে পারেনা। বাংলাদেশে একজন নারী চাকরী করলে করে না করলে নাই। কিন্তু একজন পুরুষকে বললে সে বলবে তার উপর অনেক দায়িত্ব। সে চাইলেই চাকরী ছাড়তে পারে না। এই লেখাটা আজ আমি অনেক ভেবে লিখলাম। আমি নারীবাদী নই, পুরুষবাদী নই, একজন মানববাদী হয়েই লেখাটা লিখলাম। ভুল হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।