আমার কাছে মনে হয় ডিভোর্সের মূল কারণ দাম্পত্য শিক্ষার অভাব।
- ফারজানা আক্তার
- অক্টোবর ১৮, ২০২১
তানিম ইশতিয়াক! একজন তরুণ কবি। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। ছিলেন সাংবাদিকতা পেশায়। বিসিএস, লেখালেখি, শিক্ষকতাসহ নানান বিষয় নিয়ে আজকে তার সাথে কথা বলবো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারজানা আক্তার।
ওমেন্সকর্নার : সম্প্রতি ট্রেনিংয়ে জয়েন করেছেন। কেমন লাগছে নতুন পরিবেশ আর ট্রেনিং?
তানিম : ট্রেনিংয়ে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আছি। অনভ্যাসের কষ্ট আছে। তবুও ভালো লাগছে। উপভোগ করছি। এটা আমাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ। শিক্ষা ক্যাডার যেহেতু বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অংশ, সেহেতু শিক্ষকতা ছাড়াও শিক্ষা-প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষাবোর্ড, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) সহ বিভিন্ন দপ্তর শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
আরো পড়ুনঃ যে ৬ সমস্যা অবহেলা করলে পুরুষের বিপদ
সেকারণে এই ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে ওভারঅল বিষয়ে বেসিক ধারণা ও দক্ষতা সৃষ্টি করা হয়। সার্ভিস রুলস শিক্ষা দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় বা দপ্তর পরিচালনার বিধিবিধান শেখার জন্য কিছুদিনের জন্য অফিস অ্যাটাচমেন্টে পাঠানো হয়। কার ড্রাইভিং, ট্যুর, নিজ গ্রাম সমীক্ষার ফিল্ডওয়ার্ক, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসহ বহুমাত্রিক মডিউলে এই ট্রেনিং কোর্স সাজানো। এসব উপভোগ করছি। এখানকার পরিবেশটাও সুন্দর।
ওমেন্সকর্নার : বিসিএস সবার কাছে সোনার হরিণ। সেই হরিণ আপনি ছুঁতে পেরেছেন। অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন।
তানিম : বিসিএস নিয়ে ক্রেজ আছে সত্য, তবে এটা একটা চাকরিই। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জব সিকিউরিটি বা প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে আনুষঙ্গিক সুবিধাদির কারণে এই ক্রেজ তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশে দক্ষতা-কেন্দ্রিক চাকরির সুবিধা এখনো তৈরি হয়নি বা চ্যালেঞ্জিং পেশার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়নি। সেকারণে বিসিএসকে সোনার হরিণ মনে করা হয়। কিন্তু অনেকেই বিসিএস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা এমনকী সাংবাদিকতায়ও ফিরে গেছে।
আমার ক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হচ্ছে, আমি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রজাতন্ত্রের সার্ভিস দেওয়া যায়, এবং সম্মানজনক জীবিকানির্বাহ করা যায়। যেহেতু আমার পরিবার আমার দিকে মুখ চেয়ে ছিল, সেহেতু তাদের অনিশ্চয়তায় না রাখার চেষ্টা করেছি। সেই চেষ্টায় আল্লাহ আমার প্রতি রহম করেছেন।
ওমেন্সকর্নার : অনেকেই এই সোনার হরিণ ছুঁতে চায়। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু পরামর্শ দিন।
তানিম : আমি এভাবে শূন্যতার উপরে পরামর্শ কিংবা উপদেশ দিতে পছন্দ করি না। বিসিএস সংক্রান্ত বহু টিপস ও মোটিভেশন ফেসবুক ইউটিউবে পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, সবকিছু শোনার প্রয়োজনও হয় না। বিসিএস মোটিভেশনের নামে অনেক বাহুল্য, আজগুবি ও হাস্যকর কথাবার্তাও চোখে পড়ে। মূলকথা, কেউ যদি আগ্রহী হয়, সে নিজেই খুঁজে নিতে পারবে তার উপায়, এবং বুঝে নিতে পারবে কোনটুকু তার জন্য উপকারী। অনেকেই শুধু একের পর এক টিপস শুনে যায়, কিন্তু কোনোটাই কাজে লাগাতে পারে না।
আরো পড়ুনঃ শরীরের বাড়তি মেদ কমাবে চিয়া সিড
এককথায় বলতে গেলে সিলেবাস দেখে নিজের সক্ষমতা ও দুর্বলতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এছাড়া একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, অনেক মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী ভাইভা পাশ করেও পদস্বল্পতায় কিংবা অন্য কোনো কারণে ক্যাডার না-ও পেতে পারে। আবার সবকিছু ঠিক ছিল, ভাইভাটা খারাপ হতে পারে। একের পর এক সিড়ি ডিঙিয়ে সর্বশেষ ধাপ জেতা অনেকটা লটারির মতোই। তাই বিকল্প পেশার আশা ও প্রস্তুতিও থাকা দরকার।
ওমেন্সকর্নার : আপনি পেশায় একজন শিক্ষক। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো ?
