দার্জিলিং
- ইয়াসিন প্রধান সাজিদ
- এপ্রিল ৬, ২০২১
ভারতীয় স্থান হওয়া সত্ত্বেও আশেপাশের কয়েকটি দেশে বহুল পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান হলো দার্জিলিং। বলা চলে সকল মানুষের জীবনের ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্য একমাত্র স্বপ্ন প্রত্যাশিত স্থান দার্জিলিং। যেখানে গেলে মানুষ সৌন্দর্যের মধ্যে তার নিজেকে হারিয়ে ফেলে। দার্জিলিং হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি শহর ও পৌরসভা।
দার্জিলিং শহরটি চা শিল্প, বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য ও ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের জন্য খ্যাত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।শহরটি হিমালয়ের শিবালিক পর্বতশ্রেণিতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্রিটিশ ভারতের ঔপনিবেশিক প্রশাসন দার্জিলিংয়ের এলাকায় একটি স্যানেটোরিয়াম ও একটি সামরিক ডিপো স্থাপন করার পর এই শহরের নথিবদ্ধ ইতিহাসের সূচনা ঘটে।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
এরপর এই অঞ্চলে প্রচুর চা বাগান গড়ে ওঠে এবং চা উৎপাদকেরা কালো চায়ের সংকর উৎপাদন করতে শুরু করেন এবং নতুন ধরনের গাঁজন প্রক্রিয়ার উদ্ভাবনা করেন। এর ফলে যে বিশেষ দার্জিলিং চায়ের উদ্ভব ঘটে, তা আন্তার্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি লাভ করে এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় কালো চাগুলির মধ্যে অন্যতম আসন গ্রহণ করে।
দার্জিলিং শহরে ব্রিটিশ-ধাঁচের একাধিক পাবলিক স্কুল রয়েছে। ভারতের একাধিক এলাকা এবং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পাবলিক স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে আসে, আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকেও এই স্কুলে ছাত্র ছাত্রী আসে। লেপচা,খাম্পা, গোর্খা, নেওয়ার, শেরপা, ভুটিয়া, বাঙালি ও ভারতের অন্যান্য জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর সমাবেশ দার্জিলিঙের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে প্রতিফলিত হয়েছে। দার্জিলিংয়ের ইতিহাস সিক্কিম, নেপাল, ভুটান ও ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীন ভাবে জড়িত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্য্যন্ত সিক্কিম রাজ্য দ্বারা দার্জিলিং সংলগ্ন পাহাড়ী অঞ্চল এবং নেপাল রাজ্য দ্বারা শিলিগুড়ি সংলগ্ন তরাই সমতল অঞ্চল শাসিত হত।
আরো পড়ুনঃ মেয়েলি রোগ লিউকোরিয়ার (সাদাস্রাব ) কারণ ও প্রতিকার
১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত হয় ইঙ্গ-গুর্খা যুদ্ধ। ইঙ্গ-গুর্খা যুদ্ধের ফলে গুর্খারা পরাজিত হয়ে পরের বছর সগৌলি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির ফলে সিক্কিম রাজ্য থেকে অধিকৃত মেচী নদী থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল নেপালীরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়। দার্জিলিংয়ে অবস্থিত একটি দর্শনীয় স্থান হলে পদ্মজা। পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্কঃ এই চিড়িয়াখানায় রেড পান্ডা, স্নো লেপার্ড, তিব্বতীয় নেকড়ে সহ পূর্ব হিমালয়ের প্রচুর বিপদগ্রস্ত ও বিলুপ্ত পক্ষী ও প্রাণীদের দেখতে পাওয়া যায়। আরেকটি স্থান হলো ধীরধাম মন্দির- এটি কাঠমান্ডুর বিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দিরের অনুরূপ।
দার্জিলিংয়ে রয়েছে বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম- এই জাদুঘর গাছপালা ও পশুপাখিদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্দরে প্রবেশ করায়। তাছাড়াও আছে লাওডস্ বোটানিকাল গার্ডেন- এই উদ্যানে অর্কিড, রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়া, প্রিমুলা, ফার্ন সহ নানা জাতের হিমালয়ান উদ্ভিদ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ মর্নিং সিকনেস কাদের বেশী হয় ?
দার্জিলিংয়ের লেবং রেস কোর্সঃ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং সর্বোচ্চ রেস কোর্স। দার্জিলিংয়ের আরও আছে অবজারবেটরি হিল- ধীরধাম মন্দির এবং বৌদ্ধ সংরক্ষণালয় এই পর্যবক্ষেণ পাহাড়ের উপর অবস্থিত। তাছাড়াও দার্জিলিংয়ে দেখার মতো রয়েছে আরও অপরুপ সুন্দর সুন্দর অনেক স্থান। আর দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন স্থান দেখার জন্য সারা বছর ধরেই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। অন্যান্য দেশের সাথে দার্জিলিংয়ের যোগাযোগের জন্য আকাশপথে এখানকার কাছের এয়ারপোর্ট বাগডোগরা। শিলিগুড়ি থেকে নিয়মিত বাস সংযোগ ব্যবস্থা বর্তমান। তাছাড়াও নিউ জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি এখানকার নিকটস্থ রেল-স্টেশন।
তথ্যঃ গুগল