ভাগ্যলেখা
- ফারজানা আক্তার
- জানুয়ারি ২২, ২০২১
'তোমারে ঠিকমতো খাওন পরন দিলেই তো হয়। পুরুষ মানুষ কই যায়, কি করে এতো খবর নেওয়ার কোন দরকার আছে? '
'আমার স্বামী কোথায় যায়, কি করে আমি খোঁজ খবর নিতে পারবো না ?'
'না নিতে পারবা না। পুরুষ মানুষ মাইয়া মানুষের খবরদারি সহ্য করে না। আমার পোলা তো করে না। আমি আমার পোলারে সঠিক পুরুষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছি। হুম!'
নীলা কতক্ষন শাশুড়ির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। এতক্ষন নীলা তার শ্বাশুড়ির রুমে ছিলো। নিজের স্বামীর বেপরোয়ার অভিযোগ নিয়ে অনেক আশা করে শ্বাশুড়ির কাছে গিয়েছিলো।
শ্বাশুড়ির কথা শুনে নীলা হতবাক হয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। নীলার মাথা কাজ করছে না। নিজের কাছে নিজেকে অনুভূতি শূন্য লাগছে।
আজ থেকে ৭ বছর আগে নীলা আর নিখিলের বিয়ে হয়। দুইজন সম্পর্কে কাজিন হয়। নীলার মায়ের চাচাতো বোনের ছেলে নিখিল। দুই পরিবারে যাওয়া আসা ছিল। নীলা আর নিখিল দুইজন দুইজনকে পছন্দ করতো।
আরো পড়ুন : যেমন শাশুড়ি তেমন বউ (পর্ব-১)
পছন্দের সূত্র ধরেই নিখিলের মা নীলার বাসায় প্রস্তাব পাঠায়। পাত্র এবং পরিবার উভয়ের সকল কিছু জানা-শোনা ছিল নীলার পরিবারের। তাই কেউ আপত্তি করে নি। মহা ধুমধামে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর সকল কিছু সুন্দরভাবে চলছিল।
বিয়ের ৬মাস পর নীলা কনসিভ করে। নিখিল তখন বেবি চায় নি। সে নিজের ক্যারিয়ার আরেকটু গুছিয়ে নিতে চাইলো। নীলার তখন অনার্স থার্ড ইয়ার চলছিলো। নীলা চেয়েছিলো বেবিটা থাকুক কিন্তু নিখিলের আপত্তির কাছে নীলা খুব একটা বেশি টিকতে পারে নি।
নীলা তখন বেবিটা নষ্ট করে ফেলে। বেবি নষ্ট করে দুই পরিবারকে জানায়। দুই পরিবারের লোকজন নীলা এবং নিখিলকে খুব বকা দেয়। কিন্তু যা চলে গেছে সেতো বকাতে আর ফেরত আসবে না।
'শোন বউমা! তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলো। এভাবে তো দিন চলতে পারে না। আমার একমাত্র ছেলে। বংশ রক্ষা করতে হবে। তোমার আর বাচ্চা-কাচ্চা হবে বলে মনে হয় না। আমার ছেলেকে আবার বিয়ে দিবো আমি। '
'মা! কি বলছেন আপনি ? '
'যা কইলাম ভাবনা চিন্তা করে কইলাম। বাচ্চা-কাচ্চা না থাকলে পুরুষ মানুষের মন টিকে না সংসারে। এই জন্য আমার পোলা এখন বাহিরে বাহিরে থাকে। নতুন নতুন বান্ধবী বানাইছে।
এই নিয়া আবার তোমার সমস্যা। বাচ্চাও দিতে পারবা না, পোলা বাহিরে থাকলেও সমস্যা। তোমার সমস্যা নিয়া তুমি তোমার বাপের কাছে চলে যাও। আমার পোলা আবার নতুন সংসার পাতবো। '
'বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা তো আপনার ছেলেরও হতে পারে। আমার ছেলেকে বলুন ডাক্তারের কাছে যেতে। ডাক্তার দেখাতে। '
'বাচ্চা কি আমার পোলার পেটে হইবো ? তোমার পেট খারাপ তাই তোমার পেটে বাচ্চা আসে না। '
'মা!'
