মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় বাঙ্গালী খাবারের চমক দেখালেন যিনি
- ফারজানা আক্তার
- জুলাই ১৩, ২০২১
ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছেন কিশোয়ার চৌধুরী। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন এই নারী।
কে এই কিশোয়ার চৌধুরী ?
কিশোয়ার চৌধুরী একজন বিজনেস ডেভেলপার, পারিবারিক প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা অস্ট্রেলিয়ায়। তার বাবার বাড়ি বিক্রমপুরে আর মা কলকাতার বর্ধমানের। তাঁরা দুজনে প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। বিদেশে বসবাস করলেও নিজের দেশের ভাষা, সংস্কৃতি চর্চা সবকিছুই বজায় রেখেছেন কিশোয়ারের বাবা-মা, আর সেটা তারা নিজের সন্তানদেরও শিক্ষা দিয়েছেন।
তাদের পরিবারের নিজস্ব বাগানে শাকসবজি, মরিচ - লাউ সবকিছু উৎপাদন করা হয়। ছোটবেলা থেকে তার বাবা - মা তাদেরকে ঘরের সকল কাজে উৎসাহিত করতো। বাবা - মায়ের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে তারাও মহাউৎসাহে সেসব কাজ করতো।
আরো পড়ুন : মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পেতে যা জানা জরুরি
তার বাবা মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। ছোটবেলা তার বাবা যখন মাছ ধরতে যেতো তিনিও সাথে যেতেন। তাজা মাছ ধরে এনে কেটেকুটে রান্না করা উৎসবের মতো ছিলো। ঘরের ভিতরের পরিবেশ অন্যরকম ছিলো। সবসময় তাজা খাবার, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার এবং খাওয়ানোর চেষ্টা ছিলো তার বাবা - মায়ের।
ছোটবেলা থেকে তিনি তার মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতেন। তার মা'ও সন্তানদের ঘরের কাজে, রান্নার কাজে ট্রেনিং দিতেন। তার বোনদেরও দায়িত্ব পড়তো কখনো পাস্তা, কখনও নুডলস রান্নার। তাদের বাসায় যতধরণের খাবারই রান্না হতো না কেন এক বেলা বাঙালি খাবারের মেন্যু থাকতোই। বেশিরভাগ সময় সেটা ডিনারে হতো।
২০২০ সালে তার প্রথম মনে হয় তার বাবা - মা তাদেরকে যেভাবে নিজস্ব সংস্কৃতি, খাবার-দাবার তাদের মধ্যে ইনস্টল করেছেন, তিনি তার সন্তানদের মধ্যে সেভাবে ইনস্টল করতে পারবেন কিনা! সাথে তিনি আরো যুক্ত করেন এটা শুধু তার ভাবনা না। দেশের বাহিরে যেসব বাবা - মায়েরা থাকে সবারই এই চিন্তা রয়েছে। এই চিন্তা থেকে পরবর্তী সময়ে একটি বই লেখার পরিকল্পনাও আছে তার।
আরো পড়ুন : ভালোবাসার মানুষ কিছু আড়াল করছে কিনা কিভাবে বুঝবেন
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় এপ্লাই করেছেন তার ছেলের ইচ্ছেতে। তার ছেলে তাকে সবসময় এই ব্যাপারে উৎসাহ করেছে। তিনি তার ছেলেকে জুনিয়র মাস্টারশেফের জন্য চেষ্টা করতে বলেছিলেন। তার ছেলেও ভালো রান্না করে। কিন্তু তার ছেলে তাকে এপ্লাই করতে বলে। তখন তার মনে হলো ছেলে - মেয়ের কাছে ভালো এক্সামপাল সেট করার জন্য তিনি এপ্লাই করতে পারেন। চার বয়সী কন্যা সেরাফিনা ও বারো বছর বয়সী পুত্র মিকাইলের কথা চিন্তা করে তিনি এই প্রতিযোগিতার পথে হাঁটতে শুরু করেন। সাথে ছিলো পরিবার এবং জীবনসঙ্গী এহতেশাম নেওয়াজ।
লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা - মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকের নজর কাড়েন এই শেফ। নিজস্বতার আপন রংয়ে রাঙিয়ে
শীর্ষ তিনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
বিজয়ীর মুকুট তার মাথায় উঠুক। সেই শুভকামনা এবং দোয়া রইলো।