" আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে নারীদের অবদান কিন্তু কম নয়! "
- ফারজানা আক্তার
- সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
তাসলিমা আক্তার! একজন বইপড়ুয়া এবং প্রবাসী। তাসলিমা নিয়মিত বই পড়েন এবং রিভিউ লিখেন। বর্তমানে স্বামীসহ কোরিয়াতে অবস্থান করছেন। কেমন কাটছে ভিনদেশে তাসলিমার জীবন, কিভাবে এডজাস্ট করছেন সেসব বিস্তারিত আজ জানবো তার কাছ থেকে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার।
ওমেন্সকর্নার : প্রবাসে জীবন কেমন কাটছে?
তাসলিমা আক্তার : হোমসিকনেসের চিনচিন বুকের ব্যথা ছাড়া বাকি সব মিলিয়ে ভালো।
ওমেন্সকর্নার : কোরিয়ার আবহাওয়া কেমন?
তাসলিমা আক্তার: দক্ষিন কোরিয়া একটি শীত প্রধান দেশ। বলতে গেলে প্রায় আট মাস শীত থাকে এখানে। আমি এপ্রিলে কোরিয়াতে এসেছি। তখনো শীত ছিল আমাদের দেশের সর্বোচ্চ ঠান্ডার চেয়েও বেশি ঠান্ডা মনে হতো তখন। তবে মজার ব্যাপার হলো সেটা শীতকাল ছিল না। ছিল কোরিয়ার বসন্তকালের শুরু। আমি আসার পরের সপ্তাহেই কোরিয়াকে চেরী ব্লসম হয়েছিল।
আমার কাছে এই দৃশ্যটা ছিল কোরিয়ান প্রকৃতি থেকে পাওয়া ওয়েলকাম উপহারের মতো। কোরিয়া চার ঋতুর দেশ। এখানে বর্ষা আর হেমন্তকাল নেই। তবে বৃষ্টি হয় প্রচুর। এখানে শরৎ শুভ্রতা নিয়ে আসে না। লাল হলুদে রাঙিয়ে। এছাড়া এখানকার আবহাওয়ার বিরক্তিকর কিছু দিকও আছে। শীত যাওয়া এবং আসার শুরুতে প্রচুর বাতাস হয়। মিসে মঞ্জি (গুঁড়ো ময়লা) নামে এক প্রকার ময়লা থাকে তখন বাতাসে যার কারণে চোখ জ্বালা করে।
আরো পড়ুন : যে ৫টি চেকআপ করাবেন চল্লিশ পার হওয়া নারীরা!
ওমেন্সকর্নার : ভিনদেশে নতুন আবহাওয়া, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজনদের সাথে মানিয়ে নিতে কেমন লাগছে ?
তাসলিমা আক্তার: আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে হয়তো একটু সময় লাগবে। পরিবেশ এবং মানুষজনের সাথে মানিয়ে নিতে কোন সমস্যা হয়নি।
ওমেন্সকর্নার : কোন কাজের সাথে যুক্ত হয়েছেন ? যদি কাজের সাথে যুক্ত হয়ে থাকেন সেই কাজ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলেন।
তাসলিমা আক্তার: হ্যাঁ! মাঝে মাঝে আমি পার্ট টাইম কাজ করেছি। প্রথমদিকে ফুলের নার্সারিতে কয়েকদিন কাজ করেছি। খুবই হালকা কাজ আর ফুলের সাথে থাকতে ভালো লাগতো। এই কাজটা পরে কৃষি পর্যায়ের কাজ। এছাড়া একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছি দুমাস মতো। সেটাও ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। সেখানে কয়েকটা দেশের মেয়েদের সাথে পরিচিতি হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে তাদের কালচার, জীবন, বিয়ে নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে কথা হয়েছে।
এখানকার কাজের পরিবেশ খুবই পছন্দ হয়েছে। যে ব্যপারটা নিয়ে আমাদের দেশে সংশয় থাকে তা হলো মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে। এখানকার পরিবেশে কোন মেয়েকে কখনো নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয় না। মেয়েরা এখানে যেকোন জায়গায় নিরাপদ। আপাতত কোন কাজ করছি না। ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিরতি নিয়েছিলাম। তারপর ভাষার ক্লাসে ভর্তি হবো।
আরো পড়ুন : স্তন ক্যান্সার কেন হয়? কাদের বেশি হয় এবং অপারেশন সম্পর্কে জানুন!
ওমেন্সকর্নার : বাংলাদেশের কোন বিষয়টা সবথেকে বেশি মিস করেন ?