'তুমি তোমার বাসায় কথা কও। এরপর আমি কথা কইয়া লমু। '
বিয়ের ছয় মাস পরের বাচ্চা নষ্ট করার পর নীলা সাবধানতা অবলম্বন করেছে। ঠিক যখন বেবি নেওয়ার জন্য দুইজন মানসিকভাবে প্রস্তুত হবে তখনই বাচ্চা নিবে। বিয়ের প্রায় আড়াই বছর পর দুইজন সিদ্ধান্ত নেয় তারা এখন বাবা মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
আরো পড়ুন : যেমন শাশুড়ি তেমন বউ (পর্ব- ২)
তখন থেকে দুইজন বেবি নেওয়ার জন্য ট্রাই করছে কিন্তু নীলা আর কনসিভ করছে না। বিয়ের পাঁচ বছর পর থেকে দুইজনের সম্পর্কে বরফ জমতে থাকে। সাথে নীলার শাশুড়ির ব্যবহারও খারাপ হতে থাকে। বাচ্চা না হওয়ার জন্য নীলার শ্বাশুড়ি নীলাকেই সম্পূর্ণ দ্বায়ী করছে।
নীলা বুঝতে পারছে না বাচ্চা না হওয়ার জন্য সে কিভাবে দ্বায়ী হয়! সেও তো মা হতে চাচ্ছে। আল্লাহ না দিলে সে কি করতে পারে!
ধীরে ধীরে নীলা লক্ষ্য করে নিখিল বাসায় দেরি করে ফিরছে। বাসায় ফিরে ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে অথবা মায়ের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মায়ের সাথে আড্ডা দেয়। রুমে এসে ঘুমিয়ে যায়।
এখন তো মাঝে মাঝে গেস্ট রুমে গিয়েও ঘুমায়। নীলার সাথে এমন আচরণ করে যেন বাসায় নীলা নামের কেউ থাকে না। খুব বেশি প্রয়োজন মনে না করলে নীলার কথার জবাবও দেয় না। নীলা তার জীবনে থাকা বা না থাকা আর কোন ম্যাটার করে না এমন একটা ভাব করছে সবসময়।
একদিন নীলা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে দিলো। নিখিলের এমন আচরণের কারণ কি জানতে চাইলো। নীলার কথার জবাব না দিয়ে নীলা কেন চিৎকার চেচাঁমেচি করলো সেই জন্য নিখিল নীলার গায়ে হাত তুললো।
এরপর এমন আচরণ করলে গলা ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবে বলে শাসালো। সেদিনের পর থেকে কথা বা আচরণের একটু উনিশ বিশ হলে নীলার কপালে চড় থাপ্পড় জুটতো। সেসব কথা নীলা কাউকে জানায় নি। নিজের পরিবারকেও না। পরিবার, আত্মীয় - স্বজন, বন্ধুরা জানে নীলা সুখে আছে। তারা সেটা জেনেই ভালো থাকুক।
পরিবার, আত্মীয় - স্বজন আর বন্ধুরা যে ভুল জানে বিষয়টা সেরকম নয়। একটা সময় নীলা ভালো ছিল। সুখেও ছিল। আনন্দে, ফুর্তিতে দিন কাটছিলো। এই বাচ্চা না হওয়ার ইস্যু নিয়ে ওর জীবনে ঝড় আসলো। একটি বাচ্চা সংসার জীবনকে রাঙিয়ে আরো রঙিন করে তোলে।
একটি বাচ্চার বাহিরে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার কি কোন দাম নেই ? আর নীলা যে একদম মা হতে পারবে না বিষয়টা সেরকমও নয়। ও তো একবার কনসিভ করেছিলো। এখন ডাক্তাররা নীলার কোন সমস্যা খুঁজে পায় না। অন্যদিকে নিখিল ডাক্তার দেখাতে নারাজ। তার নাকি কোন সমস্যা নেই! সে নিজেকে সম্পূর্ণ ফিট দাবি করে।
নিখিল বাসায় দেরিতে আসে। দিনে নীলার ফোন ধরে না, মেসেজের রিপ্লাই দেয় না, ছুটির দিনে বাহিরে থাকে। নিখিল কোথায় যাচ্ছে, কি করছে গতকাল রাতে সেসবই জিজ্ঞেস করেছিলো। এই কথার সূত্র ধরে নিখিল নীলার গায়ে হাত তুলে।
আজকে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি নীলা। সকালে শ্বাশুড়ির কাছে নিজের দুঃখের কথা আর নিখিলের বেপরোয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছিলো। শ্বাশুড়ি উল্টো তাকে এতো কথা শুনিয়ে দিলো।
আরো পড়ুন : যেমন শাশুড়ি তেমন বউ (পর্ব- ৩)
'হ্যালো মা! আমি যদি তোমাদের কাছে চলে আসি তোমাদের কোন সমস্যা হবে?'
