কেউ মানসিকভাবে দুর্বল নয়; পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করে।
- ফারজানা আক্তার
- সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১
সুমনা বাগচী! এক কথায় তার পরিচয় দেওয়া অসম্ভব। একাধারে তিনি একজন কাউন্সেলর, ডান্সার, শিক্ষক, লেখক এবং একজন অ্যাডোলেসেন্ট পুত্রের জননী। প্রচুর প্রাণশক্তিতে ভরপুর একজন নারী। আজকে সমসাময়িক নানান বিষয়সহ নারীদের অগ্রগতি নিয়ে তার সাথে কথা বলবো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার।
ওমেন্সকর্নার : করোনাকালীন কঠিন সময়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় কী ?
সুমনা বাগচী : প্রায় দু বছর হতে চললো আমরা করোনার কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছি। প্রথম বছর আমরা অনেক বেশি মোটিভেটেড ছিলাম অনেক বাহ্যিক একটিভিটির মাধ্যমে নিজেদের ভালো রাখতে। বিশেষ করে শিশু, বয়ঃসন্ধি কালের ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া অনলাইন পড়াশোনা ও ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে করতে কোথাও মানসিক ক্লান্তি আসে।
কিন্তু একটা কথা সত্যি যে পরিস্থিতির কাছে আমরা হার না মানলেও সব কিছু নিজের মনের মত হবে এটা সত্যি না। তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে কিছুটা মানিয়ে নিতে হবে কারন বিশ্বাস রাখতে হবে ঠিক একশো বছর আগেও আরো কঠিন পরিস্থিতি এসেছিল কিন্তু আমরা আবার নতুন ভাবে বাঁচতে শিখেছি। তাই চলার নাম জীবন।
ওমেন্সকর্নার : আপনি অনেকগুলো পেশার সাথে যুক্ত আছেন। কিভাবে সব ম্যানেজ করেন ?
সুমনা বাগচী: আমার প্রত্যেক টি পেশা আমার ভালোবাসা। আমার বাঁচার রসদ। আমি কোনো দিন এক ধরনের কাজে নিজেকে আটকে রাখতে স্বচ্ছন্দ নই। জীবন একটাই তাই প্রত্যেক মুহূর্তে প্রত্যেক অনুভূতিতে আর প্রত্যেক কাজের মধ্যে এক নতুন আমি কে খুঁজে পাই। অনেক কিছু জানার আছে খুঁজে পাওয়ার আছে আর অবশ্যই মানুষের কাছে পৌঁছাবার আছে।
আরো পড়ুন : জ্বর হলে করা যাবে না, এমন কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে জানুন
ওমেন্সকর্নার : একজন কাউন্সেলর হিসেবে আপনার কাছে কোন ধরণের রোগীরা বেশি আসে ?
সুমনা বাগচী: মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব থেকে কঠিন ব্যাধি। কিন্তু আমরা কেউ বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে চাই না।আমার কাছে অনেকেই আসেন যারা প্রত্যেকে কঠিন সমাজ কিংবা নিজেকে ফেস করতে পারেন না।
সেখানে সমাজ পরিবার ও মন এর শিকলে তারা আবদ্ধ হয়ে যান। আর সব থেকে বড় কথা,আমাদের কাছের মানুষ নেই কিংবা থেকেও নেই আর এমন মানুষ নেই যেখানে মনের কথা বলা যায়। আমাদের যন্ত্রণা কষ্ট সব কিছুই মনের আড়ালে রয়ে যায়। ছোটো শিশু , বয়ঃসন্ধি কালের ছেলে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক বৃদ্ধ কোনো বিশেষ কাজে নিযুক্ত অনেক মানুষ আছেন যারা আমার কাছে আসেন তাদের অস্থিরতা আমায় বলতে।
ওমেন্সকর্নার : নারীদের উন্নতি বেশিরভাগ পুরুষরা সহ্য করতে পারে না। এর কারণ কী ?
সুমনা বাগচী : পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ভ্রুকুটি থেকে আমরা আজও মুক্তি পাইনি। অস্থিরতা আমাদের ছাড়েনি। আমি নিজে একজন ছেলের মা হয়ে বলতে পারি, সন্তানকে সুস্থ শিক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সেখানে নারী পুরুষ হিসেবে না মানুষ হিসাবে প্রকাশ জরুরী। মানসিক ভেদাভেদ থেকে মুক্তি পেতে হবে আমাদের। ছোটো বড়ো আসল কথা নয়। কিংবা নারী পুরুষ ভেদাভেদ আমাদের কাম্য নয়। জেন্ডার সমতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
আরো পড়ুন : করোনার টিকা কারা নেবেন, কারা নেবেন না
ওমেন্সকর্নার : পুরো বিশ্বজুড়ে প্রতিহিংসা, মারামারি, ক্ষমতার অপব্যবহার এতো বেড়ে গেলো কেন ?
