কিউবার রাজধানী, সেই পুরোনো হাভানার সাদৃশ্য পাবেন পানামনগরীতে !
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- অক্টোবর ২১, ২০১৭
নগর জীবনের নান ব্যস্ততার মধ্যে আমরা অনেক সময় খুব বিষিয়ে উঠি। ইচ্ছে করে নগরের বাহির থেকে ঘুরে আসতে। কিন্ত অনেক সময় ঢাকার বাহিরে যাবার মতো সময় আমাদের হয় না। ঢাকার আশেপাশে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যা আপনাকে করে দিবে একদম ফ্রেশ। এক্সট্রা ছুটি কিংবা খরচের কোনো চিন্তায় নেই।
তেমনি একটি জায়গা পানাম সিটি যা অনেকের কাছে সোনারগাঁ নামে পরিচিত। হাজারো সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য বহন করা এই পানাম সিটি বা সোনারগাঁ রয়েছে রাজধানীর একদম পাশেই।
পানামনগরীতে কি দেখবেন :
পুরনো সব বাড়ি দেখেই দিন কেটে যাবে আপনার। আপনার চোখের সামনে চলে আসবে পঞ্চদশ শতকের এক হারানো রাজ্য, চারশো বছরের পুরোনো এই পানামনগরী। সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই পানামনগর। একসময় তাঁত ব্যবসায়ীদের আবাসস্থল এবং বাংলার মসলিন ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই নগর।
২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা এই নগর তৎকালীন অন্য সব নগরী থেকে বেশি আকর্ষণীয় ছিলো। শুধু দালানকোঠায় না, রয়েছে মসজিদ, মন্দির, কূপ, সরাইখানা, পঞ্চপীরের মাজারসহ আরো আকর্ষণীয় অনেক কিছুই। বিকেলে আলোতে পুরানো দালানকোঠা তাদের রূপ ছড়িয়ে দেয়।
পানামনগরীর পুরোটাই খাল বেষ্টিত যার নাম পঙ্খীরাজ খাল। এই খাল পূর্ব দিকের মেনিখালি নদ হয়ে মেঘনা নদীতে এসে মিশেছে। এই নগরীর পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা। এই পথ ধরেই বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড় আর দেশ থেকে যেত মসলিন।
এই নগরীকে চিরে দুই ভাগ করা হয়েছে যার পাঁচ মিটার প্রশস্ত ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দুই পাশে একতলা, দোতলা ও তিনতলা মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৫২টি ভবন। সড়কের উত্তর পাশে আছে ৩১টি ভবন এবং দক্ষিণ পাশে আছে ২১টি ভবন।
ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপরে উঠার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভবনে ঢুকেই হাতের ডান দিকের বিল্ডিংটা ভিআইপি আর বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এই অভিনব ব্যবস্থা করা হয়েছে। উঁচু উঁচু সিঁড়ি পার হয়ে দোতলায় একটা বিশাল হলরুম রয়েছে। চারিদিকের দেয়ালে রয়েছে রঙিন কারুকার্য। প্রতিটা পিলার তো বটেই, সিলিংয়েও। এককালে এখানেই নাচের আসর বসতো।
পৃথিবীর প্রায় ধ্বংস হতে যাওয়া ১০০ টি ঐতিহাসিক শহরের একটি পানামনগর। ২০০৬ সালে World Monument Fund পানামনগরকে প্রায় ধ্বংস হতে থাকা ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। ঈসা খাঁ-র আমলে বাংলার রাজধানী ছিলো পানামনগর। নদীর ওপারে রয়েছে বিশাল মাঠ। চাইলে সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন :
ঢাকার গুলিস্তান থেকে অনেক বাস যায়। এখান থেকে দোয়েল, বোরাক আর স্বদেশের বাস ছাড়ে। ভাড়া বাসভেদে ২৫-৪৫ টাকা পড়বে । সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। সেখান থেকে রিকশায় ১৫-২০ টাকা ভাড়া ।
বাংলাদেশিদের জন্য টিকেট ৩০ টাকা, বিদেশিদের ক্ষেত্রে তা ১০০ টাকা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
পুরনো ভবনগুলোর বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ নির্দেশনা সংবলিত ভবনগুলোর ভেতরে প্রবেশ করবেন না। আর মনে রাখবেন এসব স্থান আমাদের জাতীয় সম্পদ। কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি বা ময়লা-আবর্জনা ফেলে নোংরা করবেন না।
কিউবার রাজধানী, সেই পুরোনো হাভানার সাদৃশ্য পাবেন পানামনগরীতে। সুযোগ বুঝে পরিবার নিয়ে ঝটপট দেখে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহ্য পানামনগরী থেকে ।