বর্তমানে সম্পর্কগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেন ?
- ফারজানা আক্তার
- জুন ৪, ২০২২
সম্পর্কগুলো কেন দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ? ভালোবেসে দুইজন মানুষ একসাথে থাকবে বলে প্রমিজ করলেও কেন একসাথে থাকতে পারছেন না ? সম্পর্কের শুরুতে একজন অন্যজনের প্রতি অনেক বেশি কেয়ারিং হলেও কিছুদিন পর কেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে ? সবসময় কেনই বা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন ?
বর্তমানে আমাদের অনেকের মনেই এই প্রশ্নগুলো ঘুরঘুর করছে। John Gottman নামের এক ভদ্রলোক ছিলেন। পেশায় মনোবিজ্ঞানী। তিনি ১৯৮৬ সালে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে অনেক ভেবেছিলেন। তারপর গবেষণা শুরু করেন। কলিগের সাথে মিলে তিনি লাভ ল্যাব নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সদ্য বিবাহিত থেকে শুরু করে ২০-৩০ বছর একসাথে কাটিয়ে দেওয়া দম্পতিদের নিয়ে নানানরকম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন।
তারা সম্পর্কে ঠিক কী ধরণের সমস্যা হয়, কেন হয়, কারণ এবং সমাধান সকলকিছুর বৈজ্ঞানিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
তো তাদের একটি এক্সপেরিমেন্ট এমন ছিলো -
স্বামী পাখি খুব পছন্দ করেন। সকালে বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়ার সময় তিনি দেখতে পেলেন উঠানে একটি পাখি কিছু একটা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। তিনি তার বউকে ডেকে বললেন, 'দেখো! দেখো! খুব সুন্দর একটি পাখি।'
আরো পড়ুন : যে মাসে গর্ভবতী হলে প্রিম্যাচিউর বেবি জন্মানোর আশঙ্কা থাকে!
এখানে স্বামী তার বউয়ের কাছ থেকে কোন মতামত চায়নি। নিজের মনের আনন্দটা প্রকাশ করেছেন। তার অবচেতন মন প্রত্যাশা করছে তার বউ তার এই আনন্দের সাথে সামিল হোক। সহমত প্রকাশ করুক।
এখানে তার বউ দুই ধরণের রিএকশন দিতে পারে। প্রথম রিএকশন : স্বামীর সাথে সহমত প্রকাশ করা। দ্বিতীয়টা : বিরক্ত হয়ে কর্কশ সুরে বলা, ' তোমার এই আদিখ্যেতা দেখার সময় আমার নাই। মেলা কাজ পড়ে আছে।'
বিষয়টা অনেক ছোট এবং অনেকের কাছে হাস্যকরও বটে। কিন্তু এর প্রভাব অনেক গভীর।
বউ যদি প্রথম রিএকশন দেয় মানে সহমত প্রকাশ করে তখন তাদের মধ্যে একটি সুন্দর মুহূর্ত তৈরী হবে। পাখি দেখার ছলে দুইজন পাশাপাশি বসবে। পাখি নিয়ে দুইজন কিছুক্ষণ কথা বলবে। ভাবের আদান প্রদান হবে।
বউ যদি দ্বিতীয় রিএকশন দেয় তাহলে স্বামীর মন খারাপ হবে। বিরক্ত হবে, রাগ হবে। এবং এর প্রভাব সারাদিন থাকবে। অফিসে গিয়ে কাজে ভুল করবে। বসের ঝাড়ি খাবে। রাস্তা - ঘাটে বিব্রতকর কিছু ঘটলে মেজাজ আরো বিগড়ে যাবে। রাতে বাসায় ফিরেও মনের অবস্থা একইরকম থাকবে।
মানে ছোট একটা বিষয় পুরো দিনটা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
আরো পড়ুন : ওজন কমাতে শরীরচর্চার ছাড়াও জানুন কিছু বিষয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সস্পর্ক এবং সংসার এই ছোট ছোট কারণেই ভাঙ্গে। এবং এই ব্যাপারটা এক দুইদিনে ঘটে না। যেমন : আপনার বউ হয়তো খুব শখ করে আপনাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কেক বানিয়েছেন। এখন কোন কারণে সেটা কেক না হয়ে অন্যকিছু হয়ে গেছে। বা মুখে দেওয়ার পর আপনার আছে বিস্বাদ লেগেছে।
এই কারণে আপনি বিরক্ত হলেন, দুই চারটা কথা শুনালেন বা হাসাহাসি করলেন। আপনি শুধু কেকের স্বাদটাই দেখলেন, আপনার বউয়ের এফোর্ট বা ইনটেনশনটা দেখলেন না।
তখন আপনার বউয়ের খারাপ লাগবে, কষ্ট পাবে। আপনি শুধু খাবারের স্বাদ খুঁজে বেড়ালেন, তার পরিশ্রম বা ইনটেনশনকে মূল্যায়ন করলেন না। সম্পর্কটা ভালো যাবে ? আপনাকে আর সারপ্রাইজ দেওয়ার আগ্রহ থাকবে তার ?
আপনার কাছে তার নিজেকে তখন গুরুত্বহীন মনে হবে। যার কাছে মানুষ নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করে তাকে মন খুলে ভালোবাসা যায় ? সম্পর্কটা আগাবে ?
এই পাখি দেখা বা কেক বানানোর মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো জমে জমে একদিন অভিমানের পাহাড় হয়, জীবনসঙ্গীর প্রতি বিতৃষ্ণা আসে। সম্পর্ক খারাপ হয়ে হয়ে ভাঙ্গনের দিকে যায়।
John Gottman নামের ভদ্রলোক তার কাছে আসা প্রতিটি কাপলের উপর একটানা চার বছর ধরে নজরে রেখেছেন। যারা সুখী দম্পতি তারা এই ছোট ছোট বিষয়গুলোর যত্ন নিয়েই সুখী, এবং যারা অসুখী তারা এই ছোট ছোট বিষয়গুলো ইগনোর করেই অসুখী।
আরো পড়ুন : শিশু মাথায় ব্যথা পেলে কিছু লক্ষণ অবহেলা করবেন না!
একটি সম্পর্ক কোনদিকে মোড় নিবে সেটা পুরোটাই নির্ভর করে এই ছোট ছোট বিষয়গুলোতে কারা কতটা গুরুত্ব দেয় কিংবা ইগনোর করে।