সুমনা বাগচী : কে এগোবে বা কে জিতবে সেটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। সেখানে মানবিকতার কোনো জায়গা নেই। রক্তাক্ত পৃথিবী আরো ক্ষত বিক্ষত হতে চলেছে। ভয় লাগে নব প্রজন্মের কথা ভেবে। আমাদের পরিণতি আরো ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। যদি এত শিক্ষিত আর সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত মানুষের যদি মান ও হুশ না থাকে তাহলে আমরা সব থেকে পিছিয়ে পড়া জাতির নজীর।
ওমেন্সকর্নার : ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাদের ক্ষেত্রে বেশি কাজ করে ?
সুমনা বাগচী : নিজেদের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তারাই এই সমস্যায় পড়েন। এর জন্য অবশ্যই পরিবেশ আর মানবিক শিক্ষা জরুরী। ছোটো থেকেই অন্যের ভালোতে নিজেদের সমস্যা এই ধরনের মানসিকতা থেকে একটা মানসিক প্রতিবন্ধকতা আসে। নিজে যদি মন দিয়ে চেষ্ঠা করা যায় আর অবশ্যই যদি তাতে উদ্দেশ্য আর সাধনা পজিটিভ হয় তাহলে কোনো বাধা আটকাতে পারে না। শুধু চেষ্টা করতে হবে মন প্রাণ দিয়ে।
আরো পড়ুন : অতিরিক্ত ওজন কমাবে মাশরুম
ওমেন্সকর্নার : যারা সিঙ্গেল মাদার তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী ?
সুমনা বাগচী : বর্তমান সমাজে একজন নারী তার সন্তানকে নিজের মতো করে বড়ো করেন আর সমাজ তাকে আখ্যা দেয় সিঙ্গেল মাদার।সমাজ এই ধরনের স্বীকৃতি দিতে বেশ স্বচ্ছন্দ্য। কিন্তু একজন মায়ের স্ট্রাগল আর তিলে তিলে সন্তান কে বড়ো করার আছড়ে পড়া ঢেউ কেউ দেখতে পায় না।
আমি মনে করি মায়েদের শক্তি অনেক বেশি বিশেষ করে মনন শক্তি। স্বামী থাকুন কিংবা না থাকুন এখন মা কে সব থেকে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই সমাজ কি বললো তাতে যায় আসার দরকার নেই। মন যা বলে করুন। কারণ দিনের শেষে আপনি নিজের কাছে উত্তর দিতে বাধ্য আর অন্য কারুর কাছে না।
ওমেন্সকর্নার : নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া কতটা জরুরি ?
সুমনা বাগচী : অবশ্যই জরুরী। নিজেদের জন্য স্বাবলম্বী হতে হবে। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে,জীবন একটাই তাই নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে হবে। যত বেশি অন্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করবেন ততো বেশি সমস্যা বাড়ে। করুন এক্সপেক্টেশন শব্দ টি যন্ত্রণা দেয়। আগে নিজে ভালো করে বাঁচুন, স্বাবলম্বী হোক এর মত আনন্দের আর কিছু নেই।
ওমেন্সকর্নার : মানসিকভাবে দুর্বল নারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী ?
সুমনা বাগচী : আমরা কেউ মানসিক ভাবে দুর্বল নই। আমরা যথেষ্ঠ শক্ত। কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের দুর্বল করে,ভেঙে দেবার চেষ্টা করে কাঁচের মত। মনে রাখবেন জীবন একটাই আর আপনি সুযোগ পেয়েছেন এই জীবন উপভোগ করতে। তাই ভালো করে বাঁচুন, সুন্দর করে বাঁচুন। নিজের পছন্দের কাজ করুন। নিজেকে বিশ্বাস করতে শিখুন। নিজেকে যেদিন থেকে বিশ্বাস করতে পারবেন জীবন আপনাকে ভালোবাসতে শেখাবে। নারী তুমি অবলা নয়। তুমি শক্তিমান।
আরো পড়ুন : ওজন কমাতে সাহায্য করে শসা