'তুই আমাদের কাছে চলে আসলে আমাদের সমস্যা হবে কেন, মা? কি হয়েছে ?'
'কিছু হয় নি। আমি তোমাদের কাছে একেবারে চলে আসতে চাই। '
'আসতে চাইলে আসবি। কিছু না হলে নিজের সংসার ফেলে কেউ একেবারে বাবা মায়ের কাছে আসতে চায়। আমাকে বল মা!'
মায়ের নরম সুরের কথা শুনে নীলা কেঁদে দিলো। কান্নার কারণে ঠিকমতো মতো কথা বলতে পারছে না। নীলা কাঁদছে ফোনের এপাশে, মা কাঁদছে ওপাশে।
মা, মেয়ে দুইজনই কাঁদছে। কাউকে কেউ থামানোর চেষ্টা করছে না। স্বান্ত্বনাও দিচ্ছে না। নীলার মা ভাবছে মেয়ে কাঁদুক। কেঁদে মনের কষ্ট হালকা করুক। আর নিজে কাঁদছে মেয়ের বুকে জমানো কষ্টের কথা ভেবে।
'বাবাকে বলো আমাকে আজকে এসে নিয়ে যেতে।'
'প্রতিটা সমস্যার সমাধান থাকে। সমস্যার কথা না বললে সেটার সমাধান হবে কিভাবে, মা?'
'বাসায় এসে বলবো। '
'নিখিলের সাথে ঝগড়া হয়েছে ? আমি নিখিলকে ফোন দিয়ে বলি তোকে নিয়ে আসতে। '
'না! তুমি কাউকে ফোন দিবা না। বাবাকে বলো আমাকে এসে নিয়ে যেতে। আমি একাই চলে আসতাম। ব্যাগ নিয়ে আসতে হবে তাই বাবাকে আসতে বলছি। '
'আচ্ছা! ঠিক আছে। '
নীলার মা রাশেদা বেগম খুব ঠান্ডা মাথার মানুষ। কথা বলেন খুব কম এবং যতটুকু কথা বলেন ভাবনা চিন্তা করে কাজের কথা বলেন। নীলার মন খারাপ এবং অনেক মনোকষ্টে আছে সেটা তিনি মেয়ের কথা শুনে বুঝতে পেরেছেন।
নীলার ফোন কেটে নীলার শ্বাশুড়ীকে তিনি ফোন দিলেন। সম্পর্কে তারা বোন হন। নীলার মা নিখিলের মাকে বুবু বলে ডাকেন। নিজেদের ছেলে মেয়ের বিয়ে দিলেও তারা কথা বলেন নিজিদের শিকড়ের মতো করে এবং সম্পর্কটা সেই বোনের মতোই।
'আসসালামু আলাইকুম, বুবু !'
'ওয়ালাইকুম আসসালাম। তোর মাইয়া তোরে ফোন দিছে ? সব খুইল্লা কইছে ?'
'নীলা ফোন দিছিলো। কি অইছে বুবু ? '
'কি আর অইবো! তোর মাইয়ার আর বাচ্চা কাচ্চা অইবো না। আমার একটাই পোলা। নিজেদের বংশ রক্ষা করোন তো লাগবো, নাকি ? পোলার আবার বিয়া দিমু আমি। '
'কি কও তুমি, বুবু ? তুমি এইডা কি কইতাছো ?'
