৯০হাজার টাকায় শুরু খেলনার কারখানায় এখন ৮০০কর্মী!
- ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
- নভেম্বর ২৫, ২০২০
খালি হাতে ঢাকায় এসে ১২ বছর বয়সে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। সময়টা ২০০৩ সালের শুরুতে। কাজের সুযোগ পান পুরান ঢাকার ছোট কাটরা এলাকার নাসরিন টয় কারখানায়। সেখানে বাচ্চাদের খেলনা তৈরি হয়। তবে ওই সময়ে দেশি খেলনার চেয়ে বিদেশি খেলনার বাজার বড় ছিল। ওই কারখানায় বিদেশে খেলনা আনা হতো তা অনুসরণ করে দেশে খেলনা তৈরির চেষ্টা করা হতো। আর সেই পণ্য নেড়েচেড়ে আমান উল্লাহ ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন খেলনা তৈরির কলাকৌশল। বিদেশে এসব খেলনার পেছনে এতটা সময় দিয়েছিলেন যে পাঁচ বছরে মাত্র চার ঈদে গ্রামে গিয়েছিলেন।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ৩ উপায়
১৭ বছর ৮ মাস বয়সে নিজের জমানো কিছু টাকা, মা ও বোনের গয়না বিক্রি এবং প্রবাসে থাকা বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে ছোট আকারে খেলনা তৈরির কারখানা চালু করেন। শুরুতে সব মিলিয়ে পুঁজি ছিল ৯০হাজার টাকা। আমান উল্লাহর আমান প্লাস্টিকের যাত্রা ছিল এমনই। পুরান ঢাকার চকবাজার অফিসে বসে আমান উল্লাহ বলেন, 'এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন আমার কারখানায় ৮০০ শ্রমিক। আগে চীনের খেলনা দিয়ে বাজার ভরা থাকতো। এখন বাজারের ৮০ শতাংশ খেলনায় আমাদের দেশের তৈরি।' ২০০৮ সালে আমান প্লাস্টিক যখন কার্যক্রম শুরু করে, তখন অন্যের কারখানা থেকে খেলনা তৈরি করে বাজারে দিত।
আমান প্লাস্টিক ইসলামপুর থেকে মোল্ড (হুবহু আদলে তৈরি একটি কাঠামো) তৈরি করে নিত। প্রথম দিকে শুধু বাচ্চাদের ঝুনঝুনানি তৈরি করে বাজারে দিত। আর এখন আমান প্লাস্টিক এ কাজ করেন ৮০০কর্মী। ৪ টি কারখানায় ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গায় তৈরি হচ্ছে ৬০ ধরনের খেলনা। নানান ধরনের গাড়ি, মোটরসাইকেল, উড়োজাহাজ, খেলনা পিস্তল, ফিশিং গেম, গিটার সবই তৈরি হচ্ছে আমানের কারখানায়। এখন বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার খেলনা বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু দেশে নয়, প্রতিবেশী ভারতীয় যাচ্ছে এখন আমানের খেলনা। ১৭ বছর আগে খালি হাতে ঢাকায় আসা আমান উল্লাহ এখন নিজের গাড়িতে চড়েন।
আমান উল্লাহ বলেন,'২০১২ সালে খেলনা কারখানা দেখতে চীনে যাই। খেলনা তৈরির সব প্রযুক্তি দেখে আসি। তখনই পরিকল্পনা করি, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় খেলনা উৎপাদকে পরিণত হব। এরপর চীন থেকে মোল্ড এনে খেলনা তৈরি শুরু করি।' ওই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ঋণ কর্মসূচি চলছিল। আমানুল্লাহ আইডিএলসি থেকে ২০১৩ সালের ১০লাখ টাকা ঋণ নেন। কারখানা স্থাপন করেন আধুনিক যন্ত্র। এরপর তার খেলনা আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পায়।
আরো পড়ুনঃ যেসব খাবার কাঁচা খাবেন না
আমান উল্লাহ বলেন,'আমাদের খেলনা চীনের চেয়ে ভালো হবে, সেই চেষ্টা করেছি। সেটা পেরেছি বলে ভোক্তারাও এখন আমাদের খেলনা নিচ্ছে। দিনরাত পরিশ্রম করে আজ আমি এই পর্যায়ে।' বাংলাদেশের প্রায় দেড়শ প্রতিষ্ঠান খেলনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। আগে ৮০ শতাংশ খেলনা বাইরে থেকে আসতো, এখন আসে ২০ শতাংশ। ৮০ শতাংশ যোগান দিচ্ছেন আমানের মতো উদ্যোক্তারা। আমার যখন ভালো মানের খেলনা উৎপাদন শুরু করেন, তখন স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাকে টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। ফলে কোন ধরনের অর্থ সংকটে পড়েন নি, খেলনা উৎপাদন করে দায় শোধ করেছেন।