তানিম : কোভিড অতিমারির সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছিল। যেহেতু এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে প্রথম, তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক ঘাটতি ছিল। যেহেতু প্রশিক্ষণ ছিল না, লজিস্টিক সাপোর্ট ছিল না। তারপরও শিক্ষকরা যেভাবে চেষ্টা করেছেন, তা প্রশংসনীয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলতে গেলে আমার কাছে ভালো লেগেছে।
যখন তখন নোটিশ দিয়ে ক্লাস নিতে পেরেছি। অথবা, স্রেফ গল্প করার জন্যও শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেছি। আবার সমসাময়িক কোনো বিষয়ে আড্ডা দিতে বা তাদের প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে প্রশ্নোত্তর সেশন করে তাদের কাছাকাছি থেকেছি। যেমন মার্কিন নির্বাচনের সময় হঠাৎ একটি ক্লাসের আহ্বান করে ট্রাম্প-বাইডেন এসব বিষয়ে আড্ডা দিয়েছি, সীমান্ত নিয়ে ভারত-চীনের সংঘাতমুখর পরিস্থিতির কথা বলেছি। এরকম আলোচিত ইস্যুতে আড্ডা বা প্রশ্নোত্তর করেছি। আমার বিষয় যেহেতু রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এই টপিকগুলো খুব রিলেটেড। তবে ক্লাসের মতো করে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি পাইনি। তাদের বেশিরভাগ গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় থাকে, ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির পুরো অ্যাকসেস তাদের নাই।
আরো পড়ুনঃ ফুসফুসের সমস্যা কি না জানুন এই ৬ লক্ষণে
ওমেন্সকর্নার : আমাদের সময়ে আমরা যখন স্টুডেন্ট ছিলাম আর বর্তমান সময়ের স্টুডেন্টদের মধ্যে কেমন পার্থ্যক আপনি দেখতে পান?
তানিম : পার্থক্য শুধু স্টুডেন্টে না, টিচারেও তৈরি হয়ে গেছে। আগের মতো শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, আনুগত্য কিংবা অধ্যবসায় নেই। আবার শিক্ষকদের আগের মতো আন্তরিকতা বা স্নেহপরায়নতা নেই। একটা সম্পর্ক তো আসলে ভাইসভার্সা। তো একটাতে পার্থক্য মানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যটাতেও প্রভাব পড়বে। এখনকার জন্য কোনটা হয়েছে সেটা তর্কসাপেক্ষ। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি সবই সম্পৃক্ত।
ওমেন্সকর্নার : বর্তমানে সামাজিক, নৈতিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধের এতো অবক্ষয় কেন? এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?
তানিম : এটা সামাজিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত ও ব্যাখ্যাবহুল একটা বিষয়। এটা নিয়ে গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। কোনো ব্যাখ্যাই কংক্রিট না, তবে এটা স্বীকার করতে হবে আধুনিকতা ও উন্নয়নের সাথে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের একটা আপাত-বিপরীত সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা হয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুণগত প্রভাবের মাধ্যমে। প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারেরও ভূমিকা আছে। আমার কাছে মনে হয়, রাজনৈতিক সুশাসন থাকলে ধর্মীয় অনুশাসন মানলে এই ব্যাপারটাকে একটা সম্মুখগতি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ওই দুটো জিনিস প্রতিষ্ঠা একটা অসম্ভব কল্পনার মতো।
ওমেন্সকর্নার : বর্তমানে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অনেকে নারীশিক্ষা এবং কর্মজীবী নারীদের এর জন্য দায়ী করছেন। একজন সচেতন নাগরিক, শিক্ষিত মানুষ এবং শিক্ষক হওয়ার সুবাদে এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?