'যা কইলাম ঠিক কইলাম আমি। মাইয়া নিয়া যা তুই। বাচ্চা দিতারে না। আবার, আমার পোলায় কই যায়, কি করে হেই বিষয়ে তোর মাইয়া মাতবরি করে। এইডা আমার আর আমার পোলার শেষ কতা। '
'শোন বুবু!'
রাশেদা বেগম ফোনে কথা শেষ করার আগে নিখিলের মা জোহরা ফোন কেটে দিলো। রাশেদা বেগম কোনোকিছু না ভেবে নিখিলকে ফোন দিলো। নিখিল রাশেদা বেগমের ফোন দেখেই কেটে দিলো। রাশেদা বেগম বেশ কয়েকবার ট্রাই করলো কিন্তু নিখিল ফোন রিসিভ করলো না। নিখিলকে ফোন ধরাতে না পেরে নীলাকে ফোন দিলো।
'এতো যন্ত্রণার কথা এতদিন আমাকে জানাস নি কেন ?'
আরো পড়ুন : `অভাগা`
'ভেবেছিলাম নিজেই সব ঠিক করতে পারবো। কিন্তু মা আমি পারলাম না!'
'ধৈর্য ধর মা! বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হয়। '
'কতদিন ধৈর্য ধরতে হবে মা ? দুই বছর ধরে সহ্য করছি। আর কত ?'
'দুই বছর ধরে তুই এতো মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আসিস। আমি মা হয়েও বুঝতে পারলাম না! তুই একবারও বলার প্রয়োজন মনে করলি না ?'
'আমি তোমার কাছে আসবো মা! আমাকে নিয়ে যাও তাড়াতাড়ি। '
'আমি তোর বাবাকে এখনই পাঠাচ্ছি। ধৈর্য ধর। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। সব ঠিক হয়ে যাবে। '
জোহরা বেগমের এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে বড়, ছেলে ছোট। মেয়ে জামাইয়ের সাথে লন্ডনে থাকে। জোহরা বেগমের স্বামী দুই বছর আগে ব্রেনস্ট্রোকে মারা যান।
তার স্বামী ব্যবসায়ী ছিলেন। নিখিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছিলো। বাবার মৃত্যুর পর চাকরি ছেড়ে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে। ঢাকায় নিজেদের বাড়ি।
রাশেদা বেগমের তিন মেয়ে। কোন ছেলে নেই। রাশেদা বেগম একজন শিক্ষিকা, আর উনার স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে, এক মেয়ে, আর স্বামীকে নিয়ে বড় মেয়ে সুখে আছে। মেজো নীলা। ছোট মেয়ে এবার ভার্সিটিতে পা দিলো।
রাশেদা বেগম স্বামীকে ফোন দিয়ে যতটুকু না বললেই নয় ততটুকু বলে নীলাকে আনতে যেতে বললেন। স্বামীর সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে, নীলার সাথে কথা বললেন। নীলাকে বললেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে। আর বাসা থেকে বের হওয়ার আগে শ্বাশুড়ি, নিখিলকে বলে যেতে।
নীলার বাবা কবির সাহেব এসেছেন নীলাকে নিতে। মেয়ের বাবা! না পারেন মুখ ফুটে কিছু বলতে, না পারেন মেয়ের যন্ত্রনা সহ্য করতে। মাথা নিচু করে ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। নীলা গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
কবির সাহেব মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু মুখ দিয়ে তিনি কোন কথা বলতে পারছেন না। বাবাদের অনেক সহ্য ক্ষমতা থাকতে হয়। কবির সাহেব চেষ্টা করছেন নিজের সকল সহ্য ক্ষমতা একত্রিত করে নীলার কষ্ট সহ্য করে নিতে। পারছেন না। তবুও চেষ্টা করছেন।
' কবির আইছো ? মেয়েকে নিয়ে যাও। মেয়েকে বুঝাও। আমি নাতি নাতিনীর মুখ দেখতে চাই। অনেক অপেক্ষা করছি। আর পারুম না। '
'বুবু! এসব আপনি কি কন ? আল্লাহ নারাজ হইবো বুবু! '
'সাত বছর হইয়া গেছে। কবে হইবো বাচ্চা ? আমি আর বাঁচমু কয়দিন ? নাতি নাতনির মুখ দেখতাম না ?'
