
ধনীদের শীর্ষ তালিকায় থাকা ওয়ারেন বাফেটের জীবনী
- ইয়াসিন প্রধান সাজিদ
- জুন ২২, ২০২১
ব্যবসা জগতের কিংবন্তী বলা হয় যাকে আর মাত্র কিছু টাকার হকার থেকে ধনীদের তালিকায় শীর্ষে যে পৌছে গিয়েছিলো তার নাম ওয়ারেন বাফেট।
তার পথচলা টা অন্যান্য গল্পগুলোর মতই কঠিন বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে হয়েছে তবে প্রত্যেকটা জেনারেশনের জন্যই অনুপ্রেরণা জোগায় এই ওয়ারেন বাফেটের জীবনী।
আরো পড়ুনঃ মানসিক চাপ কমাবে তুলসী পাতা
বলা হয় ওয়ারেন বাফেটের ব্যবসাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। ছোটবেলা থেকেই তার ভাবনা ছিলো কীভাবে টাকা কামানো আর সঞ্চয় করা যায়।
কিভাবে আরো কিছু ভালোভাবে আয় করা যায়। তার পারিবারিক অবস্থা যদিও খুব বেশি খারাপ ছিল না। বাফেট বেশি টাকা আয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি চুইংগাম, কোল্ড ড্রিংকস এমনকি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনও বিক্রি শুরু করেছেন। বেশি থেকে বেশি টাকা আয়ের জন্য দাদার মুদি দোকানে কাজ করতেন। একদিকে দোকানে কাজ অন্যদিকে পত্রিকার হকারি, গলফ বল বিক্রি। সেই মুদি দোকানে কাজ করে আর হকারের কাজ করে বাফেট হয়ে যায় আজকের পৃথিবীর ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শিরোমণি ওয়ারেন বাফেট। তার জীবনের উত্থান, সহজ সাধারণ জীবনধারা এবং জীবন দর্শনের নানাদিক নিয়েই এ আয়োজন।
সব মিলেমিশে তৈরী করেছে আজকের এই ওয়ারেন বাফেটের আকর্ষনীয় অনুপ্রেরণামূলক জীবনী। ধনীদের শীর্ষ তালিকায় যার নাম ওয়ারেন বাফেটের জন্ম আমেরিকার নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহাতে ১৯৩০ সালে। তার বাবার নাম হাওয়ার্ড বাফেট ও মায়ের নাম লিলা বাফেট। তার পুরো নাম ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট। ১৯৪২ সালে বাফেটের বাবা কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং তারা সপরিবারে ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে আসেন।
আরো পড়ুনঃ তিন কবুল বলা সহজ, কিন্তু সত্যিকার অর্থে স্বামী হয়ে উঠা কঠিন।
১৯৪৫ সালের কথা। বাফেটের বয়স তখন ১৫। ওই সময়ই তার এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবহার করা একটি পিনবল মেশিন কেনেন মাত্র ২৫ ডলারে। মেশিনটি বসানোর মতো জায়গা ছিল না তাদের। তারা এক নাপিতের দোকানের ভিতরে তা বসিয়ে দিলেন। এর মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তারা আয়ের টাকা এবং সঞ্চয় এর মাধ্যমে একই রকম তিনটি মেশিন বসান বিভিন্ন স্থানে। এভাবেই কৈশোর বয়স থেকেই ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন বাফেট।
অর্থ-উপার্জন এবং সংগ্রহের প্রতি বাফেটের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল শৈশবেই। ছোট থেকেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা-পয়সা রোজগারের চেষ্টা চালাতেন তিনি। শৈশবেই শেয়ার বাজার বিনিয়োগে আগ্রহ জন্মায় বাফেটের। দশ বছর বয়সে বাফেট নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ দেখার জন্য নিউইয়র্ক শহরে আসেন। তার জীবনের প্রথম তিনটি শেয়ার কেনেন ১১ বছর বয়সে।
আরো পড়ুনঃ মাত্র ৩টি খাবার পরিষ্কার রাখবে আপনার লিভার
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওয়ারেন বাফেটকে একজন জীবন্ত কিংবদন্তি বলা চলে। তার জীবনের কৌশল, আদর্শ, সাফল্য নিয়ে বলে শেষ করা যাবে না। তবে ওয়ারেন বাফেট নিজের জীবন থেকে নেওয়া কিছু শিক্ষা-পরামর্শ তার ওয়েবসাইট ও নানা ইন্টারভিউতে তুলে ধরেছেন.
বাফেটের আরেকটি বিশেষতৃব হলো গ্রাহামকে আকৃষ্ট করার জন্য তার দি ইনট্যালিজেন্ট ইনভেস্টর বইটি সম্পূর্ণ মুখস্থ করে ফেলেছিলেন বাফেট। ১৯৫১ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন বাফেট। তার এরকম মহত্ব ছাড়াও তার জীবনে ছোট খাটো এবং আকর্ষনীয় আরো অনেক গুন ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমে বাফেটকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে।
তার এমন কাজস্বরুপ একটি মন্তব্য রয়েছেঃ কখনো একটিমাত্র আয়ের উৎসের ওপর নির্ভরশীল হবেন না। দ্বিতীয় কোনো উৎস তৈরির জন্য বিনিয়োগ করুন।
আরো পড়ুনঃ কলা খুব সহজে পচে যায়? কলার পচন রোধ করার ৬টি দারুণ কৌশল
ব্যয় নিয়ে বাফেটের মন্তব্য ছিলো: আপনি যদি এমন কিছু কেনেন যা আপনার দরকার নেই, তাহলে শিগগিরই (দৈনন্দিন খরচ মেটাতে) আপনার দরকারি জিনিসপত্র বিক্রি করে দিতে হবে। তাই হিসাব করে ব্যয় করতে হবে। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ছিল খরচ করে যেটুকু বাকি থাকে তা থেকে সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয় করে যা থেকে যায় সেখান থেকেই খরচ করুন। ঝুঁকি নেওয়ার সময় কখনোই উভয় পা পানিতে রেখে নদীর গভীরতা পরিমাপ করতে যাবেন না। অর্থাৎ, সব সময় কিছু সম্বল রেখে দেবেন। পুরোটাই ঝুঁকি নেওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন না। বিনিয়োগের জন্য সবগুলো ডিম একই ঝুড়ির মধ্যে নেবেন না। অর্থাৎ, একটি মাত্র ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করে ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলো খাতে ইনভেস্ট করুন, যাতে মূলধন হারানোর ঝুঁকি কম থাকে।সততা হচ্ছে একটি অত্যন্ত ব্যববহুল উপহার; যেনতেন লোকদের নিকট এটি আশা করবেন না যেন!
২০০৮ সালে বাফেট বিশ্বজুড়ে চমক হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি মাইক্রোসফট গুরু বিল গেটসকে হটিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষে পরিণত হন। ফোর্বসের মতে তখন তার সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। তবে ইয়াহুর মতে তার তখনকার সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর আগে পর পর ১৩ বছর ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেবে বিশ্বের এক নম্বর ধনী ছিলেন বিল গেটস। এর পর ২০০৯ সালে গেটস তার শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেন। দ্বিতীয় স্থানে চলে আসেন ওয়ারেন বাফেট।
তার জীবনী থেকে অমূল্য রতনের মতো অনেক কিছু জানার ও শিখার আছে। হাজারো লাখো তরনদের জন্য বাফেটের জীবনের আদর্শ একটি অনুপ্রেরণার জোগান হতে পারে। এরকম আদর্শে আদর্শিত হয়ে গড়তে পারে নিজেদের ও গল্প।
তথ্যঃ গুগল।