তাসলিমা আক্তার: উম্মমম, অনেক কিছুই। বাইরে বের হলেই টং দোকানের চা, ভাজাপোড়া মিস করি। এখানে কোন টক জাতীয় ফল পাই না। সেটা মিস করি। ছোট মাছ অথবা মাছ। এখানে মাছ পাই তবে সেই স্বাদ পাই না। আমি কি শুধুই খাবারের কথা বলছি? ইয়ে মানে আমি আসলে একটু পেটুক আছি তো। এছাড়া বাংলাদেশের বৃষ্টি, বৈশাখী ঝড় মিস করি। নীলক্ষেতে বই কিনতে যাওয়াটাকেও খুব মিস করি।
ওমেন্সকর্নার : বাংলাদেশে কবে ফেরার ইচ্ছে আছে?
তাসলিমা আক্তার: খুব তাড়াতাড়ি ফেরা হচ্ছে না। তবে ফিরবো। এখানে একটা দীর্ঘ সময় থাকার প্ল্যান আপাতত।
ওমেন্সকর্নার : কোরিয়ার কোন দিকটা আপনার চোখে সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় ?
তাসলিমা আক্তার: আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং জনগণের আইন মান্য করার মানসিকতা।
ওমেন্সকর্নার : বাংলাদেশের সাথে কোরিয়ার কয়েকটি বিশেষ পার্থ্যক বলেন।
তাসলিমা আক্তার: আবহাওয়াগত পার্থক্য আছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বে উন্নত দেশের একটি। আমাদের বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। একটা উন্নত দেশের সাথে একটা উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের যা পার্থক্য আছে সেসব পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ একটা জনবহুল দেশ। দক্ষিন কোরিয়ায় জনসংখ্যার হার নিম্নমুখী। গ্রামগুলো কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মাঝে মাঝে ট্রেনের প্লার্টফর্ম গুলো কেমন ভূতুড়ে ভূতুড়ে ফাঁকা লাগে।
আরো পড়ুন : কিছু লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনি হরমোনাল সমস্যায় ভুগছেন কিনা!
ওমেন্সকর্নার : আপনার দৃষ্টিতে অতীতের তুলনায় নারীরা মানসিকভাবে নিজেদের কতটা উন্নতি করতে পেরেছে ?
তাসলিমা আক্তার: এই প্রশ্নটা আমার কাছে কনফিউজিং। এই প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে আছে যে নারীরা পূর্বে মানসিকভাবে অনুন্নত ছিলেন। অথচ আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে নারীদের অবদান কিন্তু কম নয়। হ্যাঁ! তবে এটা বলা যায় সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। এখন মেয়েরা পড়াশোনা করছে বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে পারছে, পছন্দমতো পেশা বেছে নিতে পারছে।
ওমেন্সকর্নার : অতীতের তুলনায় নারীরা বর্তমানে অনেক সুযোগ - সুবিধা পাচ্ছে। সেই তুলনায় নিজেদের কতটা উন্নতি করতে পেরেছে ?
তাসলিমা আক্তার: এখানে নারীদের সুযোগ সুবিধা বলতে কি বুঝানো হয়েছে জানি না। যদি পড়াশোনা, চাকরী বাকরী করাকে সুযোগ সুবিধা বোঝানো হয় তবে বলবো, পড়াশোনা, পছন্দমতো পেশা বেছে নেয়াটা তো তার অধিকার। যেহেতু অতীতের তুলনায় এখনকার নারীরা এসব অধিকার ভোগ করতে পারছেন। সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই উন্নতি হয়েছে। সব সেক্টরেই এখন নারীরা প্রতিষ্ঠিত। নিজেরা নিজেদের পরিবার ও সন্তানেদের জন্য কন্ট্রিবিউশন করতে পারছেন। নিজেদের প্যাশন লালন করতে পারছেন।
ওমেন্সকর্নার : নারীবাদী শব্দটা আমাদের দেশে এতো বিষাক্ত হয়ে উঠেছে কেন ?
তাসলিমা আক্তার: নারীবাদ বা নারীবাদী শব্দগুলো আমাদের দেশে বেশিরভাগই ভুলভাবে চর্চিত হয়ে থাকে। নারীবাদ আসলে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের ধারণা। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির ধারনা থেকেই নারীবাদের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কতিপয় উগ্র ধারনা আর বৈশিষ্ট দিয়ে নারীবাদ ব্যাখ্যা করা হয়।
যে কারণে নারীবাদ বা নারীবাদী বলতেই বেশিরভাগ লোকে রে রে রে করে উঠে। আবার অনেকে বোঝেও এর অপব্যাখ্যা করে থাকেন। তার কারণ হলো কর্তৃত্ব হারানোর ভয়। অথবা ভঙ্গুর ইগো সমস্যার কারণে। এছাড়া শব্দটি বিষাক্ত করে তোলার পেছনে কিছু নারীদেরও অবদান রয়েছে যারা উগ্রতা ছড়িয়ে দিয়ে বিষয়টাকে জটিল করে তুলেছে। তবে আমি আশাবাদী। একদিন আমাদের নারীরাও সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে।
আরো পড়ুন : হট ফ্ল্যাস- মহিলাদের জটিল সমস্যা