‍‍`তানজানিয়ার খাবার‍‍`

  • সুমনা বাগচী
  • ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১

তানজানিয়া নাম টা শুনলেই মনে পড়ে আফ্রিকার জঙ্গল আর সিম্বার কথা। মনে পড়ে চাঁদের পাহাড় গল্প টি পড়ে,আফ্রিকা যাবার ইচ্ছা হতো। কল্পনায় ভাবতাম, মাসাই দের কথা,তাঁদের জীবন যাপন আরো অনেক কিছু। এরপর আমার দিদি ও জামাই বাবু কর্মসূত্রে রওনা দিলেন সুদূর আফ্রিকার তানজানিয়া তে।সেখানে দারেসালাম এ থাকতেন তাঁরা। জায়গাটি ছিল একটি পোর্ট এলাকা।

চারপাশে বেশ আধুনিক বাড়ী,সুন্দর রাস্তা ঘাট,রাস্তার পাশে সবজি আর ফল নিয়ে পসার চলতো। লঙ্কা কে আফ্রিকার স্বহেলি ভাষায় বলা হয় পিলি পিলি,মুসুর ডাল কে বলা হয় ডেঙ্গু।আহ্বান জানানো হতো,জাম্বো হাবারী বলে। এই কথা গুলো শোনার আর দেশ টি দেখার ভাগ্য হয়, দু হাজার দশ সালে।খুব উত্তেজিত ছিলাম নতুন দেশটিকে দেখার জন্য। সেই মতো এক বছরের ছেলেকে নিয়ে বাবা মায়ের সাথে রওনা দি, চাঁদের পাহাড়ের দেশে।

আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে হলে যেভাবে শসা খাবেন, জেনে নিন বিস্তারিত

আফ্রিকার চারদিকে সবুজ সতেজ অনুভূতি। চারদিক ভীষণ স্নিগ্ধ।রাস্তায় ফল বিক্রি হচ্ছে,পথে যারা ভিক্ষা করছেন তারাও বেশ ঝকঝকে আর মুসম্বী লেবু খাচ্ছেন।একটা কথা এখানে অবশ্যই বলতে হবে,যতই আমরা রেসিসিম নিয়ে কথা বলি না কেনো,আফ্রিকাতে প্রত্যেকটি মানুষের ত্বক যথেষ্ট উজ্জ্বল।আর অবশ্যই এর প্রভাব ছিল এদের খাওয়া দাওয়ার উপর।তাই যতই তাদের দেখছিলাম,মুগ্ধ হচ্ছিলাম। এরপর আসি আমার জীবনে প্রথম দর্শন ও খাবারের কথায়.....  

সকেলা চিকেন: এটি একটি বিশেষ রেসিপি যা আমাদের চিকেন রোস্টকে হার মানাবে।চিকেন হাড়শুদ্ধু পিস গুলোকে কিছু বিশেষ মশলাতে মাখানো হতো।কিছু সিক্রেট মশলা, পিরি পিরি,তেঁতুলের ক্বাথ,কিছু রোস্ট করা গোটা মশলা। এরপর সম্পূর্ণ কয়লার আঁচে পোড়ানো হতো।তারপর তার উপর আবার মাখন,তেঁতুলের ক্বাথ মাখানো হতো। সার্ভ করা হতো এখান কার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই যা ওখানে ফ্রেঞ্চ চিপস নামে পরিচিত।তার সাথে শুকনো লঙ্কা তেতুঁল বাটা সস আর অবশ্যই ঠাণ্ডা বিয়ার। এ এক অন্যরকম স্বাদের রান্না যা কলকাতায় বানিয়েও স্বাদ পাইনি।

আরো পড়ুনঃ কোন নারীদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি জানুন!

উগালি: ঠিক ভাতের মতোই কিন্তু ঠিক ঝরঝরে ভাত না।বেশ স্টিকি রাইসের মত, হাতে সহজে গোল্লা বানিয়ে খাওয়া যায়।আফ্রিকান দের সব থেকে পছন্দের খাবার।

নাইল পার্চ: এটি একটি বিশেষ ধরনের মাছ যা নীল নদে পাওয়া যায় আর তার নাম মিলিয়ে এই নাইল পার্চ, মাছটি বেশ পরিচিত। এমিরেটস এ দুবাই থেকে তানজানিয়া রওনার সময় এই মাছটি আমাদের ডিনারে দেওয়া হয়।তখন যদিও কিছুই বুঝিনি শুধুই স্বাদ গ্রহণ করেছি। পৌঁছে দিদির কাছে এই মাছটি খেলাম। পাতলা ঝোল রান্নায়, কাতলা, রুই ও ভেটকি মাছের মিলিত একটি স্বাদ। নীল নদের মাছ খাচ্ছি ভেবেই বেশ উত্তেজিত ছিলাম আরকি।

এছাড়াও নানান ভিন্ন স্বাদের খাবার খেয়েছি। তবে আফ্রিকান সিগনেচার ডিশ অবশ্যই উপরের বলা বিশেষ রান্নাগুলি। তাছাড়া ফল খাওয়া কম্পালসারি ছিল।স্ট্রবেরি, আম,বেরি,আনারস তো ছিলোই।ওখানে গিয়ে প্রথম ফ্রোজেন পরোটা খেয়েছিলাম।তাছাড়া আফ্রিকান কফি জগৎ বিখ্যাত। এরপর আমরা গেছিলাম সাফারি তে।সেখানে দেখা হয় মাসাই দের সাথে।তাদের বিশেষত্ব ছিল শিকার করে সেই জীবের উষ্ণ রক্ত পান। যদিও বিষয়টি তাদের কাছে একটা রিচুয়াল।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে গর্ভাবস্থায় খেতে হবে সাতটি খাবার

আর মাংস পুড়িয়ে খাওয়া টা তাদের কাছে উপাদেয়। এর একটা ব্যাখ্যা তাদের কাছে,এই শক্তিতেই সিংহের এলাকায় এরা সাহসিকতার সাথে বাস করে। আর সিংহের আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে তাদের নিজস্ব তৈরী অস্ত্রের দ্বারা আর শিকার করতেও এর ব্যবহার করা হয়।সত্যি খুব আশ্চর্যের জীবন যাত্রা এদের। বেশ ভালো লাগতো যখন দিদির কোনো বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন হতো,তাদের বাড়িতে উপস্থিত থাকা রাঁধুনি অর্থাৎ আফ্রিকান মহিলাদের বাঙালি খাবার তৈরি করা।তাঁদের বাঁধাকপি কাটা দেখে অবাক হতাম।সাথে দই বেগুন,ডাল, মিষ্টি সব কিছুই তারা শিখে নিতেন অনায়াসে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment