গ্রহ - নক্ষত্রের গ্রহণযোগ্য মতবাদ দিয়েছেন কেপলার
- কামরুন নাহার স্মৃতি
- মার্চ ৩১, ২০১৯
কোপারনিকাসের ভূ - ভ্রমণবাদে যে সমস্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আকৃষ্ট হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জোহন কেপলার অন্যতম। শোনা যায়, কোপারনিকাসের লেখা পুস্তকখানি পাঠ করার পর পৃথিবী, গ্রহ ও নক্ষত্র প্রভৃতির সমন্ধে তাঁর অনুসন্ধিৎসা জাগরিত হয়। তারপরেই আরম্ভ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা। তাঁর প্রথম গবেষণামূলক প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে। সেই থেকেই কেপলার বিশ্বের বিদ্বৎসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন বিজ্ঞানী হিসাবে।
১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ - পশ্চিম জার্মানির ওয়েল নামক একটি শহরে জোহন কেপলার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। তাছাড়াও ছেলেবেলায় তিনি ছিলেন বড় রোগা। তাই পিতা সাহস করে ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি। নিজেই দান করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু বালকের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। বায়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই আগ্রহ এবং অজানাকে জানার কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পায়। সে কৌতূহলকে চরিতার্থ করার ক্ষমতা পিতার ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই একটু বেশি বয়সে পুত্রকে প্রেরণ করলেন স্থানীয় এক অবৈতনিক বিদ্যালয়ে। কারও কারও মতে কেপলারের পিতার আর্থিক অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, বাল্যকালে কেপলারকে একটা সরাইখানায় কাজ নিতে হয়েছিল।
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কেপলার অতি অল্পদিনেই স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে ভর্তি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. ডিগ্রি গ্রহণ করে যোগদান করলেন গণিতের অধ্যাপক হিসেবে। সেই সময় তিনি টাইকোব্রাহের সংস্পর্শে আসেন এবং টাইকোব্রাহের সহকারীরূপে কিছুদিন কাজ করেন।
কেপলারের প্রিয় বিষয়গুলি ছিল গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা। অধ্যাপনার অবসরে তিনি মেতে উঠলেন গবেষণায়। কোপারনিকাসের নতুন চিন্তাধারার প্রতি দৃষ্টিপাত না করলেও কেপলারের মনে কেমন যেন একটা সন্দেহ ঘনীভূত হল। চিন্তান্বিত হয়ে উঠলেন তিনি। ভাবতে শুরু করলেন, সূর্য ও গ্রহ - নক্ষত্রাদির পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করা সম্ভব। অনেক চিন্তা করে শেষে কোপারনিকাসের মতকেই সমর্থন করলেন।
কেপলারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুস্তকের নাম "নিউ অ্যাসট্রোনমি" প্রকাশের পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন, সূর্যের চারদিকে গ্রহরা একটি উপবৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করছে। তাই গ্রহরা ঘুরতে ঘুরতে কখনও সূর্যের কাছে আসে আবার কখনও দূরে সরে যায়। কেপলারই প্রথম বিজ্ঞানী - যিনি গ্রহদের পরিভ্রমণ পথের অনেকটা সঠিক তথ্য প্রদান করেছিলেন। কেপলার ছিলেন চিররুগ্ন। তার উপর রাতদিন এত কাজে ব্যস্ত থাকতেন যে শরীরের দিকে একটিবারও দৃষ্টি দিতে পারতেন না। তাই অল্প সময়েই ভেঙ্গে পড়ল স্বাস্থ্য। মাত্র সাতান্ন কিংবা আটান্ন বছর বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।