সফলতা ধরে রাখার উপায় কী ?
- ফারজানা আক্তার
- আগস্ট ১৭, ২০২১
একবার এক লোক একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ নিলো। তার যে বস ছিলো তিনি একজন বয়স্ক এবং জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তিনি কাজের শুরুতে সকলকে বলতেন, 'কথা কম বলবা আর কাজ বেশি করবা। সবসময় শেখার চেষ্টা করবা। জানার চেষ্টা করবা। কাজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করবা। '
নতুন লোকটি তার বসের পরামর্শ অনুযায়ী সেভাবে কাজ করে যেতে লাগলো। ধীরে ধীরে সে কাজে বেশ দক্ষ হয়ে উঠলো। এদিকে তার বসের অবসরে চলে যাওয়ার সময় আসলো। তিনি অবসরে চলে গেলেন। কয়েক বছর পর লোকটি তার পুরাতন অবসরে যাওয়া বসের সাথে দেখা করতে গেলো। তাকে বেশ বিষণ্ণ লাগছিলো। বস লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো তাকে বিষণ্ণ কেন লাগছে! কী হয়েছে!
আরো পড়ুন : ড্রিপ্রেশনে থাকা আর দুঃখ বা শোকে থাকা কি একই ?
লোকটি আফসোস করে বললো সে এতো নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তবুও তার বেতন বাড়ছে না। প্রমোশন হচ্ছে না। অন্যদিকে অনেকে কাজ কম জানে, নতুন এসেছে, অনেক বিষয়ে অদক্ষ তাদের বেতন বাড়ছে, প্রমোশন হচ্ছে কারণ তাদের বসদের সাথে বেশ খাতির। তারা কাজ কম করে আর বসদের প্রশংসা বেশি করে।
বস তখন লোকটিকে কয়েকদিনের ছুটিতে যাওয়ার পরামর্শ দিলো। বসের কথা অনুযায়ী লোকটি ছুটি নিলো। ছুটি কাটিয়ে অফিসে আসার পর ম্যানেজার লোকটিকে বললো এই কয়দিনে অফিসে অনেক সমস্যা হয়েছে। লোকটি যে কাজ একাই করতো সে কাজ কয়েকজন মিলেও করতে পারছিলো না। ম্যানেজার বুঝতে পারছিলো লোকটির যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন বা প্রমোশন কিছুই পাচ্ছিলো না।
ম্যানেজার দুঃখ প্রকাশ করলো এবং একইসাথে লোকটির বেতন বাড়লো এবং প্রমোশনও হলো। লোকটি মনে মনে ভাবলো সফলতার গোপন সূত্র মনে হয় এটাই। এতদিন যা হয়নি সেটাই মাত্র কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে হয়ে গেলো। তিনি তখন কয়েকদিন পর পর ছুটি নিতে লাগলেন। কয়েকমাস পর হুট করে তার চাকরি চলে গেলো। তিনি তখন মন খারাপ করে তার আগের বসের কাছে ছুটে গেলেন।
আরো পড়ুন : ভালোবাসার মানুষ কিছু আড়াল করছে কিনা কিভাবে বুঝবেন
গিয়ে সকল কথা খুলে বললেন। সে তার গাইডলাইন অনুযায়ী চলছিলো সেটাও উল্লেখ করলেন। বস তখন লোকটিকে বললেন সে অর্ধেক কথা মেনে চলেছে, বাকি অর্ধেক কথা মেনে চলেনি। লোকটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন! অর্ধেক কথা মেনে চলেছি ? বস তখন বলতে শুরু করলেন।
একটি বাল্ব যখন সারাক্ষণ আলো দেয় তখন কেউ সেটাকে সেভাবে লক্ষ্য করে না। এমনকি পাত্তাও দেয় না। যখনই সে বাল্ব হুট করে একদিন বন্ধ হয়ে যায় তখন লোকজন তার গুরুত্ব বুঝতে পারে। বস তখন লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো তুমি এতটুকু বুঝতে পেরেছো এবং মেনে চলেছো। কিন্তু কোন বাল্ব যদি ঘন ঘন বন্ধ হয়ে যায় তখন আগে হোক কিংবা পরে সেই বাল্বের জায়গায় নতুন বাল্ব আসবে। যে বাল্বের উপর ভরসা করা যায় না সেই বাল্ব মানুষ কেন রাখবে ? তুমি রাখবে ? আমি রাখবো ?
এটা হলো বাকি অর্ধেক কথা। তুমি এর গুরুত্ব বুঝতে পারোনি এবং মেনেও চলোনি। জীবনে সকল বিষয়ে ব্যালেন্স করা জরুরি। সফলতা পেতে আমরা সকলে চাই কিন্তু ধরে রাখার মতো ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই থাকে। সফলতার নিদিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। এটা একটা জার্নি। কিন্তু মানুষ কোন একটা লক্ষ্য পূরণ হলে ধরে নেয় সে সফল এবং আরো অনেক কিছু ডিজার্ভ করে। সে তখন আর পরিশ্রম করতে চায় না, শিখতে চায় না, সততা ধরে রাখতে পারে না। এবং তখন থেকেই তার পতন শুরু হয়।
সকলের জীবন সুন্দর হোক। সকলের জন্য শুভকামনা।
আরো পড়ুন : মানসিক স্বাস্থ্য কী? মানসিক সমস্যার প্রাইমারি লক্ষণগুলো জানুন