আনারসের উপকারীতার সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- ফাতেমা আক্তার রিপা
- জুন ৭, ২০২০
আনারস আমাদের সকলের অতি পরিচিত একটি ফল। হলুদ দেহ আর সবুজ চুলের এই ফল গ্রীষ্মকালীন জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম।আনারসের বৈজ্ঞানিক নাম এনানাস কমোসাস (Ananas Comosus)।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল,রাঙ্গামাটি,চট্টগ্রাম,ঢাকা,ময়মনসিংহ, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, সিলেট ও মৌলভিবাজার জেলায় প্রচুর পরিমাণে আনারস উৎপাদিত হহ।এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলায় সব চেয়ে বেশি আনারস উৎপাদিত হয়।এখানে মোট জাতীয় উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ আনারস উৎপাদিত হয়।
পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৯০ ধরনের আনারস উৎপাদিত হয়ে থাকে।বাংলাদেশে মূলত তিন ধরনের আনারস বেশি উৎপাদিত হতে দেখা যায়।এই তিন ধরনের আনারসের জাত হচ্ছে জায়েন্ট কিউ,হানি কুইন না মধুরানী এবং ঘোড়াসাল।বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩৩৪৯৮ একর জমিতে মোট ২০০৭০১ টন আনারস উৎপাদিত হয়ে থাকে।
আনারসের অনেক উপকারীতার মধ্যে প্রধান কয়েকটি উপকারীতা হলোঃ
১.ভিটামিন সি- নিউইয়র্কের রন্ধনসম্পর্কীয় নিউট্রিশনিস্ট এবং সব ধরনের প্রাকৃতিক ডায়েবেটিস এর রান্না সম্পর্কিত বইয়ের লেখক জেকি নিউজেস্ট আর ডি এন বলেন আনারসে লক্ষনীয় নিউট্রিয়েন্ট হলো ভিটামিন সি যা রোগ _প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে এবং এন্টি অক্সিডেন্টের উপকারীতা প্রদান করে।এক কাপ আনারসে ৭৮.৯ মি.গ্রা ভিটামিন সি থাকে যা প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কিংবা মহিলা উভয়ের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এর পরিমাণের খুব কাছাকাছি।
২.ওজন কমায়-২০১৮ সালের এপ্রিলে এক গবেষণায় পাওয় যায় আনারসের জুস শরীরে ফ্যাট বৃদ্ধি পাওয়া কমায়। যদিও এই ব্যাপারে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে বিজ্ঞরা বলছেন।আনারস স্ন্যাক হিসেবেও খাওয়া যাবে।এতে ক্যালরি কম থাকলেও ভিটামিন ও মিনারেল বেশি পরিমাণে আছে।এন্ড্রিওজ বলেন, এমন কোন ফল নেই যা সরাসরি ওজন কমায়।কিন্তু কিছু ফল আছে যা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে।আনারস তার মধ্যে অন্যতম।
৩.হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে-রোচেস্টার মেডিকেল সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে ক্যালসিয়াম এর সাথে সাথে ম্যাঙ্গানিজ ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।এক কাপ আনারসে শতকরা ৭৬ ভাগ ম্যাঙ্গানিজ থাকে।দৈনিক একজন মানুষের ১১ মি.গ্রা ম্যাঙ্গানিজ গ্রহণ করা উচিত।কোন ভাবেই এর বেশি নয়।আল্লাহ না করুন নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪.এন্টি অক্সিডেন্টের উৎস- ২০১৪ সালের জুনে এক গবেষনায় বলা হয়েছে আনারস বিভিন্ন এন্টি-অক্সিডেন্টের একটি অনেক বড় উৎস। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফ্ল্যাবোনয়েডস,ভিটামিন সি এবং ফেনোলিকস।
৫.ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন_মায়ো ক্লিনিকের তথ্য মতে যখন আমাদের শরীরের অস্বাভাবিক কোষ গুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং স্বাস্থ্যকর কোষের তুলনায় বেশি হয়ে যায় তখন ই আমরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হই।যেহেতু ক্যান্সার নিরাময়ের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয় নি তাই বিশেষজ্ঞরা ক্যান্সার থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলতে বলে থাকেন।যেগুলোতে আসলে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকবে।আর এই চাহিদা আনারসের মাধ্যমে খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
৬.এন্টি ফ্ল্যামেটরি ডায়েট- হার্ভাড স্বাস্থ্য প্রকাশক এর মতে অতিরিক্ত ইনফ্ল্যামেশন আমাদের ডায়েবেটিস,ক্যান্সার,আলজেইমার মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত করতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে আনারস শরীরের ইনফ্ল্যামেশন এর পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৭.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- নয় মাস ব্যাপি চলা এক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে যেসব বাচ্চারা আনারস খায় তাদের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হবার ঝুকি অনেক কম যারা খায়না তাদের থেকে।প্রতিদিন ১৪০ থেকে ২৮০ গ্রাম আনারস খেতে পারলে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং অনেক ইনফেকশন হওয়া থেকেও বাঁচা সম্ভব।এছাড়া আনারস ঠান্ডা _সর্দি এসব থেকে রক্ষা পেতেও সাহায্য করে।
আবহাওয়া পরিবর্তন এর ফলে অনেকেই ঠান্ডা, জ্বর সহ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।তাই গ্রীষ্মের উত্তপ্ত আবহাওয়া ও রোগ_বালাই এর থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে আনারস কে সাথী করে নেয়াই উত্তম।দেশীয় ফলের স্বাদ ও নেওয়া হবে আর রোগ -বালাই এর বিপক্ষে যুদ্ধ ও করা হবে।
সবাই সুস্থ থাকুন।ভালো থাকুন।।