স্বামীর নির্যাতন বনাম সমাজের অত্যাচার।
- ফারজানা আক্তার
- ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে তার স্বামী এবং শশুরবাড়ির লোকজন মেরে ফেলেছে। খুনি স্বামীর প্রসঙ্গে যাবো না। কারণ এই বিষয়ে আজকে কিছু বলবো না। আজকে তাদের নিয়ে কথা বলবো যারা বলছেন সংসারে অশান্তি হওয়ার পর মেয়েটা কেন স্বামীর ঘর ছাড়লো না! অনেকে আবার বলছেন মেয়ের বাবা - মায়ের কান্নাকাটি দেখে তাদের নাকি হাসি পাচ্ছে!
কারণ মেয়ের বাবা মা মেয়েকে সেই খুনি স্বামীর সংসার করতে বাধ্য করেছে! তাই তারা মেয়ের বাবা - মাকে সরাসরি অপরাধী করছেন। মেয়েটার মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর ফেসবুকে অনেক ধরণের স্ট্যাটাস দেখেছি, নানান মানুষের নানান ধরণের প্রতিক্রিয়া। সবার স্ট্যাটাসে গিয়ে একটা কমন কমেন্ট করতে ইচ্ছে করছিলো!
আরো পড়ুন : মৌমাছিদের জীবনধারণ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন।
' অশান্তির কারণে মেয়েটা যদি স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে আসতো আপনারা তাকে বাঁচতে দিতেন ? সত্যি দিতেন ? '
তার অমানুষ স্বামী তাকে একবারে মেরে ফেলেছে। আপনারা মানে এই সমাজ এবং এই সমাজের মানুষ তো তাকে তিলে তিলে মারতেন। এভাবে স্বামী বা শশুরবাড়ির লোকজনের হাতে কোন মেয়ের মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার পর চারদিকে মায়াকান্না শুরু হয়ে যায়। আগে মায়াকান্না দেখে ভাবতাম সবাই হয়তো সত্যি কষ্ট পাচ্ছে। এখন মায়াকান্না দেখলে হাসি পায়। কোন মেয়ের যদি দেরিতে বিয়ে হয় তাতেও আপনাদের সমস্যা। কোন মেয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে আসলে সমস্যা। কোন মেয়ের স্বামী মারা গেলে সে যদি পুনরায় বিয়ে করে তাতেও আপনাদের সমস্যা।
আরো পড়ুন : যা হয় তা কি সত্যিই ভালোর জন্য হয় ?
এই এতো অনাচার অত্যাচার সহ্য করেও স্বল্প শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত, স্বাবলম্বী মেয়েরা কেন স্বামীর সংসারে পড়ে থাকে জানেন ? শুধুমাত্র আপনাদের মতো মানুষদের ভয়ে। আপনাদের কথার খোঁচার আঘাত কতটা বিষাক্ত আপনাদের টের পান ? স্বামীর মাইর খাওয়ার পর শরীরের আঘাত দুই একদিনে ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু আপনাদের কথার বিষাক্ত তীর দিনের পর দিনেও শেষ হয় না।
বাকি থাকলো মেয়ের বাবা মায়ের কথা! কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা - মা হয়তো এক ধরণের পাপই করে ফেলে! মেয়ে যত বড় হয় বাবা মায়ের টেনশন বাড়তে থাকে।
আরো পড়ুন : যদি ব্যর্থ হই?
মেয়েকে আদর, ভালোবাসা, স্নেহ / মায়া / মমতা দিয়ে বড় করে একজন সুপাত্রের হাতে তুলে দিয়ে ভাবে হয়তো এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো! কিন্তু সেখানেও যখন অশান্তি শুরু হয় কী করবেন বাবা / মায়েরা ?
এক মেয়ের সংসার ভাঙলে অন্য মেয়েদের বিয়ে বা তাদের সংসারেও প্রভাব পড়ে। মেয়ের বাবা / মায়ের দিকে সবাই আঙ্গুল তুলে কথা বলে, খোঁচা মারে, হাসাহাসি করে।মেয়েকে পরবর্তী বিয়ে দিতে তাদের হয়রানির পর হয়রানি হতে হবে। আরো নানান কিছু।
আপনারা কী এই সমাজে বসবাস করেন না ? এই সমাজের নোংরা ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত নন ?
তাহলে আমি কেন বলছি ? ওই যে আপনাদের মায়াকান্না দেখি ফেসবুকে তাই বলছি।
আরো পড়ুন : আপনি ভালো মানুষ হতে চান ?
কোন একটা সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার পর হোক সেটা মেয়ের কারণে কিংবা ছেলের কারণে; নিজের বুকে হাত দিয়ে বলুন তো সেই মেয়েটার দিকে আপনারা বাঁকা চোখে তাকাননি কিংবা দুই চারটা ত্যাড়া কথা শুনিয়ে দেননি।
' মানিয়ে নাও! জীবন অনেক কঠিন! একটু সহ্য করো! মেয়েদেরই মানিয়ে নিতে হয়! পুরুষ মানুষ ওই রকম একটু করেই! ' সংসার জীবনে মেয়েদের এই কথাগুলো শুনতে হয় শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।
অশান্তির সংসার ছেড়ে আসলে আপনারা শান্তিতে থাকতে দিবেন ? মেয়েটার জীবন এবং একইসাথে তার বাবা / মায়ের জীবনও বিষিয়ে দিবেন। সাধ করে কেউ সংসার ভাঙে না। কোন না কোন কারণে ভাঙ্গে। তাই ডিভোর্সটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখুন। সাথে ডিভোর্সি নারী পুরুষ উভয়কেই।
আরো পড়ুন : আপনি সফলতা ধরে রাখতে চান ?
মানছি বর্তমানে কারণে - অকারণে, উঠতে - বসতে অনেক ডিভোর্স হচ্ছে। কিন্তু এই কারণটা ভিন্ন। আমাদের সকলের সহনশীলতা অনেক কমে গিয়েছে। আত্মসম্মান বাদ দিয়ে সবাই ইগোকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে। এগুলো ভিন্ন আলোচনা। আমি আজকে কথা বলতে চেয়েছি স্বামীর সংসারে অত্যাচারিত নারীর মৃত্যু নিয়ে আপনাদের মায়াকান্না নিয়ে।
আমাদের সকলকে নিয়েই সমাজ। চলেন না এই মায়াকান্না বাদ দিয়ে, একে অন্যকে দোষারোপ না করে এই সমাজের অন্ধকার দিকগুলোতে আলো জ্বালাই। নিজেদের জন্য না হোক! নিজেদের সন্তানদের ভবিষৎ ভাবনা ভেবে হলেও সুন্দর একটি সমাজ গড়ে দিয়ে যাই।
আরো পড়ুন : আপনি কি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নেন ?