
`গুলিস্তান` কি প্রেক্ষাগৃহ নাকি স্থানের নাম?
- তন্ময় আলমগীর
- নভেম্বর ১৪, ২০১৮
একসময় গুলিস্থান ছিল ঢাকার মধ্যমনি। এখনো আছে, তবে অন্যভাবে। ঢাকার ব্যস্ততম স্থানের কথা ভাবলে প্রথমেই যেটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তা হলো গুলিস্থান। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিংয়ের তালিকায় গুলিস্তান নামের কোনো নথি নেই। আছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। পাকিস্তান আমলে ছিল জিন্নাহ অ্যাভিনিউ।
যেভাবে জায়গাটির নাম গুলিস্তান হলো : ইতিহাস বলছে, গুলিস্তান সিনেমা হলের নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয় গুলিস্তান। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রমনার ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের উত্তরে ঢাকা জেলা ক্রীড়া মিলনায়তন এবং পল্টন মাঠের পাশে ১৯৫৩ সালে গুলিস্তান নামের এই সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকায় দীর্ঘদিন যারা বসবাস করেছেন, তাদের সবার স্মৃতিতে গুলিস্তান সিনেমা হল আছে কোনো না কোনোভাবে। তাদের ভাষ্য, তখন তো পুরো এলাকাটাই ছিল ন্যাড়া। ঘরবাড়ি বলতে তেমন কিছু ছিল না। কিছু ক্লাবঘর, এসএ গ্রাউন্ড আর বাকিটা সবুজ। এই সবুজের পটে ওই একরত্তি সিনেমা হল। সেই সিনেমা হল নেই আর এখন সবুজ হয়ে গেছে একরত্তি।
চলচ্চিত্রবিষয়ক খ্যাতিমান সাংবাদিক অনুপম হায়াৎ লিখেছেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজল আহমেদ দোশানি ঢাকায় চলে আসেন এবং এই প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৫৩ সালে আগা খান এই হলের উদ্বোধন করেন। এটি ছিল ঢাকার প্রথম শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ। প্রথমে হলটির নাম ছিল লিবার্টি। পরে গুলিস্তান করা হয়। এখানে দেশি-বিদেশি সব সিনেমা দেখানো হতো। গুলিস্তান শব্দের অর্থ ফুলের বাগান। সিনেমা হল ছাড়াও মোগল আমলের একটি কামানের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত ছিল। ১৯৫৫ সালে গুলিস্তান হলের ওপর তলায় নাজ নামে আরেকটি সিনেমা হল চালু হয়।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে চলচ্চিত্র এবং শিল্প-সংস্কৃতির জন্য গুলিস্তান খুব বিখ্যাত ছিল। ছিল সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গুলিস্তানের মালিক পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পরিণত হয় এবং ১৯৭২ সালে তা দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে। ২০০৫ সালে তারা পুরোনো ভবনটি ভেঙে একটি নতুন শপিং কমপ্লেক্স স্থাপন করে। ১০ তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এখানে নতুন করে একটি সিনেমা হল হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না।