
জলের বুকে বিশাল পদ্মমেলা !
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- নভেম্বর ২৬, ২০১৭
পদ্মফুলকে বলা হয় ‘জলের রানি’। বিস্তীর্ণ জলাভূমিজুড়ে যখন পদ্মফুল ফুটে থাকে সেই সৌন্দর্য নিশ্চয়ই অপার্থিব। এমনই এক অপূর্ব সুন্দর বিল রয়েছে আমাদের দেশে ।
অপূর্ব সুন্দর এই বিল দেখতে আপনাকে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জেলা গোপালগঞ্জে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া লাল-গোলাপি ও সাদা পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের পদ্মবিলের। দূর থেকে তাকালে মনে হবে বিলে কেউ যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে। এ যেন পদ্মমেলা !
গোপালগঞ্জের জলের রানি পদ্মফুলের বিল এখন পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত। প্রতিদিনই প্রকৃতির এই অপরূপ শোভা উপভোগ করতে আসছেন সৌন্দর্যপিপাসুরা। বর্ষাকালে বিল এলাকার মানুষের সাধারণত কোনো কাজ থাকে না। আর অখণ্ড এই অবসরে পদ্মফুল তুলে বাজারে বিক্রি ও নৌকায় করে দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে বাড়তি আয় হচ্ছে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষের।
গোপালগঞ্জ বিলবেষ্টিত জেলা। এর মধ্যে অন্যতম সদর উপজেলার বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে এ বিল অবস্থিত।
স্থানীয়রা জানান, আগে বিলে অল্প কিছু পদ্ম ফুটত। ১৯৮৮ সাল থেকে বর্ষাকালে বিলে প্রাকৃতিকভাবেই হাজারো রংবেরঙের পদ্ম ফুটতে থাকে। পরে আস্তে আস্তে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এই পদ্মবিলের কথা।
বলাকইড় গ্রামের পদ্মবিলের প্রায় পুরোটাতেই ফোটে অসংখ্য পদ্মফুল। আর আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার পরপরই বিলে আসেন পর্যটকরা। আর তাঁদের আনাগোনা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
বলাকইড় গ্রামের পদ্মবিলের চারদিকে লতা-গুল্ম, কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লাল-গোলাপি আর সাদা রঙের পদ্ম দেখলে চোখ জুড়ায়। স্নিগ্ধতার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি। পদ্ম দেখার জন্য প্রতিদিনই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন অনেকে। বিভিন্ন শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেই আসছে মানুষ। নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন তাঁরা।
ভ্রমণপিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন স্থানীয়রাও। পদ্মফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্মফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন অনেকে। বিল এলাকায় দাম কম থাকলেও শহরে প্রতিটি ফুল ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা। এ ছাড়া এ বিলের পদ্মফুল দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা।
ঢাকা থেকে যাবেন যেভাবে :
রাজধানীর গুলিস্তান, সায়েদাবাদ বা গাবতলী থেকে গোপালগঞ্জে যাওয়ার রাতের বাসে উঠে পড়ুন। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জের উদ্দেশে বাস ছাড়ে। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, এমাদ পরিবহন, দোলা, বিআরটিসি মধুমতি এক্সপ্রেস পরিবহনসহ অনেক বাস আছে। আরো আছে কমফোর্ট লাইন, সেবা, গ্রীনলাইন, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসও। এসব বাস পাটুরিয়া দিয়ে যায়। ভাড়া ৩০০ টাকা আর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের ভাড়া ৪০০ টাকা।
পাটুরিয়া দিয়ে আসলে বাসগুলো কাকডাকা ভোরে নামিয়ে দেবে গোপালগঞ্জ শহরতলির পুলিশ লাইনস মোড়ে। সেখান থেকে ইজিবাইক বা মাহেন্দ্র ভাড়া করে সদর উপজেলার বলাকইড় গ্রামের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। ভাড়া নেবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট।
এ ছাড়া পুলিশ লাইনস মোড় থেকে ইজিবাইকে করে গোপালগঞ্জ কাঁচাবাজার এলাকায় যাওয়া যায়। ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫ টাকা। এরপর সেখান থেকে বলাকইড়ের মাহেন্দ্র স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি দক্ষিণপাড়ার পীরু সরদারের বাড়ির কাছের সেতু। এই সেতুর নিচ থেকে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়।
নৌকা ভাড়া :
দক্ষিণপাড়ার পীরু সরদারের বাড়ির কাছের সেতুর নিচ থেকে নৌকা ভাড়া করার পরে মাঝি প্রায় এক ঘণ্টায় দর্শনার্থীদের পুরো বিল ঘুরিয়ে দেখান। ভাড়া নেন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। নৌকাগুলো বেশ বড়ই। একসঙ্গে ১০-২০ জন বসা যায় ওই নৌকায়।
নৌকার মাঝিরা জানালেন, সাধারণত শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বেশি থাকে। আর এ জন্য অনেক সময় নৌকার সংকট দেখা দেয়। এ জন্য আগে থেকে যোগাযোগ করে রাখা ভালো। নৌকা ভাড়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় মাঝি মিন্টু (০১৯৩৫৫৬৮১১৮), পলাশ (০১৭৪১১৯৭৯৬৫), আল আমিন (০১৭৮৪৭০৫০৭২) কিংবা ইকবালের (০১৭২২৭২৯৯০৩) যোগাযোগ করে নৌকা ভাড়া নিশ্চিত করে রাখা যায়।
পদ্মবিল দেখে রাতের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে চাইলে বিকেল ৫টায় ফিরতি বাসে উঠে পড়ুন। সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। গোপালগঞ্জ শহরের পুলিশ লাইনস মোড় ও সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনেই বিভিন্ন বাসের কাউন্টার। সেখান থেকে বাসে উঠে রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঢাকায় ফেরা যায়।
কী খাবেন :
খাওয়াদাওয়া পর্বটা গোপালগঞ্জ শহরে সারলেই ভালো। শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে বেশকিছু ভালো হোটেল আছে। এখানকার হোটেল ‘বার বি কিউ’, ‘সিসিয়ান চায়নিজ রেস্টুরেন্ট’, ‘শম্পা হোটেল’, ‘শেখ স্ন্যাক্স’ ও ‘ঐশী রেস্টুরেন্টে’ নাশতা ও দুপুরের খাবার খেতে পারেন। দেশীয় খাবার ও বিলের তাজা মাছ খেতে চাইলে যেতে পারেন শহরের পোস্ট অফিসের মোড়ে। সেখানে তিন-চারটি হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ‘বড়দার হোটেল’ ও ‘হোটেল রোমান্স’ প্রসিদ্ধ।
হাতে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন গোপালগঞ্জ শহরতলির বেদগ্রামের হোটেলগুলোয়। যেখানে ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে সুস্বাদু হাঁসের মাংস চেখে দুপুরের খাওয়া পর্বটি সেরে নিতে পারেন।
থাকবেন কোথায় :
কেউ যদি বিকেলে না ফিরে গোপালগঞ্জে থাকতে চান তবে ফিরে আসতে হবে শহরেই। কারণ বলাকইড় গ্রামে এখনো থাকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শহরে এসে হোটেলে উঠতে পারেন। মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ড থেকে নামলেই আছে পলাশ গেস্ট হাউস, জিমি হোটেল, হোটেল রাজ, হোটেল সোহাগ, হোটেল রিফাত প্রভৃতি। এগুলোতে এসি ও নন এসি রুম পাবেন। এসি রুমে ভাড়া পড়বে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। নন এসি রুমের ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
তথ্য এবং ছবি : গুগল