বাংলা নাটক সৃষ্টির অজানা তথ্য জানুন একনজরে
- কামরুন নাহার স্মৃতি
- এপ্রিল ৩০, ২০১৯
ভারতবর্ষে প্রাচীনকালে সংস্কৃত নাটক অভিনয় হত৷ তারপর আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণের পর এদেশে গ্রীকদের উৎসাহে আবার নাটক অভিনয় শুরু হয়৷ ইউরোপীয় নাটকের প্রভাবে বাংলাদেশে নাটক অভিনয়ের ঝোঁক দেখা গেল৷ ক্রমে এদেশের সাহেবদের উদ্দ্যোগে কয়েকটি নাট্যশালা গড়ে উঠল। ঐসব নাট্যমঞ্চে ইংরেজি নাটক অভিনয় হত - দু'একটি সংস্কৃত নাটকের ইংরেজি অনুবাদও অভিনীত হয়৷
হেরামিস লেবেডেফ নামে একজন রুশ বণিক দু'টি ইংরেজি নাটকের বাংলা অনুবাদ একটি নাট্যমঞ্চে অভিনয় করান৷ এরপর দেশীয় ভদ্রলোকেরা নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত করে নাটক অভিনয় করাতে উৎসাহী হলেন৷ এইসব রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের জন্য বাংলা নাটক লেখা হতে লাগল৷ তারাচাঁদ সিকদারের 'ভদ্রার্জুন' পাশ্চাত্য রীতিতে লেখা প্রথম বাংলা নাটক। রামনারায়ণ তর্করত্নের লেখা 'কুলীনকুলসর্বস্ব' বাংলা ভাষায় প্রথম সামাজিক নাটক।
'বেণীসংহার', 'রত্নাবলী', 'মালতীমাধব', 'নবনাটক', 'যেমন কর্ম তেমন ফল, চক্ষুদান ' ইত্যাদি বহু নাটক তাঁরই লেখা৷ বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের 'রত্নাবলী' নাটকের ইংরেজি অনুবাদ অভিনীত হয়৷ মাইকেল মধুসূদন দত্ত সেই অনুবাদ কার্যে উৎসাহী ছিলেন। এরপর তিনি নিজেই বাংলা নাটক লেখার কাজে নেমে পড়লেন। তিনি তাঁর লেখা 'শর্মিষ্ঠা' নাটক ১৮৫৯ সালে পাইকপাড়ার রাজাদের বেলগাছিয়া নাট্যশালায় অভিনয় করালেন। তারপর লিখলেন 'পদ্মাবতী' নাটক। এই নাটকে তিনি প্রথম ইংরেজি মিলহীন blank verse রীতিতে 'অমিত্রাক্ষর ছন্দের ' ব্যবহার করেন৷ এরপর 'কৃষ্ণকুমারী' ও ' মায়াকানন' লেখেন।
'নীলদর্পণ' নাটক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সমসাময়িক নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের লেখা অতি বিখ্যাত বই৷ নীলকরদের অত্যাচার নিয়ে লেখা এই নাটক দেশে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শেষপর্যন্ত নীলকরদের অত্যাচার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গিরিশচন্দ্র ঘোষ নিজে অভিনয় শেখাতেন, রঙ্গমঞ্চ পরিচালক করতেন এবং নাটক লিখতেন৷ এই আমলের একজন প্রতিভাবান নট ও নাট্যকার ছিলেন 'রসরাজ' অমৃতলাল বসু। তাঁর লেখা অনেক নাটকের মধ্যে 'বিবাহবিভ্রাট', ' তরুবালা', 'বিল্বমঙ্গল' উল্লেখযোগ্য। গীতিকার ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় 'ডি,এল,রায়' নামেই বেশি পরিচিত। তিনি কয়েকটি প্রহসন রচনা করে বাংলা নাটকে নতুনত্ব এনেছিলেন৷ তাঁর রচিত নাটকগুলো বাঙালির মনে নতুন ভাবধারা ও স্বাদেশিকতা এনে দিয়েছিল।
টি/শা