প্লাস্টিকের জিনিস আসলে কতটা নিরাপদ?
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- অক্টোবর ৬, ২০১৮
‘প্লাস্টিক’ আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে মিশে আছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়া আমাদের জীবন এখন চিন্তাই করতে পারি না। কম বেশি সব রকম কিছুতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। প্লাস্টিকের ভাল-মন্দ দুটি দিকই আছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বেশিরভাগ সময়ই প্লাস্টিকের বক্সে খাবার রাখতে নিষেধ করেন। কারণ এর থেকে এক ধরনের রাসায়নিক বের হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তবুও গৃহস্থালীর নানা কাজে নিত্য প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি ব্যবহার করা হয় বহুল পরিমাণে।
হাত থেকে পড়ে গেলে সহজে ভাঙে না, পরিষ্কার করাও সহজ- ব্যবহারের এমন সুবিধার জন্য প্লাস্টিকের জিনিস এখন জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি রাখা থেকে শুরু করে- তেল, রান্নাঘরের মশলার কৌটা, টিফিন বক্স, শ্যাম্পু ও বাচ্চার খাবার রাখাসহ সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। কিন্তু অনেকেই জানেন না, দিনের পর দিন একই প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর। জানুন বিস্তারিত :
- প্লাস্টিকের বক্সে ১ দিনের বেশি খাবার ফ্রিজে রেখে খাওয়া একদমই উচিত নয়। বাসায় যতটা সম্ভব কাচের বোতলে পানি রাখুন, কাচের জগ ব্যবহার করুন।
- প্লাস্টিক কন্টেইনারে কখনোই খাবার গরম করবেন না। এমনকি তা মাইক্রোওয়েভ সেফ হলেও প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করা ঠিক নয়।
- প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার রাখাও ঠিক নয়। প্লাস্টিকের পাত্র যতটা সম্ভব গরম পানির থেকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত।
- অনেকেই কন্টেইনার বা বোতল জীবাণুমুক্ত করার জন্য গরম পানিতে তা ধুয়ে নেন। অনেকে আবার পানি গরম রাখতে এয়ারটাইট প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন। কিন্তু এই অভ্যাস থেকে দূরে থাকাই ভালো।
- কাঁচ বা স্টিলের বাসনের মতো প্লাস্টিক কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যায় না। পুরনো প্লাস্টিকের ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক।
- একবার পলি মলিকিউল (অণু) তৈরি করলে তা আর বিনাশ হয় না। পুড়ে ভস্ম হয় না। ডোবে না। মাটিতে মেশে না। মাটির স্তর পৃথক হয়ে থাকে। মাটির অক্সিজেন শোধনের ক্ষমতা হারায়। মাটির মধ্যে অসংখ্য জৈব পদার্থের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। নগরীতে ড্রেইন বদ্ধ করে দেয়। জলাশয় দূষিত করে ফেলে। এই অণু অজয় অমর অক্ষয়। এই অমর শত্রুকে আমরা ঘরে তুলেছি।
- চিকিত্সকেরাও বলছেন, পানীয় জল বা নরম পানীয়ের এই ধরনের প্লাস্টিকের বোতলে জল ভরে বার বার খাওয়া মানুষের শরীরের জন্য যথেষ্টই ক্ষতিকারক। নরম পানীয় বা প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের বোতলগুলির ফাঁকা হওয়ার পরে সেগুলো নষ্ট করে দেওয়ার কথা বোতলের গায়েই লেখা থাকে। কার্যক্ষেত্রে আমরা করি ঠিক উল্টোটা।
- দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিত্সক গৌতম ঘোষের কথায়, যত সময় যায়, এই ধরনের বোতলগুলোর প্লাস্টিকের সঙ্গে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। একে বলা হয় ‘লিচিং’। এতে প্লাস্টিকের মধ্যে মিশে থাকা রাসায়নিক অংশ জলের সঙ্গে মিশতে থাকে। আর সেই জলই পান করেন মানুষ। সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এই লিচিং-এর ফলে মানুষের দেহে ক্যানসারের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- পলিব্যাগ ও পলি প্লাস্টিকের পাত্রে দীর্ঘ সময় তরল ও শুকনো যে কোন খাদ্যদ্রব্য বা কোন জিনিস রাখা হলে ট্রেস অ্যামাউন্ট-এ ঢুকে পড়ে। ট্রেস অ্যামাউন্ট বলতে বোঝায় এমন রাসায়নিক যৌগ যা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। সূক্ষ্ম পরীক্ষায় কেবল শনাক্ত করা যায়। মনে করা হয় পলি প্লাস্টিকের ভেতরে যা রয়েছে তা অবিকৃত। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পলি ব্যাগে মাছ-গোশত ভরে ফ্রিজে রেখে দেয়ার পর অনেকটা সময় ধরে একটু একটু করে রান্না করে খেলে কিছুটা টের পাওয়া যায়। স্বাদের পরিবর্তন ঘটায়। যে পরিবর্তন বিষাক্ত টক্সিক।
সূত্র : সাজগোজ