'আল্লাহ চাইলে সব হইবো বুবু! আমার মাইয়ার লগে এমন অন্যায় কইরেন না বুবু!'
'তুমি তোমার মাইয়া এহন লইয়া যাও। পরে এই বিষয়ে কতা কমু। '
'বুবু! আল্লাহর দোহাই লাগি আমার মাইয়ার লগে এমন অন্যায় কইরেন না। আমাগো হাতে তো সকল কিছু থাকে না। উপরে একজন আছেন। তার কাছে আমরা দোয়া করতে পারি, চাইতে পারি। তিনি তো সর্বশক্তিমান। '
নীলা ব্যাগ গুছিয়ে তার বাবার সাথে বের হয়ে গেলো। বের হওয়ার আগে নিখিলকে কয়েকবার ফোন দিয়েছে। নিখিল ফোন ধরে নি। নীলা তখন তার শ্বাশুড়ীকে বলে বাবার সাথে বের হয়ে আসলো।
পুরো রাস্তায় নীলা এবং তার বাবা কেউ কারো সাথে কোন কথা বলে নি। নীলার বাবা শুধু মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার বাবার হাত ধরে রাখা থেকে নীলা বুঝতে পারলো জীবনের এই লড়াইয়ে তার বাবা তার পাশে আছেন। এবং খুব ভালোভাবে আছেন।
'হ্যালো মা! আমি নায়লা বলছি। পাশের বাসার ভাবীর নাম্বার থেকে কল দিয়েছি আমি। আমি আমার নিজের বাসা থেকে পালিয়ে ভাবীর বাসায় চলে এসেছি। আমাকে যেভাবে পারো এখান থেকে নিয়ে যাও মা। এখানে থাকলে আমাকে ও মেরে ফেলবে! না হলে আমি সুইসাইড করবো। এতো অত্যাচার সহ্য করে আমি আর থাকতে পারবো না, মা! আমাকে এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যাও। '
জোহরা বেগমের কয়েক সেকেন্ড লাগলো পুরো ব্যাপারটা বুঝতে। তার একমাত্র মেয়ে নায়লা দুইটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জননী। বিয়ের দুই বছর পর মেয়ের জামাইয়ের কাছে মেয়ে চলে যায়। সেখানেই তার দুই নাতনীর জন্ম হয়েছে। দুই নাতনীকে নিয়ে মেয়ে আর মেয়ের জামাই নিখিলের বিয়েতে এসেছিলো।
আরো পড়ুন : যেমন শাশুড়ি তেমন বউ (পর্ব- ৪)
সেই একবারই মেয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দেশে এসেছিলো। দুই মেয়ের পর একজন ছেলের জন্য নায়লা আবার বেবি নেওয়ার ট্রাই করছে কিন্তু কনসিভ করছে না। এই নিয়ে নায়লা আর তার স্বামীর মধ্যে মাঝেমাঝে ঝগড়া শুরু হয়।
সেই ঝগড়ার সূত্র ধরে নায়লার স্বামী তার গায়ে হাত তোলে। দিন দিন তার হিংস্রতা বেড়ে চলছে। সেদিন নায়লার পেটে লাথি দিয়ে বললো, 'এটা কেমন পেট ? যে পেটে বাচ্চা আসে না। ছেলে সন্তানের জন্ম হয় না!'
পেটে লাথি খেয়ে নায়লা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। বড় মেয়ে কান্না করে পাশের বাসার ভাবীকে ডেকে নিয়ে এসেছিলো বলে নায়লা সেদিন বেঁচে গেছে। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে সেই ভাবীর বাসায় লুকিয়ে আছে। নায়লা সেদিনের পর থেকে ভয় পাচ্ছে এখানে থাকলে তার স্বামী তাকে কবে জানি মেরেই ফেলবে।
ফোনে নায়লার কথা শুনে জোহরা বেগম কাঁদছে। বাসায় পৌঁছানোর পর নীলার মুখ থেকে সব কথা শুনে নীলার বাবা , মা কাঁদছে। সাত আসমানের উপরে বসে সর্বশক্তিমান হাসছেন।