উল্কাপিন্ড সম্পর্কে অজানা তথ্য জানুন একনজরে
- কামরুন নাহার স্মৃতি
- জুন ২০, ২০১৯
একটা দৃশ্য আকাশে অনেক সময়ই দেখা যায় যে, একটা জ্বলন্ত তারা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে আসতে নিভে গেল। চলতি কথায় একে বলে "তারা খসা"। কিন্তু এ তারকা হতে পারে না। কারণ, তারকা পৃথিবীর চেয়ে অনেক অনেক বড় জ্যোতিষ্ক৷ এগুলী বাইরে থেকে আসা ছোটখাট জিনিস, যা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢুকে জ্বলে উঠে। এগুলো শব্দের গতির চেয়ে ৩০ থেকে ৬০ গুণ বেশি জোরে বায়ুমন্ডলের মধ্যে দিয়ে ছোটে বলে জ্বলে উঠে। এদের বলে উল্কা। এরা আসলে হয়তো বায়েলার ধূমকেতুর মতো কোন ভাঙা ধূমকেতুর টুকরো। নয়তো সৃষ্টির প্রথম দিকে পৃথিবী যখন টগবগ করে ফুটত, তখন তা থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল এমন কোন জিনিস, কিংবা কোন গ্রহ-কণিকাও হতে পারে।
উল্কা খানিকটা পথ আসবার পর নিভে যায়। প্রায় সব উল্কাই পুরে ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিন লাখো লাখো উল্কা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢুকে এভাবেই ছাই হয়ে যায়, আমরা দেখতে পাইনা! সরষের মতো ছোট ছোট উল্কাও আছে। তবে যেগুলোর ওজন অন্তত পাঁচ কিলো হয়, তাদের সবটা পুরে ছাই হয়ে যায় না। আধপোড়া হয়ে তার খানিকটা পৃথিবীর গায়ে এসে পড়ে। তার আঘাতে মাটিতে গর্ত হয়ে যায় আর সেটা নিজেও আস্ত থাকেনা। তখন সেই টুকরো গুলোকে বলে উল্কাপিণ্ড। এরকম অনেক উল্কাপিণ্ড কলকাতার মিউজিয়ামে দেখা যাবে। তাদের এক একটার ওজন দু'মণেরও বেশি।
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকায় গ্রুটফনটীন নামক স্থানে সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড পাওয়া গেছে। এর ওজন প্রায় ৭০ টন। দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ উল্কাপিণ্ড গ্রীণল্যান্ডের কেপ ইয়র্কে পাওয়া গেছে। এটা নিউইয়র্কে রাখা হয়েছে। এর ওজন সাড়ে ৩৬ টন। সবসময় উল্কাপিণ্ড পাওয়া না গেলেও, সেটা মাটিতে যে গর্ত করে যায় তা থেকে যায়। আনুমানিক ৫০ হাজার বছর আগেকার এরকম একটা গর্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় আছে। তার নাম রাখা হয়েছে "শয়তানের খাদ"৷ সেটা প্রায় ৪০০০ ফুট চওড়া, আর ৬০০ ফুট গভীর। আসল উল্কাটা তাহলে নিশ্চয় মস্ত বড় ছিল। উল্কাপিণ্ডে লোহা, ধাতু, কপার থাকে। খুব বড় বড় উল্কাপিন্ডে লোহাই বেশি পাওয়া যায়। পারস্যের রাজা আত তিব্বতের দলাই লামার তলোয়ার নাকি এরকম লোহা থেকে তৈরি।
বেশির ভাগ দেখা গেছে বছরের মধ্যে কয়েকটা বিশেষ দিনে বেশি বেশি উল্কা দেখা যাবেই। সাধারণত, ২১এ এপ্রিল, ৯-১১ আগষ্ট, ১২-১৪ আগষ্ট এবং ২৭শে ও ২৯শে নভেম্বর। ঐ দিনগুলোতে পৃথিবী এক একটা ভাঙা ধূমকেতুর পথের কাছে আসে তখন সেটা ভাঙা টুকরো গুলো একের পর এক পৃথিবীতে এসে পড়ে।
কেএস/