সাংবাদিকদের সাংঘাতিক বলা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি!
- ফারজানা আক্তার
- সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
জুনাইদ আল হাবিব! একজন তরুণ উদীয়মান সাংবাদিক। উপকূল নিয়ে ভাবেন, উপকূলের মানুষ, দ্বীপ-চরের বিপন্ন জীবন সব সময় নিজের লেখালেখি, সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। নিজের জন্মস্থানের নানান সমস্যা, মানুষের দুর্দশা মূলধারার গণমাধ্যমে তুলে এনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন।
অনেক কাজে সফলও হয়েছেন। এছাড়া নানান শ্রেণির মানুষের অধিকার নিয়েও সে যথেষ্ট সোচ্চার। তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, স্বপ্নসহ নানান বিষয়ে আজ তার সাথে কথা বলবো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার।
ওমেন্সকর্নার : কেমন আছেন ?
জুনাইদ : এইতো, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
ওমেন্সকর্নার : এই মুহূর্তে কী নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ?
জুনাইদ : ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার নিয়েই একটু ভাবা হচ্ছে। কীভাবে নিজেকে কাজের উপযোগী করে তোলা যায়, সেটার চেষ্টা করছি। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কিছু কোর্স করছি। আসলে আমার যে ক্যারিয়ার, এখানে প্রতিনিয়ত শিখতে হয় এবং সেটার প্রয়োগটা করতে হয়। সুযোগ পেলে ফিচার, কলাম লিখছি, মাঝে মধ্যে কনটেন্ট ক্রিয়েট করি।
ওমেন্সকর্নার : নিজ এলাকার নানান সমস্যা, মানুষের দুর্দশা নিয়ে আপনাকে কাজ করতে দেখা যায়। এই কাজ করতে গিয়ে কখনো কোন সমস্যার মোকাবেলা করেছেন ?
জুনাইদ : আসলে খারাপ কাজ করার চেয়ে ভালো কাজ করাটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন কেউ খারাপ কাজ করলে তাকে বাঁধা দেয় না কেউ, ভালো কাজ যে করে, তাকে কীভাবে টেনে ধরা যায়, সেই কাজটার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। তো কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে অনেক সমস্যার মুখোমুখিও আমাকে হতে হয়েছে। তবে, ইনশাআল্লাহ সেগুলো মোকাবেলা করার সেই মানসিকতাও আমাকে আল্লাহ দিয়েছেন। অনেক সমস্যা টপকে আজকের এইখানে।
আরো পড়ুন : সন্তান গুটিয়ে থাকে, মিশতে পারে না? করে তুলুন স্মার্ট ও চনমনে
ওমেন্সকর্নার : আমাদের আশেপাশে কিছু মানুষ আছে যারা এলাকার উন্নয়ন, মানুষের হক নষ্ট করে নিজের পকেট ভর্তি করে। আপনি তাদের বিপরীতে কাজ করছেন। তাদের কাছ থেকে কোন ধরণের হুমকি, ধামকি পেয়েছেন?
জুনাইদ : অনেকেই স্বার্থের বিপরীতে গেলে নানান ধরণের হুমকি ধামকি দেয়। যখন ছোট ছিলাম সাংবাদিকতায়, শুরুর দিকে, তখন প্রকাশ্যে অনেকে হুমকি দিলেও আমি একটা ঘাড়ত্যাড়া। তারাও পাত্তা পায়নি। আমি তাদের অপকর্ম বিভিন্নভাবে তুলে ধরছি। সম্প্রতি কয়েকটা অসঙ্গতি তুলে ধরার পর দূর থেকে অনেকেই দেখিয়ে নেবেন বলে হুমকি ধামকি দিয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে কেউ এখন সাহসটা দেখায় না। কারণ সবাই জানে আমার একটা ইমেজ আছে, আমি কী ধরণের কাজ করি।
ওমেন্সকর্নার : বর্তমানে সবাই সাংবাদিকদের সাংঘাতিক বলে কেন ? কেন এতো অধঃপতন ?
জুনাইদ : আসলে এটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি। মানুষ কী চায়, গণমাধ্যমের কী পরিবেশন করা উচিত, কী উচিত নয়, সেটা যদি গণমাধ্যম হাউজগুলো বুঝতো, তাহলে হয়তো মানুষের মুখ থেকে এসব শুনতে হতো না। এটা গণমাধ্যমের নৈতিক অধঃপতন বলা চলে। আর এখনতো গণমাধ্যমতো গণ মানুষের মাধ্যম, এটা প্রচার মাধ্যমে হয়ে গেছে। কেবলই ভিউয়ারসের পেছনে দৌঁড়াচ্ছি আমরা।
কিন্তু গণমাধ্যমের কাজ যে সমাজকে সুশিক্ষিত করা, সেটাও বোধহয় গণমাধ্যমের কর্তারা ভুলে যান। একজন পাঠক শিরোনামে দেখলেন কী, ভেতরে ক্লিক করে দেখেন শিরোনামের সাথে বিষয়ের মিল নেই। এই যে পাঠককে ঠকানো, ধোঁকা দেয়া, এ সবের কারণেই এত অধঃপতন। আর এসবে সবচেয়ে ভুক্তভোগী আমরা যারা উদীয়মান তারা। কারণ, আমাদের বেড়ে উঠতে হচ্ছে সাংবাদিকদের নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা শুনেই।
আরো পড়ুন : সফলতা ধরে রাখার উপায় কী ?
