নিক ভুজিসিক! হাত পা ছাড়াই সফল যিনি
- ফারজানা আক্তার
- জুন ২, ২০২০
নিক ভুজিসিক! পুরো নাম নিকোলাস জেমস ভুজিসিক। হাত পা ছাড়া যিনি জন্ম নিয়েছেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এবং আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এবং এতটাই সফলভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি এখন সারা বিশ্বের বহু মানুষের অনুপ্রেরণা।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে নিকের জন্ম। হাত, পা ছাড়া জন্ম নিলেও নিকের বাবা মা নিককে অবহেলা করে নি। তারা ঠিক নিককে বুকে টেনে নেন। নিকের হাত, পা ছাড়া জন্ম নেওয়াকে তারা 'ঈশ্বরের ইচ্ছা' বলে ধরে নেন। টেট্রা এনিমেলিয়া সিনড্রোম’ এর ফলে মানুষ হাত–পা ছাড়া জন্ম নেয়। WNT3 জিনের কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। ভ্রুণ অবস্থায় যখন মানুষের হাত, পা সৃষ্টি হতে থাকে তখন WNT3 জিনের কারণে হাত, পা সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়।
এর ফলে অন্যান্য বিভিন্ন অঙ্গও স্বাভাবিক গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। নিকের শুধু হাত–পা সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়েছে, বাকি সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো।
নিকের বাম কোমরের নিচে দুই আঙুল বিশিষ্ট পরিণত একটি পা আছে। নিক সেই পায়ের সাহায্য চলাফেরা করেন। আমরা সুস্থ হয়েও যেখানে পড়াশোনা করতে আমাদের ভালো লাগে না সেখানে নিক ২১ বছর বয়সে ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং ও অ্যাকাউন্টিং এর মত বিষয় নিয়ে দুইবার স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
নিকের যখন ১৭বছর বয়স, তখন হাইস্কুলের একজন দারোয়ান তাকে জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করে নিক ৫৩বার রিজেক্ট হয়েছেন। তারপর যখন প্রথমবার মঞ্চে উঠলেন তখন দর্শক সারি পুরোটা খালি হয়ে গিয়েছিলো।
নিক হাল ছাড়েন নি। চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। ৫৩বার তো অনেক দূরে!! আমি নিজে ৩/৫বার রিজেক্ট হলে হয়তো হাল ছেড়ে খড়কুঁটোর মতো ভেসে যেতাম।
নিকের চেষ্টা ধীরে ধীরে সফল হতে শুরু করলো। যখন থেকে অল্প স্বল্প দর্শকের উপস্থিতিতে বক্তৃতা দিতে শুরু করলেন, তার কিছুদিনের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় হতে শুরু করলেন। ঘন্টায় ১৮০০ মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য 'গিনেস বুকে' তার নাম উঠেছিলো। পায়ের সেই দুইটি আঙ্গুল দিয়ে তিনি এতো দ্রুত টাইপ করেন যা অনেক সুস্থ মানুষ পারেন না। মিনিটে তিনি ৪৭টি শব্দ টাইপ করতে পারেন।
নিক তার সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে ৫টি উপমহাদেশের ৬০টি দেশ ঘুরে প্রায় ৩০লক্ষ মানুষের কাছে অনুপ্রেরনামূলক গল্প পৌঁছে দেন।
২০১০ সালে তার রচিত প্রথম বই “Life Without Limits: Inspiration for a Ridiculously Good Life” প্রকাশিত হয়। এই বইটি প্রায় ৩০টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। এই বইটি আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার খেতাবও অর্জন করে। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫টি বই প্রকাশ করেন। সব কয়টা বই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০১২ সালে কানাই মিয়াহারার সাথে নিক বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। বর্তমানে তারা দুইটি ছেলে এবং যমজ কন্যা সন্তানদের বাবা মা।
মিয়াহারাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো আপনার সন্তান যদি নিকের মতো হয় তখন কি করবেন? মিয়াহারা উত্তর দিয়েছিলো, 'আমি আরেকজন নিক ভুজিসিক তৈরী করবো। '
নিক ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া, লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় ‘Life Without Limbs’ নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া Attitude is Altitude নামে তাঁর আরও একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠন থেকে দুর্বলদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করার জন্য প্রচারণা চালান । এছাড়াও যুব সমাজকে লক্ষ্য করে “No Arms, No Legs, No Worries!” নামের একটি ডিভিডি প্রকাশ করেন।
‘দ্যা বাটারফ্লাই সার্কাস” চলচ্চিত্রটিতে “উইল” চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করার জন্য ২০১০ সালে নিক ভুজিসিক “Method Fest Independent Film Festival” এ সেরা অভিনেতা পদক লাভ করেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৯ সালে “Doorpost Film Project’s” এ প্রথম পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৫ সালে যুব ‘অস্ট্রেলিয়ান অব দ্যা ইয়ার’ পুরস্কারের জন্য তিনি মনোনয়ন লাভ করেন।
নিক বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় বলেন,
“আমি উঠে দাঁড়াবার জন্য শতবার চেষ্টা করবো, যদি শতবারই ব্যর্থ হই তবুও ব্যর্থতা মেনে নিয়ে সেটা ছেড়ে উঠবো না। আমি আবার চেষ্টা করবো এবং বলবো, এটাই শেষ নয়”। দুই হাত, পা ছাড়াই যদি নিক এতো কিছু করতে পারে, আমার দুই হাত পা নিয়েও কিছু করতে পারবো না? হাল ছাড়ার আগে একবার ভেবে দেখা উচিত।