তানিম : ডিভোর্স বেড়ে যাওয়াটা আমাদের পরিবারিক কাঠামোর ক্রমক্ষয়িষ্ণুতা ও দাম্পত্য অশান্তিকে নির্দেশ করে। এর পেছনে বহুবিধ কারণ আছে। আমার কাছে মনে হয় মূল কারণ দাম্পত্য শিক্ষার অভাব। আমাদের দেশে বিয়ে নিয়ে অনেক ফ্যান্টাসি আছে, সংসার নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে; কিন্তু দাম্পত্যের বোঝাপড়া নেই। পুুরুষ এবং নারীর সাইকোলজি আলাদা। তাদের ভাবনা ও চাহিদার পার্থক্য আছে। কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে, বা কী করলে পরস্পরকে খুশি করা যাবে, সম্পর্কের যত্ন কীভাবে হবে- এসব বিষয়ে অনেক দম্পতির ধারণা পরিষ্কার না, অথবা গুরুত্ব দেয় না।
এরকম ছোট ছোট অবহেলা থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। নারীশিক্ষা বা কর্মজীবী নারীদের দায়ী করার যে কথা বললেন, সেটা ঢালাও অভিযোগ। হ্যাঁ, পরিসংখ্যান বলছে, শহুরে শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারীদের ডিভোর্সের হার বেশি। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, গ্রামের বা অশিক্ষিত নারীদের সংসার ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না। যে নারীরা সংসারে নিপীড়ন বা অসম্মানের জীবন যাপন করে, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হলে তাদের অনেকেই ওই জীবন থেকে বেরিয়ে যেত। শিক্ষিত কর্মজীবী নারীরা তাই ওরকম শারীরিক মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে সহজেই ডিভোর্স করে ফেলে। অন্যদিকে আত্মনির্ভরশীল এমন অনেক নারীও আছেন, যারা তাদের চাকরি ও ক্যারিয়ার গুরুত্ব দিতে গিয়ে সংসারের প্রতি ফোকাস হারিয়ে ফেলে।
আরো পড়ুনঃ ডায়েট ছাড়া ওজন কমানোর সেরা ৬ উপায়
তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তখন সাংসারিক দায়িত্ব ভাগাভাগি বা পারস্পরিক চাহিদা ও কর্তব্য নিয়ে কলহ তৈরি হয়। এটা ডিভোর্সে গড়ায়। এছাড়া অনেক পুরুষের কর্তৃত্বশীল মানসিকতা বা ইগো নারীর চাকরি ও সক্ষমতাকে ভালোভাবে নিতে পারে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যে সেটিং, পুরুষেরা বাইরে কাজ করবে, নারীরা ঘর সামলাবে; এরকম ধারণা থেকে বের হতে না পারলে নারীকে তখন অবাধ্য বা স্বামীর কথা শোনে না- এই টাইপ বিরোধ শুরু হয়।
ওমেন্সকর্নার : সভ্যতা এতো এগিয়ে গেলো এবং যাচ্ছে তবুও খারাপ সকল কিছুর জন্য এখনো নারীকে কেন দায়ী করা হয় ?
তানিম : এই প্রশ্নটা ক্লিয়ার না। এটা একটা এভারেজ স্টেটমেন্ট মনে হয়। এর উল্টোপিঠও আছে। দেখবেন, একপক্ষ সকল কিছুর জন্য পুরুষতন্ত্রকে দায়ী করছেন। এমনকী পুরুষমুক্ত পৃথিবীও দাবি করছেন। আসলে পুরুষতন্ত্র বলেন আর নারীবাদ বলেন, কর্তৃত্বের বিষয়টা ক্ষমতা ও অর্থের সাথে সম্পৃক্ত। এই দুটো জিনিস যার কাছে থাকে, সে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং কোনোকিছুর জন্য অপরকে দায়ী করতে বা ফাঁসাতে চায়। আর এই যে সভ্যতার কথা বলছেন, আধুনিক সভ্যতার একটা প্রবণতাই হচ্ছে পরিবার ভেঙে যাওয়া।
সমাজে পরকীয়া ও অবাধ যৌনাচার বেড়ে যাওয়া। উন্নয়নের সাথে এই সংকট, তার ফলস্বরূপ একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা চলে আসে। এখন দারিদ্র্য কমেছে, শারীরিক নির্যাতন কমেছে, জীবন উপভোগের বহুমুখী উপকরণ এসেছে, একইসঙ্গে বেড়ে গেছে মানসিক অসুখ। বস্তুগত উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু সেটাকে অ্যাডাপ্ট করার মতো মানসিক দক্ষতা ও আত্মিক উন্নতি দরকার।
ওমেন্সকর্নার : কর্মজীবী বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে একজন স্বামীর কেমন ভূমিকা পালন করা উচিত?
