বারাণসী সম্পর্কে বিস্তারিত!
- ইয়াসিন প্রধান সাজিদ
- এপ্রিল ১, ২০২১
বারাণসী হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী জেলার একটি শহর। শহরটি স্থানীয়ভাবে বেনারস নামে তাছাড়া বাইরের দেশগুলোতেও বেনারস নামেই পরিচিত এবং স্থানীয় বাঙালিদের কাছে কাশী নামে অধিক পরিচিত। বেনারস শহরটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরের থেকে এই শহরের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। হিন্দুধর্ম ও জৈনধর্মের সাতটি পবিত্রতম শহরের একটি বারাণসী। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বারাণসীতে মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করেন।
বারাণসী হলো সকল প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম একটি শহর। কাশীর মহারাজা হলেন বারাণসীর প্রধান সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক। বারাণসীর সব ধর্মীয় উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বারাণসীর রাজা। গঙ্গানদীর সঙ্গে বারাণসীর সংস্কৃতির বিশেষ যোগ আছে। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বারাণসী ঘরানার উৎপত্তি এই বারাণসী শহরে। এই শহরে অনেক বিশিষ্ট ভারতীয় দার্শনিক, কবি, লেখক ও সংগীতজ্ঞ বাস করেছেন। বারাণসীর কাছে সারনাথের গৌতন বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ বাড়তি ওজন দ্রুত কমাতে রাতের খাবার যেমন হওয়া জরুরী
বারাণসীকে ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী বলা হয়।বিখ্যাত তুলসীদাসের রামচরিতমানস সহ একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থ এই শহরে রচিত হয়েছিল। বারাণসীর সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরটিকে অনেক আগে থেকেই তার স্মরণে "তুলসীমানস মন্দির" বলা হয়। বারাণসীকে একাধারে "মন্দিরনগরী", "ভারতের পবিত্র নগরী", "ভারতের ধর্মীয় রাজধানী", "আলোকনগরী", "শিক্ষানগরী" ও "বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত নগরী"-ও বলা হয়। বারাণসীর ‘প্রাচীন নগরী’ এলাকাটি গঙ্গাতীরবর্তী অংশে অবস্থিত। এই অঞ্চলে অনেক সরু গলি দেখা যায়। পথের দুপাশে দোকান ও অনেক হিন্দু মন্দিরও চোখে পড়ে। এই অঞ্চলটি বেশ জনবহুল।
অনেক পর্যটক পুরনো অঞ্চলটি দেখতেই বারাণসীতে আসেন। বারাণসীর উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাসস্থান গঙ্গার ঘাটগুলির থেকে বেশ দূরে। বারাণসী" নামটি ধারনা করা হয় দুটি নদীর নাম থেকে এসেছে তার এক হলো বরুণা ও অসি নদী।অন্যমতে, বারাণসী নামটি বরুণা নদীর নাম থেকেই এসেছে। কারণ, কেউ কেউ বলেন প্রাচীন কালে এই নদীকেই বারাণসী নদী বলা হত। তবে দ্বিমত থেকে এখনো পাকাপাকি কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনে বারাণসী একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠে। এই বারাণসী শহর মসলিন ও রেশমের বস্ত্র, সুগন্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের কাজ ও ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। গৌতম বুদ্ধের সময় বারাণসী ছিল কাশী রাজ্যের রাজধানী। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে জানা যায়, বারাণসীর মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ১,৪৩৫,১১৩। এর মধ্যে ৭৬১,০৬০ জন পুরুষ ও ৬৭৪,০৫৩ জন নারী।
আরো পড়ুনঃ আপনার প্রিয় সন্তানের উচ্চতা বাড়ানোর সহজ ৬টি কৌশল!
বারানসী শহরের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৫১% কাজ করে বস্ত্রশিল্পে, ১৫% কাজ করে ধাতুশিল্পে, ৬% কাজ করে মুদ্রণশিল্পে, ৫% কাজ করে বিদ্যুৎ যন্ত্রশিল্পে, বাকিরা অন্যান্য বিভিন্ন শিল্পে কাজ করে। শহরের জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে বাস্কেটবল, ক্রিকেট ও ফিল্ড হকি বারাণসীর জনপ্রিয় খেলা। সিগরার ড. সম্পূর্ণানন্দ স্টেডিয়াম হল শহরের প্রধান ক্রীড়াঙ্গন। এখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা আয়োজিত হয়।
স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয় কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। বারাণসীতে জিমনাস্টিক বেশ জনপ্রিয়। বারাণসী শহরের সাথে বিভিন্ন শহরের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে রেল, সড়ক ও আকাশপথে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত। প্রাচীন শহর, তীর্থ ও পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় বারাণসীর পরিবহন পরিকাঠামো বেশ ভালই বলা চলে।
তথ্যঃ গুগল