ওমেন্সকর্নার : আপনার মতে সাংবাদিকের সঠিক সৌন্দর্য কেমন হওয়া উচিত ?
জুনাইদ : অবশ্যই সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতার একটা সৌন্দর্য থাকার প্রয়োজন আছে। আর সেটা কিন্তু সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতায়ও আছে। আমি মনে করি, সাংবাদিকতার মূল যে নৈতিক কাঠামো, সেগুলো মানলেই সাংবাদিকের সঠিক সৌন্দর্যটা ফুটে উঠবে।
ওমেন্সকর্নার : একজন উদীয়মান সাংবাদিক হিসেবে আপনার সিনিয়র এবং জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
জুনাইদ : আসলে সিনিয়রদের দেখেই আমরা সাংবাদিকতায় আসি। আমি হয়তো যার শিষ্য হয়ে সাংবাদিকতায় আসলাম, তার কাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু অন্য যে সিনিয়ররা আছেন, যারা মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে। পাচাটা, দালালি করছে, সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর আমার যারা জুনিয়র আছে, তাদের উদ্দেশ্য আমি আমার গুরুর উপদেশটিই দেব।
তিনি সব সময় বলেন, নতুন করে সাংবাদিকতায় আসলে আমাদের গা গরম হয়ে যায়। আমরা মানুষকে মানুষও মনে করি না। মূল বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের ভাব নিয়ে চলা যাবে না। একদম মাটির মতো হতে হবে আমাদের। আর হ্যাঁ, অবশ্যই সাংবাদিকতায় ভালো করতে হলে শেখা, চর্চার কোন বিকল্প নেই। সম্ভব হলে সাংবাদিকতা বিষয়ক কিছু বই পড়া বা কোর্স করা যেতে পারে। তা ছাড়া বই পড়ার অভ্যেসটাও খুব জরুরি৷
আরো পড়ুন : পরাজয় যখন নিশ্চিত তখন কিভাবে লড়াই করবো ?
ওমেন্সকর্নার : একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়টিকে সব থেকে বেশি প্রতিবন্ধকতা মনে হয় ?
জুনাইদ : প্রতিবন্ধকতার ধরণতো মূলত এক সময় একেক রকম। কোন একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গেলে সেখানে একেক ধরণের প্রতিবন্ধকতা। আবার আরেক জায়গায় আরেক রকম। যে প্রতিবন্ধকতা বেশি মনে হয় আমার কাছে, সাংবাদিকদের যে নিরাপত্তার বিষয়টি। সাংবাদিকরা আইনি জটিলতায় একদিকে যেমন বিপর্যস্ত, অন্যদিকে প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষুও একটা বিষয়।
সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা মনে করি, মিডিয়া হাউজগুলোর দায়িত্বহীনতাকে। কারণ, অনেক পত্রিকা তাদের কর্মীদের ঠিকভাবে বেতনতো দেয়ই না, পাশাপাশি সাংবাদিকরা কোন বিপদে পড়লে লেজ গুটিয়ে বসে থাকে।
ওমেন্সকর্নার : যেহেতু ওমেন্সকর্নারে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। ওমেন্সদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলুন। আপনার দৃষ্টিতে আমাদের সমাজে নারীদের অগ্রগতি কতদূর ? নারীরা তাদের প্রাপ্ত সুযোগ - সুবিধা, সম্মান এবং মেধার যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছে ?
জুনাইদ : বড় আশার বাণী হচ্ছে, নারীরা বিভিন্ন স্থানে পুরুষদের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। যেটার একটা বড় উদাহরণ এই ওমেন্স কর্নার। নারী সাংবাদিকতার যেই একটা উন্নতি, সেটা ওমেন্স কর্নারে লক্ষ করেছি। আমার কাছে মনে হয়, নারীরা তাদের প্রাপ্ত সুযোগ, সুবিধা, সম্মান, মেধার মর্যাদাটা আগের তুলনায় বেশি পাচ্ছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো নারীদের বাঁকা চোখে দেখা হয়। আমি বলবো, যারা বাঁকা করে দেখেন, সেটা তাদের সমস্যা। একটি পজেটিভ সমাজ গড়ে তুলতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও স্বাবলম্বী হওয়াটা, এগিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন : বাচ্চারা মিথ্যা কথা বলা শুরু করলে যেভাবে বন্ধ করবেন
ওমেন্সকর্নার : পাল্টা আরেকটি প্রশ্ন। অতীতের তুলনায় বর্তমানে নারীরা যথেষ্ট সুযোগ - সুবিধা পাচ্ছে। তারা এই সুযোগের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছে?
জুনাইদ : ঠিকই বলেছেন। নারীরা আগের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। নারীরা আসলে সুযোগ সুবিধা পেয়ে কী করে? নারীরা সঠিক মূল্যায়নটা আগে যেমনটা করতে পারতেন না, সেটার চেয়ে পরিস্থিতি বদলেছে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়েও ভালো করছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নাই।
তবে নারীরা আরো ভালো করবে, যদি নারী অধিকার নিশ্চিত করা হয়। অন্যদিকে নারীদেরও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। একজন নারী যদি দশ টাকা আয় করতে পারেন, সেটা তিনি তার সন্তানের কল্যাণের জন্যই ব্যয় করবেন। এতে পরিবারেই শান্তি।