তানিম : দেখুন, দাম্পত্য সম্পর্ক বা সংসার একটা যৌথ প্রজেক্ট। এখানে দুইপক্ষেরই ভূমিকা আছে। এই ক্ষেত্রে দুজনেরই আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতা লাগবে। আমার কাছে মনে হয়, সবার আগে সম্পর্ক ও সংসার। এখানে ভালোবাসার ঘাটতি হলে বা দূরত্ব তৈরি হতে গেলে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সেটা নারীর পক্ষ থেকেও, পুরুষের পক্ষ থেকেও। বিবাহিত নারী কর্মজীবী হোক বা গৃহিণী হোক; স্বামীর ভূমিকা হতে হবে সহযোগীর। কর্মজীবী হওয়াটা দুই দিক দিয়ে আমি চিন্তা করি।
এক হচ্ছে, আর্থিক সচ্ছলতা ও দুই- নিজের মেধা বিকশিত করে সমাজে অবদান রাখা। আমার কাছে মনে হয় দুজনের জীবনের লক্ষ্যে বা ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্যে যদি একটা মিল থাকে; তাহলে বিষয়টার সমঝোতা কিংবা সমন্বয় সহজ হয়। একটি সুস্থ সুন্দর চাপমুক্ত জীবনের জন্য একে অপরের কাছাকাছি থাকতে হবে। এখানে একজন অসুখী বোধ করলে অপরজন সুখী হতে পারে না। আরেকটা বিষয় বলে রাখি, সাক্ষাৎকারে বড় বড় কথা বলা সহজ, সবাই বলতে পারে। বাস্তবে দাম্পত্য আসলে ফিলিংস ও তৎপরতার ব্যাপার।
ওমেন্সকর্নার : ছাত্র-ছাত্রীদের মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের কেমন ভূমিকা পালন করা উচিত?
তানিমঃ শিক্ষার একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে সংবেদনশীলতা তৈরি হওয়া। শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা অনেক। কিন্তু সেই ভূমিকাটা একতরফা কার্যকর হয় না। সামগ্রিক পরিবেশ, অভ্যাস ও রাজনীতি যখন প্রতিকূলে থাকে; তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবল সার্টিফিকেট পাওয়ার স্থান হয়ে যায়। শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব কমে গেলে সুকুমার বৃত্তির চর্চা কিংবা বিকাশ অত গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। ফলে একটা সংকট তৈরি হয়।
দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের কথার চেয়ে রাজনৈতিক বড় ভাই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, শিক্ষকদের অত নীতিকথা শোনার কিছু নাই, তারা আসলে ভবিষ্যত জীবনে নীতিনৈতিকতা কিংবা মানবিকতার খুব কদর হবে সেটা দেখতে পায় না। তাই আমার মনে হয়, সবার আগে ছাত্রশিক্ষক সম্পর্কের উন্নয়ন দরকার। পরিবারে ও সমাজে শিক্ষাবান্ধব একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা দরকার।
ওমেন্সকর্নার : সাংবাদিকতা মিস করেন ?
তানিম : সাংবাদিকতা আমার ভালো লাগার জায়গা ছিল। আমার মনে পড়ে, বহুসময় কাজ করতে আমি বিরক্ত হতাম না। ইনজয় করতাম। সাংবাদিকতা আমি মিস করি, কিন্তু ফিরে যেতে চাই না। ওখানে যথাযথ মূল্যায়ন নাই, অর্থ কিংবা সম্মান দুটোরই জায়গা থেকে। আবার এত বেশি নিয়ন্ত্রিত অথবা বাজেটবঞ্চিত যে, নিজের পুরোটা দেওয়ার সুযোগ সীমিত।
আরো পড়ুনঃ শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বুঝবেন যেসব লক্ষণে
ওমেন্সকর্নার : আপনার লেখালেখি নিয়ে কিছু বলুন। নতুন বই আসবে ?
তানিম : অনেকদিন ধরে লেখালেখির ধারায় নাই। মাঝেমধ্যে কবিতা লিখি বটে, নতুন বই করার চিন্তা আপাতত নাই। আগে প্রায় পরপর তিনটি বই এসেছে। পরবর্তী বই একটু সময় নিয়ে করব।
ওমেন্সকর্নার : বর্তমানের সাংবাদিকতা এবং লেখকদের ভূমিকায় আপনি সন্তুষ্ট? যদি সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
তানিম : অন্য সব সেক্টরের মতোই সাংবাদিকতা পেশার অবনতি ঘটেছে। সমস্যাটা হচ্ছে পেশাদারিত্বের অভাব। এখানে দালালি ও রাজনীতি বেশি। ফলে মূলধারার সাংবাদিকতার চেয়ে বিকল্প মিডিয়ায় মানুষ বেশি আস্থা রাখছে। সেটার বড় ক্ষতি হচ্ছে, ফেক নিউজের ছড়াছড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার সবাই যাচাই করতে পারে না। অন্যদিকে, লেখকের ভূমিকা যদি বলেন, এখানে মন্তব্য করার কিছু দেখি না। লেখকের আবার ভূমিকা কী?
আরো পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর ৭ উপায়
তিনি তো লিখবেন। সেই লেখা কতটা মানসম্মত হচ্ছে, সেটা পাঠক দেখবে। কোন লেখার কতটা প্রভাব সমাজে থাকবে, সেটা গ্রহণযোগ্যতা ও সময়ের ব্যাপার। সবার লেখা সমান হবে না- সেটা স্বাভাবিক। আর লেখকদের তো সম্মিলিত বা পেশাগত ভূমিকা বিচারের প্রয়োজন নেই।